ঝিনাইদাহে রোপা আমন চাষ নিয়ে চিন্তায় কৃষকেরা।

১৯

আল- মামুন, কালীগঞ্জ-ঝিনাইদহ।

ঝিনাইদাহ জেলায় শুরু হয়েছে রোপা আমন চাষের মৌসুম। অথচ বর্ষায়ও দেখা নেই প্রত্যাশিত বৃষ্টির। সময় দ্রুত চলে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষক সেচ দিয়ে চারা লাগানো শুরু করেছেন। এতে বাড়তি খরচ তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ফলে রোপা আমন চাষ নিয়ে রীতিমতো হতাশায় আছেন জেলার কয়েক হাজার কৃষক। বাড়ছে জমি পতিত থাকার শঙ্কা।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বাকিটা এ মাসের মধ্যে রোপন হয়ে যাবে। গত বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। চাষ হয়েছিল ২১ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৭৭ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন।

কৃষকদের দাবি, বাড়তি খরচের কারণে এ বছর পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি। অবশ্য কৃষি বিভাগের দাবি, সম্পূরক সেচ দিয়ে হলেও রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে। পাশাপাশি কৃষকের অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি সহনীয় করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে সাধারণত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে রোপা আমন চাষে নামেন চাষিরা।

কিন্তু চলতি মৌসুমে ঝিনাইদাহে বৃষ্টি হচ্ছে না বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমেছে। ফলে জমিতে বৃষ্টির পানি না জমায় রোপা আমন আবাদ ঠিকমতো শুরু করতে পারছেন না চাষিরা।

এরই মধ্যে ধান রোপণের সময় এক মাস অতিবাহিত হওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। কৃষকদের দাবি, এতে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পরিত্যক্ত থাকবে অনেক জমি।

ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এ বছর আমন চাষের অবস্থা খুব খারাপ। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। এক মাস আগে চাষ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ শুরু করেছি। এবার খরচ বাড়বে। প্রায় ইরি ধান চাষের মতো খরচ হবে। এ বছর লাভের আশা করতে পারছি না।’
মশিয়ার রহমান নামে অপর কৃষক বলেন, ‘আমরা আমন চাষ করি বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। এ বছর আকাশে কোনো বৃষ্টি নেই। ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ডিজেল লাগে, বিদ্যুৎ লাগে। তার দাম বাড়তি, সার-কীটনাশক, বীজ সবকিছুর দাম বাড়তি। এতে এ বছর সেচ দিয়ে আমন চাষ করে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
পাশের গ্রামের মাহাবুব আলম বলেন, ‘এ বছর আমন ধান করার জন্য জমিতে তিনবার চাষ দিয়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় কোনো কাজে লাগেনি। এখন নতুন করে চাষ দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছি। এতে খরচ বাড়ছে। তা ছাড়া শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা পাওয়া যায়, মজুরি অনেক বেশি। সেচের মূল্যও এবার বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক ক্ষতিতে আছি।’

সাতগাছিয়া গ্রামের তৌহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অনেকে জমি ছেড়ে দিয়েছেন। আমি পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চাষ করতাম। এবার দুই বিঘা করবো। তা ছাড়া বিলের মধ্যে কয়েকশ বিঘা জমি আছে। যেখানে সেচের ব্যবস্থা নেই। ফলে এ বছর অনেক জমি পতিত থাকবে বলে আশঙ্কা করছি।’ অনাবৃষ্টিসহ নানা কারণে প্রতি বছরই আমনে উৎপাদন খরচ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় খরচ কমাতে সেচ, সার ও বীজে ভর্তুকির দাবি কৃষকদের।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, ‘এখনো সময় হাতে আছে। শেষ আগস্ট পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। এ সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে আমন রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ধানের দাম ভালো পেয়েছে কৃষক। সামনে ভালো দাম পেলে বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে চাষাবাদেও ব্যয় বাড়ছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। সরকার কৃষকদের নিয়ে ভাবছে। তাদের খরচ সহনীয় করতে ভবিষ্যতে কৃষকদের ভর্তুকির আওতায় আনার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।’

 

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.