ভরা মৌসুমেও ইলিশ নেই নদ-নদীতে মাছ ধরতে গিয়েও খালি হাতে ফিরছেন সাধারণ জেলেরা।

মোঃহেমায়েত উদ্দিন, মুলাদী।

ভরা আষাঢ়েও নদ-নদীতে ইলিশ নেই। বাজারে কিছু সংখ্যক মাছ পাওয়া গেলেও দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এদিকে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পহেলা জুলাই থেকে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে জেলেরা নিয়মিত নদীতে গেলেও ফিরছেন খালি হাতে। ফলে নগরীর পোর্টরোডের ইলিশ আড়তে নেই চিরচেনা সেই হাঁকডাক। অলস সময় পার করছেন কর্মরত শ্রমিকরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদারের দাবী, নদীতে ডুবোচর জেগে উঠার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। আর ইলিশ গভীর পানির মাছ হওয়ায় হয়তো স্থান পরিবর্তন করছে। বিগত দিনের চেয়ে এবার বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে এটাই ছিল সাধারন জেলেদের প্রত্যাশা। শুক্রবার সকালে নগরীর পোর্টরোডে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের পাইকারি আড়তগুলোতে ইলিশ তেমন নেই। সামান্য যা আছে, সেগুলোর মধ্যে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২৩৮২ টাকায়। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৮০০ থেকে ১৮৫০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজিও ১৫০০ টাকার বেশি।
পোর্ট রোডের শ্রমিক সফিক জানান, বিগত দিনে এমন সময় ইলিশে আড়ত সয়লাব থাকতো। কাজের চাপে আমরা ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। অথচ এখন মাছ না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে। যে মাছ আসছে তা দিয়ে ভাত খাওয়ার খরচও ওঠে না।আরেক শ্রমিক ইকবাল বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমেও আড়তে কোনো মাছ নেই, তাই বসে বসে লুডু ও ক্যারাম খেলে সময় কাটাতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচরের জেলে নেতা আবদুল সালাম বলেন, আষাঢ় মাসে ইলিশের এতো আকাল আগে কখনো দেখিনি। তার দাবি, বাড়ির পাশে কালাবদর নদীতে এখন ডুবোচর জাগায় জেলেদের জাল ফেলার জায়গা নেই। অনেক জায়গায় চর জেগেছে।
পোর্ট রোডের ইলিশ আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশ’র ম্যানেজার রবিন বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা ঠিক আছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে প্রশাসন ম্যানেজ করে জাটকা ধরে বাজারে বিক্রি করে। ফলে ইলিশের সিজনে আড়তে মাছ নেই। ইলিশের ভরা মৌসুমেও ইলিশ না থাকায় প্রশাসনকেই দায়ী করেন তিনি।আড়তদার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সারা বছর দেখে আসছি আষাঢ় মাস এলেই ইলিশে সয়লাব হয়ে যেত পোর্টরোডের মোকাম। অথচ ইলিশের ভরা মৌসুমের এক সপ্তাহ পার হলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছি না। এদিকে আড়তে ইলিশ না থাকায় বরফ উৎপাদনও কমে গেছে বলে জানান বরফকল মালিকরা।
পোর্ট রোডের বরফ কল চিশতি এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিগত মৌসুমে এমন দিনে বরফ উৎপাদন করে শেষ করতে পারতাম না। এবার মাছ না থাকায় বরফ উৎপাদন বন্ধ। যে পরিমাণ মাছ আসছে তাতে বরফকল চালিয়ে পোষায় না।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ইলিশ সংকটের এ চিত্র এখন দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীতে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারেও। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। তাই স্থানীয় নদ-নদীই এখন ইলিশ পাওয়ার একমাত্র ভরসা। কিন্তু নদীতেও কাংক্ষিত ইলিশ মিলছে না। তবে পূর্ণিমার প্রভাব শেষ হলে বোঝা যাবে ইলিশের অবস্থা।
হিজলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, মেঘনা নদীর অনেক জায়গায় চর পড়ে পানির গভীরতা কমে গেছে। বিশেষ করে সাগর মোহনায় নদীর মুখ চর পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশ আসছে না। এছাড়া এর জন্য নদীদূষণও দায়ী।মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার বলেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নদী খনন জরুরি। তবে এটা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে কাজ করা হবে।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.