তোহফায়ে রামাদান: ( ১ম পর্ব )

৫৩

এম মিরাজ হোসাইন,জেলা প্রতিনিধি,ভোলা:
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।
(সুরা আল বাকারা: ১৮৩)

তাফসীর :
ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো রোযাও পর্যায়ক্রমে ফরয হয়। শুরুতে নবী করিম ( সঃ) মুসলমানদেরকে মাত্র প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ রোযা ফরয ছিল না। তারপর দ্বিতীয় হিজরীতে রমযান মাসের রোযার এই বিধান কুরআনে নাযিল হয়। তবে এতে এতটুকুন সুযোগ দেয়া হয়, রোযার কষ্ট বরদাশত করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যারা রোযা রাখবেন না তারা প্রত্যেক রোযার বদলে একজন মিসকিনকে আহার করাবে। পরে দ্বিতীয় বিধানটি নাযিল হয়। এতে পূর্ব প্রদত্ত সাধারণ সুযোগ বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু রোগী, মুসাফির, গর্ভবতী মহিলা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতা এবং রোযা রাখার ক্ষমতা নেই এমন সব বৃদ্ধদের জন্য এ সুযোগটি আগের মতোই বহাল রাখা হয়। পরে ওদের অক্ষমতা দূর হয়ে গেলে রমযানের যে ক’টি রোযা তাদের বাদ গেছে সে ক’টি পূরণ করে দেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়।

রমযান সম্পর্কে হাদীস শরীফে নবী করিম (সঃ) ইরশাদ করেন:
হযরত সালমান ফারসী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,শাবান মাসের শেষ দিন রাসূল ( সঃ ) আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন: ‘ হে লোক সকল! তোমাদের নিকট সমুপস্থিত একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস। এতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ মাসে আল্লাহ সাওম ফরয করেছেন এবং রাতে দীর্ঘ সালাত নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নেক কাজ করলো সে যেনো অন্য কোন মাসে ফরয কাজ করলো। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করলো সে যেনো অন্য কোনো মাসে সত্তরটি ফরয কাজ আদায় করলো। এ মাস ধৈর্যের মাস,ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাস সহানুভূতি প্রদর্শের মাস। ”

ব্যাখ্যা:
ধৈর্যের মাসের অর্থ হল,রোযার মাধ্যমে মু’মিনগণকে আল্লাহর পথ মজবুতভাবে আঁকড়ে ধারণ করা। স্বীয় প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রশিক্ষণ দেয়া। মানুষ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় হতে অপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যান্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার কারণে অন্তরে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রেরণা সৃষ্টি হয়। প্রয়োজন হলে নিজের আবেগ – উচ্ছাস, অনুভূতি, প্রবৃত্তি, ক্ষুধা তৃষ্ণার উপর সে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে এতে তারও একটা মহড়া হয়ে যায়। যুদ্ধের ময়দানের সৈনিকের সঙ্গে দুনিয়ার মুমিণের দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। সিপাহী যেমন দুশমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত থাকে, তেমনি মুমিনকেও শয়তানী প্রবৃত্তি ও আল্লাহদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে হামেশা যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে পারে।
“রোযার মাস সহানুভূতির মাস” এ কথার অর্থ হল: যে সমস্ত রোযাদারকে আল্লাহ তায়ালা প্রচুর খাদ্য সামগ্রী ও সচ্ছলতা দান করেছেন তাদের উচিত সমাজে দরিদ্র ও অনাহারক্লিষ্ট লোকজনকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতে শরীক করা। তাদের জন্য সেহরী ও ইফতারির ব্যবস্থা করা। এতে সে অনেক সওয়াবের অধিকারী হবেন।

চলনান থাকবে….

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.