পরকালে সফলতা পেতে রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

৩১

 

মোঃ শামসুর রেজা তুষার

ফজিলতপূর্ণ রমজানের দেখতে দেখতে চলে এসেছে।কল্যাণ ও বরকতের সময়টুকু আমরা বরকতময় করতে পারবো তো? রমজানে কল্যাণ হাসিলের চেষ্টা করতে হবে।আখেরাতের পুঁজি অর্জন করতে হবে।পরকালের সম্মান ও শান্তির নিবাস গড়ে তুলতে জীবন পরিচালনা করতে হবে ইসলামের পথে।

হযরত সাহল ইবনে সা’দ(রা:) থেকে বর্ণিত রাসুল(সা:) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান । কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে । অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? তখন তারা উঠে দাড়াবে । তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না ।(ফয়জুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৮১৮)

রোজাদারের মর্যাদা বিশাল।অনেক হাদীস রয়েছে এ ব্যাপারে। হযরত আবু হুরায়রা রা.হতে বর্ণিত,রাসূল(সা:) ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।(সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৮, ২০১৪; সহীহ মুসলিম ৭৬০(১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৬৮)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত,রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন-রোযা ও কুরআন উভয়টি কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।রোযা বলবে,হে রব! আমি তাকে খাদ্য এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি । (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।রাসুল(সা:) বলেন,অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে । (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ২০৮০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস : ১৯৯৪)

মাহে রমাযানে রোযাদারের জন্য করণীয়:

১-তারাবীহ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করা ।

২- বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা ।

৩-যাদের কুরআন তিলাওয়াত সহীহ নয়,তাদের জন্য কমপক্ষে ফরজ নামাযে যেটুকু আয়াত পড়া জরুরী সে পরিমাণ সুরা বা আয়াত সহীহ করা ফরজ ।

৪- মাহে রমাযানে গুরুত্বপূর্ণ একটি এবাদত হচ্ছে শেষ দশকে এতাকাফ করা ।

৫- পুরুষেরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতে আদায় করা ।

৬- নারীরা নিজ গৃহে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।

৭-তাহাজ্জুদ নামাজ যথা সময়ে প্রতিদিন পড়া ।

৮- নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত দিনে বা রাতে বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা ।

৯-তাসবীহ তাহলিল জিকির আজকার বেশি করে পাঠ করা ।

১০-তাওবা ইস্তেগফার বেশি করে করা ।

১১- শরীয়তসম্মত ওযরবশত পানাহার করতে হলে প্রকাশ্যে না করা ।

এব্যাপারে চিন্তা করার বিষয় এই যে, অনেক ক্ষেত্রে শরীয়তে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইমীন রোযাদারগণের সাদৃশ্য গ্রহণ এর বিধান আছে ।

এর তাৎপর্য রমাযানের মর্যাদা রক্ষা করা । যেমন মুসাফিরের জন্য রোযা না-রাখার অবকাশ থাকলেও কোনো মুসাফির যদি দিনের বেলা মুকীম হয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য,অবশিষ্ট দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা । এতে কি রোযা হবে? রোযা হবে না, কিন্তু রোযার মর্যাদা রক্ষা হবে ।

তেমনি হায়েয বা নিফাসের অবস্থায় মহিলাগণ রোযা রাখতে পারেন না, কিন্তু কোনো মহিলা যদি দিনের বেলায় হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হন তাহলে তার কর্তব্য, বাকী দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা ।

যদিও হায়েয বা নিফাসগ্রস্ত অবস্থায় তার পানাহারের অনুমতি আছে । তবে সেক্ষেত্রেও নিয়ম হল গোপনে পানাহার করা । একে ‘তাশাববুহ বিস সা-ইম’ বলে ।অর্থাৎ রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন। এ বিধান রমযানের মর্যাদার জন্যই দেওয়া হয়েছে।

মাহে রমাযানে রোযাদারের বর্জনীয়:

১- যেসব গুনাহের কাজ প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে করা হয় সেগুলো থেকে নিজেও বিরত থাকা, অন্যকেও বিরত রাখা । যেমন:- গান-বাজনা, প্রাণীর ছবি ও প্রাণীমূর্তির প্রদর্শনী, বেপর্দা চলাফেরা ইত্যাদি।

২-সর্বাবস্থায় তো মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা, তবে বিশেষ করে রমযান মাসে।

৩-সর্বাবস্থায় তো গীবত শিকায়ত থেকে বিরত থাকা তবে বিশেষ করে রমজান মাসে ।

৪- মারামারি হানাহানি থেকে বিরত থাকা ।

৫- দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানাহার বন্ধ রাখা।

৬- রোযা রেখে বাইরে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গল্প-গুজব ও অন্যান্য কর্মব্যস্ততা থেকে বিরত থাকা ।এরকম আরো বিষয় আছে ।

বর্তমান সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত কোভিড ১৯ মহামারী পরিস্থিতি বিরাজ করছে । তাই আসুুুন সবাই মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনা করি । আর আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা যেন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে এ মাসকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টের মাসে পরিণত না করি ।

অন্তত মুসলিম ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের তো কিছুটা ‘ত্যাগ’ স্বীকার করে হলেও এদিকে নজর দেয়া অতি জরুরি।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন ।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.