হরতাল-অবরোধে ক্ষতির মুখে বরেন্দ্রের মাছ চাষিরা ।

৪১

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী ।রাজশাহীতে মাছ চাষে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। সব জাতের মাছ উৎপাদনে সারা দেশে এ জেলার অবস্থান চতুর্থ।

আর রুই মাছের উৎপাদনে প্রথম রাজশাহী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল ও অবরোধে নানা সংকটে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের মাছ চাষিরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ অচলাবস্থার। রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ সব প্রজাতির মাছের দাম গত এক মাসে কমে গেছে।

আর এর বিপরীতে বেড়েছে মাছের খাদ্যের দাম ও পরিবহণ খরচ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রাজশাহী থেকে ঢাকা এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াইশ ট্রাক মাছ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে হরতাল ও অবরোধের কারণে ৫০ ট্রাকের বেশি মাছ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সড়কে চলাচল ঝুঁকির কারণে ট্রাক ভাড়াও বেশি নিচ্ছেন পরিবহণ মালিকরা। পাশাপাশি দাম কমার কারণে চাষিদের প্রতি ট্রাক মাছে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ চাষি মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
মাছচাষিরা বলছেন, ২৯ অক্টোবর হরতাল ও অবরোধ শুরুর পর থেকেই মাছের বাজারে নেমেছে ধস। ২০ দিন আগে রাজশাহীর রুই মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। অথচ এখন দুই কেজি ওজনের রুই কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।

অথচ দুই কেজি ওজনের রুইয়ের কেজি ছিল ৩৪০-৩৫০ টাকা। কমেছে সিলভার কার্প মাছের দামও। দেড় কেজি ওজনের এ মাছের দাম ছিল ২১০-২২০ টাকা। এখন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি। একই সময়ে কাতল মাছের দামও কমেছে। ৩ কেজি ওজনের প্রতি কেজি কাতলের দাম ছিল ৩২০-৩৩০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৭০-২৮০ টাকায়।

একইভাবে পাঙাশ ও তেলাপিয়াসহ অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছের দামও বাজারে অন্য সময়ের তুলনায় কম।পবা উপজেলার দাদপুর এলাকার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত মাছচাষি মশিউর রহমান বলেন, আমার প্রায় ছয়’শ বিঘার পুকুর রয়েছে। মাছের বাজার খারাপ।

এ কারণে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু মাছের খাবার দেওয়াতো বন্ধ নেই। আমি একটি কোম্পানির রেডি ফিড ব্যবহার করি। ২০ দিন আগেও ওই কোম্পানির ২৫ কেজি বস্তার মাছের খাবারের দাম ছিল ১১৫২ টাকা। এখন বস্তাপ্রতি দাম ৮৩ টাকা বেড়ে হয়েছে ১২৩৫ টাকা। প্রতিদিন আমার দুই’শ বস্তা মাছের খাবার প্রয়োজন হয়। প্রতি বস্তায় দাম ৮৩ টাকা বেশি হওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৬ হাজার ৬০০ টাকা খাবারের জন্য বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা শুধু খাবার বাবদ লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছি।

মোহনপুর উপজেলা সদরের মাছচাষী বাচ্চু মন্ডল বলেন, ২০ দিন আগেও রাজশাহী থেকে ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের ভাড়া ছিল ১৪-১৫ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৮-১৯ হাজার টাকা। যাত্রাবাড়ির ভাড়া ছিল ১৬ হাজার টাকা। এখন সেটি ১৯ হাজার টাকা। সিলেটের ভাড়া ছিল ২৮ হাজার টাকা।

এখন সেটি ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্য স্থানের ভাড়াও বেড়েছে। মালিকরা ট্রাক সড়কে নামাতে চাচ্ছেন না। ফলে বেশি টাকাতেই ট্রাক ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন মাছচাষীরা।

সার্বিক বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মাছের দাম কম। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে খাবারের দামও বেড়েছে। এ কারণে অনেক চাষি মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন। আশা করছি এ সংকট থাকবে না। অচিরেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে চাষিরা ভালো দামে মাছ বিক্রি করতে পারবেন।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.