সুপার ফোরে বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তানের শুভ সূচনা।

৫৫

বসির উদ্দিন,ঢাকা।

সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় আজ লাহোরে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ব্যাটিং স্বর্গ বলে পরিচিত এই মাঠে টসে জিতে অতি স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশ ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ।

বাংলাদেশ দলে আজ গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ খেলোয়াড় নাজমুল হোসেন শান্ত ইনজুরির কারনে খেলতে পারেন নি ।গত ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মেহেদী হাসান মিরাজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিলেন ।তাই নাজমুল শান্তর ইনজুরি দলের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।সেটা যে কতটা তার প্রমাণ বাংলাদেশ পেয়েছে আজ ।এই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান না থাকাতে বাংলাদেশকে ভালো‌ই ভুগতে হয়েছে । নাজমুল শান্তর বিকল্প হিসেবে আজ দলে জায়গা করে নেন ঢাকা থেকে হঠাৎ করেই উড়িয়ে নেয়া লিটন কুমার দাস।

গত ইনিংসের মতো আজও বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিং করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখ । কিন্তু রানের খাতা খুলার আগেই মাত্র ১.১ ওভারে ১ বল খেলে নাসিম শাহর বলে স্কোয়ার লেগে ফখর জামানের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফিরেন মিরাজ ।এই ধাক্কা বাংলাদেশকে রীতিমতো এলোমেলো করে দেয় ।আফ্রদির শর্ট বাউন্স বুঝতে না পেরে উইকেট কিপার রিজ‌ওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৪টি চারের সাহায্যে ১৩ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন।নাঈম শেখ ২০ রান করে হারিস র‌উফকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে দল বেশ বিপদেই পড়ে যায় ।এই বিপদকে আরো বাড়িয়ে তোলেন তৌহিদ হৃদয় ।হারিস র‌উফের ১৪৭ কিঃমিঃ এর অতি দ্রুত গতির বল কিছু বোঝার আগেই ষ্ট্যাম্প ভেঙে দেয় ।মাত্র ২ রানে ফেরেন তৌহিদ হৃদয় ।

এরপর সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন দলকে টেনে নিতে ।১০০ রানের পার্টনারশিপ করে ১৪৭ রানে ২৯.১ ওভারে ব্যাক‌ওয়ার্ড স্কোয়ারলেগে ফখর জামানের হাতে ধরা পরেন সাকিব ।৫৭ বলে ৭ টি চারের সাহায্যে ৫৩ রান করেন সাকিব ।
শাহানশাহ আফ্রদিকে স্কোয়ারলেগের উপর দিয়ে দর্শনীয় একটি ছয় মেরে বেশ ভালো‌ই শুরু করেছিলেন শামীম হোসেন । কিন্ত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উড়িয়ে উড়িয়ে খেলতে চেয়েছেন শামীম ।তাই পেস বোলার এর পরিবর্তে অকেশনাল বোলার ইফতেখার বলে লফটেট শর্ট খেলতে গিয়ে ইমামুল হকের হাতে ধরা পড়েন মাত্র ১৬ রান করে ।

আশার প্রতীক হয়ে জ্বলতে থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হন গতির কাছে ।তিনি হারিস র‌উফের অফ ষ্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়া বলকে জায়গায় দাঁড়িয়ে‌ই কাট করতে গিয়ে উইকেট কিপার রিজ‌ওয়ানের হাতে ধরা পড়েন।৮৭ বল খেলে মুশফিক ৫ কি চারের সাহায্যে দলের সর্বোচ্চ ৬৪ রান সংগ্রহ করেন।

মুশফিকের আউটের মধ্যে দিয়েই মূলত বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে যায় । মুশফিক ৩৭.২ ওভারের সময় ১৯০ রানের মাথায় আউট হন ।মাত্র ৩ রান সংগ্রহ করে বাকি তিন ব্যাটসম্যান আউট হলে ৩৮.৪ ওভারে মাত্র ১৯৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।১৭৪ রানে ৬ উইকেট থেকে মাত্র ১৯ রানে বাংলাদেশ শেষ চার উইকেট হারায় ।

বরাবরের মতো পাকিস্তানের তিন পেসার বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে রীতিমতো আতংক ছড়িয়ে অল্প রানে‌ বাংলাদেশকে বেঁধে রাখতে সাহায্য করেছেন । পাকিস্তানের হারিস র‌উফ দিনে দিন যথেষ্ট পরিনত ও ব্যাটসম্যানদের জন্য আতংক হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন ।আজ‌ও তার ব্যাতিক্রম হয় নি ।মাত্র ৬ ওভার বল করে ১৯ রান দিয়ে সংগ্রহ করেছেন ৪ কি মূল্যবান উইকেট।অপর উদীয়মান গতি তারকা নাসিম শাহ ৫.৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ টি উইকেট। পাকিস্তান আজ চারজন পেসার নিয়ে দল সাজিয়েছে আর এই চার জন‌ পেসার ৯টি উইকেট পেয়েছেন।আর অকেশনাল অফ স্পিনার ইফতেখার আহমেদ নিয়েছেন ১ টি উইকেট।

১৯৪ রানের অপেক্ষাকৃত সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমামুল হক ও ফখর জামান ক্রীজে গিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন ।দলীয় ৩৫ রানে মাত্র ২০ রান করে শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন ফকর জামান । তাসকিনের ইনকার্টার বলে বাবর আজম ৭৪ রানের সময় ১৫.৩ ওভারে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন।অপর দিকে ইমামুল হক ৮৪ বলে ৫টি চার ও ৪ টি ছয়ের সাহায্যে ৭৮ রান করে পাকিস্তানের জয়কে সহজ করে তুলেন । ইমামুল হক যখন ৩২.৫ ওভারে আউট হন তখন পাকিস্তানের দলীয় রান ১৫৯ ।

আরেক পাকিস্তানের উইকেট কিপার ও মারকুটে ব্যাটসম্যান রিজ‌ওয়ান দলকে নিরাপদ বন্দরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন ।৭৯ বলে ৭টি চার ও ১টি ছয়ের সাহায্যে ৬৩ রান করলে পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয় পায় ।৩৯.৩ ওভারে হাতে ৬৩ বল রেখেই এই জয় আসে পাকিস্তানের।

বাংলাদেশের বোলারদের পারফরম্যান্স এই ব্যাটিং সহায়ক পিচে যতটা সম্ভব ভালো করার চেষ্টা করেছে । কিন্তু পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের ধস নামাতে হলে যে ধরনের রান দরকার ছিল তা ছিল না । ফলে যা হবার তাই হয়েছে ।

সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন পাকিস্তানের হারিস র‌উফ।

 

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.