বৃদ্ধা খুকিকে হত্যা অতঃপর  নিজ হাতে টুকরো ও বস্তাবন্দী করেছিলেন হাবিব

৫৪

বৃদ্ধা খুকিকে হত্যা অতঃপর  নিজ
হাতে টুকরো ও বস্তাবন্দী করেছিলেন হাবিব

অনন্ত সেলিম
জেলা প্রতিনিধি,বগুড়া

মনোয়ারার স্বীকারোক্তি ১৬৪ ধারা মতে  বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ হেফাজতে নিহত জজ কোর্টের মহুরি হাবিবুর রহমান হাবিব (৪২) তাঁর গ্রামের বৃদ্ধা খুকি বেগম (৬০) কে হত্যা করে নিজ হাতে টুকরো করে বস্তাবন্দী করেছিলেন এবং গ্রেফতার হওয়া এই মনোয়ারা, আনছার আলী ও স্ত্রী ছকিনা মিলে বস্তাবন্দি খুকি বেগমের লাশ পাশ্ববর্তী একটি জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসেন। খুকির লাশ বস্তায় তোলায় সময় তাঁর খন্ডিত একটি পা বাইরে পড়ে ছিল। পরে পা টি মনোয়ারার বাড়ির সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় তারা।

১০ বছর আগে সংঘটিত শিশু  বিপুল হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন বৃদ্ধা খুকি বেগম আর  ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব অরফে মহুরি হাবিব।
গত (২০ -০৮-২০২৩) ইং আদালতে খুকি বেগমের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকার কারনে খুকি বেগম যাতে ওই হত্যা মামলায় সাক্ষি দিতে না পারে সে জন্যই পরিকল্পিত ভাবে খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বল্লেন মনোয়ারা বেগম।

গত(০৪- ১০-২০২৩) ইং বুধবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সুমাইয়া সিদ্দিকার আদালতে) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রদান কালে এমন কথা বলেছেন, খুকি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া মনোয়ারা বেগম ওরফে মুন্না। তিনি আদালতে আরও বলেন, খুকি হত্যার বিষয়ে তিনি সব জানেন।  আরো বলেছেন যে হাবিবসহ একই গ্রামের আনছার ও তাঁর স্ত্রী ছকিনা বেগম এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল  পরে পুলিশ আনছার ও ছকিনাকে গ্রেপ্তার করেছে তাঁরা বর্তমানে  তিন দিনের রিমান্ডে শাজাহানপুর থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানাগেছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী  ৩রা অক্টোবর২০২৩ ইং শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া দামোদারপাড়া গ্রামের মনোয়ারাকে খুকি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাঁর বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেগমের লাশের একটি পা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ ।

মনোয়ারার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বগুড়া জজ কোর্টের সামনে থেকে হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করে প্রথমে ডিবি হেফাজতে নেয়া হলে  সে অসুস্থ হয়ে পরে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ওই দিন রাত পৌনে ৯টায় দিকেই  হাবিব মারা যায়।

এ ঘটনায় হাবিবের পরিবারের পক্ষ থেকে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এ ঘটনায় শনিবার রাত পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। হাবিবের পিতা আব্দুল কুদ্দুস বাবলু বলেছেন, দুই দিন সরকারি ছুটি ছিল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়নি। এ কারণে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

হাবিবের আকষ্মিক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা পুলিশের গঠন করা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আকতার। সাত কর্মদিবসের মধ্যেই তদন্তকাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে আদালতে মনোয়ারা বেগম তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি এক নাতিকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন। তার দুই মেয়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। তারাই তার খরচ চালায়। খুকি বেগমের ছেলে বিপুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিল হাবিব। খুকি বেগম ছিল সেই মামলার সাক্ষী। একই গ্রামের আনছারের কাছে খুকি বেগম ১০ হাজার টাকা পেত। আনছার সেই টাকা খুকি বেগমকে দীর্ঘদিন ধরে না দিয়ে ঘুরাতো। সে বিষয় নিয়ে খুকি বেগমের সঙ্গে আনছারের ঝামেলা চলছিল। ২ আগস্ট সন্ধ্যার পর আনছারের স্ত্রী ছকিনা এবং হাবিব খুকি বেগমকে সঙ্গে নিয়ে মনোয়ারার বাড়িতে যায়। সেখানে হাবিব খুকি বেগমকে জিজ্ঞেস করে ২০ আগস্ট তারিখে আদালতে সাক্ষী দিতে যাবে কি না? খুকি বেগম জানায়, বিপুল হত্যা মামলায় সাক্ষী দিতে যাবেন তিনি। এমন সময় আনছার মনোয়ারার বাড়িতে আসে। এরপর হাবিব এবং আনছার খুকি বেগমকে ধরে মনোয়ারার ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় হাবিব লাঠি দিয়ে খুকির মাথায় আঘাত করলে খুকি মাটিতে পড়ে যায়।

এরপর হাবিব তার কাছে থাকা গামছা দিয়ে খুকির গলায় পেচিয়ে ধরে, আনছার খুকির মুখে কাপড়গুজে দেয় এবং আনছারের স্ত্রী ছকিনা খুকিকে ধরে থাকে। খুকি মারা গেলে তারা মনোয়ারাকে ভয় দেখায় কাউকে না বলার জন্য। এরপর একটি বস্তায় খুকির লাশ ভরে বাড়ির পার্শ্বে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে আনছার ও ছকিনা লাশ ধরে থাকে এবং হাবিব লাশ কেটে টুকরো করে বস্তায় ভরে পুকুর পাড়ে জঙ্গলে ফেলে দেয়। লাশ বস্তায় উঠানোর সময় একটি পা পড়ে থাকলে সেটি মনোয়ারার বাড়ির টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় যা আজকের পত্রিকার সুত্রে জানা যায় অপর দিকে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, মনোয়ারা বেগমের স্বীকারোক্তির পর আনছার ও তাঁর স্ত্রী ছকিনাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। কাল রোববার তাঁদের আদালতে হাজির করা হবে। বলে বিশেষ সূত্রে জানাজায়।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.