বদলে যাওয়ার গল্প অভিনেত্রী ও মডেল তানজিন তিশা

৫৮

বিনোদন ডেক্সঃ

টেলিপাড়ার এ সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী ও মডেল তানজিন তিশা। অভিনয়ে দক্ষতার পাশাপাশি অসম্ভব গ্ল্যামারের কারণে পর্দায় সবশ্রেণির দর্শকের সহজেই নজর কাড়েন তিনি। বিশেষ করে রোমান্টিক নাটকের অভিনয়ে তিশা যেন অতুলনীয়। দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে তিশার সাফল্যও অনেক। ক্যারিয়ারের এক যুগ ধরে নানা বৈচিত্র্যময় গল্পের নাটক-টেলিফিল্মের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাওয়া তিশা এখন অনেকটাই বদলে গেছেন। পাল্টে ফেলছেন নিজের চিন্তাচেতনাও। গতানুগতিক ধারার ছক থেকে বের হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ভেঙে আরও পরিণত হচ্ছেন এই লাস্যময়ী। দক্ষ অভিনেত্রী তানজিন তিশার ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার সঙ্গে এখনকার তিশার মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়। সেটা নাটক, টেলিফিল্ম, কিংবা ওয়েবসিরিজ। শুরুর দিকে একই ধরনের চরিত্রে তাকে দেখা গেলেও ইদানীং নিজের মধ্যে পরিবর্তন এনেছেন তিশা।

আগের মতো বেশি কাজ না করে মানসম্মত, সৃজনশীল এবং মাসেজপূর্ণ কাজ করছেন। আর সে কারণেই নিজেকে ভেঙেচুরে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করছেন। রোমান্টিক ইমেজের খোলস ভেঙে অনেকটাই গল্পনির্ভর কাজ বিশেষ করে বলা যায় নারীপ্রধান চরিত্রের কাজগুলো বেশি করছেন। এজন্য কোনো কাজ করার আগে তিনি দেখে নিচ্ছেন। বেছে বেছে কাজ করায় আগের তুলনায় কাজের সংখ্যা হয়তো কমিয়েছেন তিনি।

সব ভালো কাজের ক্ষেত্রে মোটেই ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। সাম্প্রতিক কাজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, কাজ তো করছিই। করছি না যে তা কিন্তু নয়। তবে বেছে বেছে অল্প কাজ করছি। ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। ভিন্ন ধরনের গল্পে কাজ করতেও ভালো লাগে। সম্প্রতি কয়েকটি কাজ করেছি। আরও নতুন বেশ কিছু কাজের কথা হচ্ছে। কাজগুলো প্রচারের মাধ্যমে এলেই জানবেন সবাই। আমি নিজেই সবাইকে জানাব। সম্প্রতি একটি কাজের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন তানজিন তিশা। মুহাম্মদ মিফতাহ আনানের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানের বিপরীতে ‘কলিজার আধখান’ নামের একটি নাটকে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। এ নাটকে দেখা যায়, সন্তান না হওয়া এক দম্পতির করুণ গল্প। সিএমভি প্রযোজিত এই নাটকে তার অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করেছে। এ ধরনের গল্পের নাটকে অভিনয় করার সময়ই তিশার ধারণা ছিল, নাটকটি প্রশংসিত হবে।

নাটক প্রচারের পর তিশার সেই ধারণা সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় যার পর নাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এই মডেলÑ অভিনেত্রী বলেন, এই নাটকের গল্প সত্যিই সুন্দর। আমাদের সমাজে এমন অনেক দম্পতি আছে যাদের সঙ্গে নাটকের গল্পটি মিলে যাবে। চেষ্টা করছি সস্তা জনপ্রিয়তা এড়িয়ে গল্পসমৃদ্ধ মানসম্পন্ন নাটকে কাজ করার। তারই ধারাবাহিকতায় এই নাটকটি করা। এর আগে তিশা অভিনীত নারীকেন্দ্রিক গল্পের নাটক ‘পুতুলের সংসার’, ‘আই অ্যাম ডিভোর্সড’ ও ‘শরবত’ নাটকগুলোও দর্শক বেশ প্রশংসা করেছেন। সচেতন শিল্পী হিসেবে এই অঙ্গন নিয়ে তিশার ভাবনার জায়গাটিও স্পষ্ট। টিভি নাটক নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। নেপথ্যেও রয়েছে নানা অসংগতি।

সিন্ডিকেট, প্রতিহিংসা, প্রতিযোগিতার বেড়াজালে অনেকে নিজেকে সামলে নিতে ব্যর্থ হন। তানজিন তিশা বলেন, আমি সব সময় নিজের মতো করে চলার চেষ্টা করি। কারো সঙ্গে আমার কোনো প্রতিযোগিতা নেই। নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকি। পরের কাজটা কতটা ভালো হতে পারে সেটা নিয়ে ভাবি। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন চরিত্রে নিজেকে প্রতিস্থাপন করে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করি। অভিনয় শেখার চেষ্টা করি। আমার নিজের মনোবল, নিজের সাহসিকতাই আজকের অবস্থানে আসার সবচেয়ে বড় কারণ। প্রত্যেক সহশিল্পীর প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ। নাটকের পাশাপাশি অনেকে স্বপ্ন দেখেন চলচ্চিত্রের। এ প্রসঙ্গে তিশার ভাষ্য নায়িকা হতে চাইলে অনেক আগেই হতে পারতাম। প্রস্তাবও পেয়েছি অনেক। কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে সব সময় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি। সিনেমায় যে আগ্রহ আছে, তবে এজন্য ভালো গল্প চাই। কাক্সিক্ষত গল্প ও চরিত্র পেলে সিনেমায়ও কাজ করব।

শুধু চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগই নয়, কিছুদিন আগেও গুঞ্জন ওঠেছিল চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় এবং প্রথম সারির পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই সেই গুঞ্জন আবার মিলিয়ে যায়। এত ভালো সুযোগ পেয়েও অভিনয় না করার কারণে তিনি বলেন, সবই ঠিক ছিল। শুধু গল্পটাই ভালো পাইনি। এ কারণে কাজটি করা হয়নি। সত্যি বলতে, আমি যে কাজ করব, সেটায় অভিনয়ের জায়গা থাকতে হবে। সিনেমায় নাচ গান থাকল কিন্তু অভিনয়টাই থাকল না, এমন হলে চলচ্চিত্রে কাজ করব না। তবে এক সময় ওয়েব সিরিজ করতে চাইনি, এখন করছি, ওয়েবফিল্মও করব। এভাবে একদিন ব্যাটেবলে মিলে গেলে চলচ্চিত্রেও কাজ শুরু করে দেব।

এক যুগের ক্যারিয়ারে সাফল্য পেয়েছেন অনেক। কিছুদিন আগে অবশ্য একটু বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে সেটা খুব আটঘাট বেঁধে অত্যন্ত সতর্কভাবেই সামলেছেন তিশা। সে কারণে এ নিয়ে আর তেমন কোনো কিছু হয়নি। বরং এ বিষয়ে তার দৃঢ়তা ভক্ত দর্শকরা তার ব্যক্তিত্বেরই প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, একজন সত্যিকারের সচেতন শিল্পীর মতই পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন তিনি। শিল্পী বা মিডিয়াকর্মীদের বিচিত্র মানসিকতার অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী থাকে। সে কারণে সেলিব্রেটিদের মাঝে মঝেই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেটা সামলে নেওয়ার মতো দৃঢ়তা এবং মানসিক শক্তিও থাকতে হয় শিল্পীদের। সেক্ষেত্রেও অনেকটাই সফল তানজিন তিশা। ছোটখাটো বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলানোর মতো করেই নিজের ক্যারিয়ার সামলাতে জানেন তিশা।

 

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.