আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী:
বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব সময় নিরপরাধ, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্থ মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে দায়িত্ব পালন করলে পুলিশের ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকবে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন, রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবসময় কাজ করছে পুলিশ।
আইজিপি আরও বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কর্মপরিধি বেড়েছে। একই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে অপরাধ সংঘটনের কৌশল। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৯তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই)-২০২১ ব্যাচের এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জানা গেছে, ৩৯তম ক্যাডেট এসআই-২০২১ ব্যাচের ৭৬১ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ৫১ জন নারী ক্যাডেট দীর্ঘ ১ (এক) বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে আজকের এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে তাদের কর্মজীবন শুরু করতে যাচ্ছে। ৭৬১ জন এসআই ক্যাডেটদের মধ্যে ২ জন নারী এসআই যথাক্রমে ‘বেস্ট একাডেমিক’ এবং ‘বেস্ট ইন এক্টিভিটিজ’ এর কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে মামলা তদন্ত, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনমানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার এক অনবদ্য সুযোগ তোমরা পাবে। সুষ্ঠুভাবে মামলা তদন্তের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে তোমাদের।
পুলিশ মহাপরিদর্শক আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর যেকোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে। বাংলাদেশ আজ সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে একটি স্থিতিশীল ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সরকার দেশ থেকে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি নির্মূলে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং সমাজে নারী-শিশুদের প্রতি বিশেষ আইনি সহায়তা প্রদান করা পুলিশের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পুলিশ একাডেমি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান তোমরা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজে লাগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রতিনিয়ত অনুশীলন, জ্ঞানচর্চা ও বাস্তব জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে যা জনকল্যাণে তোমরা ব্যবহার করতে হবে। আমি তোমাদেরকে সমস্ত লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে স্বীয় কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, তোমাদের সততা, কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রতি আমি আস্থা রাখতে চাই। আশা করি তোমরা হবে নিজ দায়িত্ব পালনে আপসহীন, মার্জিত ও সৃজনশীল। নিরাপরাধ, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহযোগিতার বলিষ্ঠ হাত বাড়িয়ে দিতে তোমরা হবে অকুণ্ঠ ও অকুতোভয়। নবীন পুলিশ অফিসার হিসেবে তোমরা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সঙ্গে কর্মজীবন অতিবাহিত করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে তোমরা হবে জনগণের আস্থার প্রতীক ও জনগণের পুলিশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আইজিপি কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ, কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।