কক্সবাজারে মানব পাচার চক্রের ৬ সদস্য র‍্যাব-১৫’র হাতে আটক…

১০

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কক্সবাজার।

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার পল্লান পাড়া, লেংগুর বিল ও লম্বরি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে টেকনাফ কেন্দ্রিক অপহরণ ও মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুলসহ ০৬ জন অপহরণকারীকে আটক করেছে র‍্যাব-১৫।

কক্সবাজার টেকনাফের একটি অপহরণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিরীহ লোকদেরকে টেকনাফে নিয়ে এসে জিম্মি করে। পরবর্তীতে মায়ানমারের বিভিন্ন নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে কল দিয়ে ভিকটিম এর পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। গত ২৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ২০ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তৌহিদ নামে এক স্থানীয় যুবক ঈদগাঁও থানাধীন পোকখালি গ্রামের হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মায়ানমারের সিমে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে মোট তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই ঘটনায় ২৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তৌহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল মূল চক্রকে আটকের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৭ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ অনুমান ১১ঃ০০ ঘটিকায় র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট সাইদুল আমিন এবং আব্বাসকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আব্বাসকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে প্রেক্ষিতে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী এই চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল ও সাইফুল ইসলামসহ আরো দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের হেফাজত হতে সর্বমোট ০৩টি স্মার্ট ফোন, ০৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১৩টি সীম কার্ড এবং নগদ ২৬,০০০/- (ছাব্বিশ হাজার) টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত অপহরণকারীদের বিস্তারিত পরিচয় ১। মুহিত কামাল (৩৪), পিতা-মৃত সিরাজুল ইসলাম, সাং-নতুন পল্লানপাড়া, থানা-টেকনাফ, ২। সাইফুল ইসলাম (৩৮), পিতা-হাফেজুর রহমান, সাং-দক্ষিণ লম্বরী, থানা-টেকনাফ, ৩। মোঃ আব্বাস মিয়া প্রঃ জাহাঙ্গীর (৪০), পিতা-মৃত নুরুল হক, সাং-দাড়িয়ারদীঘি, থানা-রামু, ৪। সৈয়দুল আমিন (২৮), পিতা-আব্দুল আলম, সাং-থৈয়ংগা কাটা, থানা-রামু, ৫। তাহের হোসেন (২৫) (FDMN), পিতা-আব্দুস সালাম, সাং-কুতুপালং (ক্যাম্প নং-০৩, ব্লক-বি/২৭, থানা-উখিয়া, বর্তমানে-নতুন পল্লানপাড়া, থানা-টেকনাফ এবং ৬। হাবিবুল্লাহ প্রঃ লালু (৩০) (FDMN), পিতা-কাদির হোসেন, সাং-নতুন পল্লানপাড়া, থানা-টেকনাফ, সর্ব জেলা-কক্সবাজার বলে জানা যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায় যে, কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভিকটিমদের কাজ দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে তারা প্রথমে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত গুদামঘরে বন্দি করে রাখে। ভিকটিমের সংখ্যা ২০-২৫ জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিন এ নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে মায়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মায়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মায়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপন এর টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভিকটিমকে মাছ ধরার বোটে করে আবার টেকনাফে নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল গ্রামের প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে নানাভাবে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা গ্রামের লোকদেরকে প্রত্যেক মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে। মূলহোতারা গ্রামের প্রবেশ মুখে ২৪ ঘন্টা চেকার নিয়োগ করে রাখে। প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোন সদস্যকে দেখলে চেকাররা সাথে সাথে whatsapp এ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপে জানিয়ে দেয়, ফলে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং প্রয়োজনবোধে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ০৫টি, উখিয়া থানায় ০১টি এবং ঈদগাঁও থানায় ০১টি মোট ০৭টি মামলা রয়েছে।

উদ্ধারকৃত আলামতসহ ধৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা যায়।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.