ম্যাচ সমীকরণঃ বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা |

৬২

মোঃ নূর আলম

– সেপ্টেম্ব্রের ৯ তারিখ হয়ে গেল এশিয়া কাপের সুপার ফোর এর বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার মধ্যকার খেলা। শ্রীলংকার কলম্বোর, রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ডে-নাইট এ ম্যাচে বাংলাদেশ টস জিতে শ্রীলংকাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রন জানায়। প্রথম ব্যাট করতে নেমে শ্রীলংকা ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান করে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে ৪৮.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান কর। ফলাফল ২১ রানে বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায়। হোম ভ্যানু হিসেবে শ্রীলংকা ৫০ ওভারে ২৫৭ রান করে, এটাকে খুব বড় স্কোর বলে মনে করার কোন কারন নেই। এটা চেজ করার সামর্থ বাংলাদেশের আছে। কিন্তু বাংলাদেশ পারেনি। কি এর কারন। আসুন দেখিঃ

– ওয়েদার ফ্যাক্টরঃ এই ম্যাচে আবহাওয়া একটা ফ্যাক্টর ছিলো, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলো। সেই কারনেই হয়তো টসে জিতে শাকিব আল হাসান বোলিং এর সিদ্ধান্ত নেন। বৃষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্ভবত ফিল্ডিং এর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

– পাওয়াল প্লেঃ শ্রীলংকা প্রথম পাওয়ার প্লেতে (১ থেকে ১০ ওভার) করেন ৫১/১, দ্বিতীয় পাওয়ার প্লেতে (১১ থেকে ৪০ ওভার) করে ১২৫/৪, এবং তৃতীয় পাওয়ার প্লেতে (৪১ থেকে ৫০ ওভার) সংগ্রহ হরে ৮১/৪।

– প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ছিলো ৪৭/০, (নাইমঃ ১৯ (২২ বল), মিরাজঃ ২২ (২৩ বল)। এখানে আমি বলবো বাংলাদেশের রান শ্রীলংকার তুলনায় ৪ কম হলেও বাংলাদেশ কোন উইকেট হারায়নি। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তুলানামুলক এগিয়ে ছিলো এটা বলা যায়।

– দ্বিতীয় পাওয়ার প্লেতে (১১থেকে ৪০ ওভার) বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩০ রান ৫ উইকেটের বিনিময়ে। শ্রীলংকার করেছিলো ১২৫/৪, পক্ষান্তরে বাংলাদেশ করেছে ১৩০ রান উইকেট হারিয়েছে ৫ টি। এই পাঁচ উইকেটের মধ্যে মেহেদি মিরাজ, নাইম শেখ, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুশফিকুর রহিম। চার জন সিনিয়র এবং যতেষ্ঠ অভিজ্ঞ ব্যাটার হারিয়েছে বাংলাদেশ এই পাওয়ার প্লে’তে। এখানে ম্যাচের পার্থক্য হয়েছে।

– পার্টনারশিপঃ ওপেনিং পার্টনারশিপে শ্রীলংকা তুলে নেয় ৩৪ রান, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের প্রথম উইকেট পতন হয় (মিরাজ) দলিয় ৫৫ রানে। দ্বিতীয় উইকেট পার্টনারশিপ গুরুত্বপূর্ন, খেয়াল করুন শ্রীলংকা দ্বিতীয় উইকেটে করেছিলো ৭৪ রানের পার্টনারশিপ, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পার্টনারশিপ মাত্র ৫ রানের। এখানেও একটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

– বরাবরের মত ওপেনার নাইম শেখ, একজন ওপেনার ২১ রান করেছেন মাত্র ৪৬ (প্রায়) স্ট্রাইক রেটে। তুলনামুলক আরেক ওপেনার মিরাজ ব্যাট করেছেন প্রায় ৯৭ স্ট্রাইক রেটে। ২৯ বলে ২৮ রান।

– মুশফিক এবং তাওহিত হৃদয় এর পার্টনারশিপ ছিলো এই ম্যাচের উল্লেখযোগ্য অংশ। ৭২ রানের এক পার্টনারশিপ হয় এই উইকেটে। মুশফিকুর রাহিম এবং তৌহিদ হৃদয় এর পার্টনারশিপ আরও কিছুটা দীর্ঘ হলে ম্যাচের ফলাফল হয়তো অন্য রকম হতে পারতো। মুশফিক আউট হবার পর তৌহিদের ইনিংস থামে ৮২ রানে। তৌহিদ খেলেন (প্রায়) ৮৫ স্ট্রাইক রেটে।

– বাংলাদেশের বোলিংঃ এই ম্যাচের একটা লক্ষনিয় দিক হচ্ছে, শ্রীলংকার উইকেট পতন হয়েছে ৯ টা, এবং ৯ টা উইকেটই পেয়েছেন পেস বোলাররা। তাসকিন- ৩টা, শরিফুল- ২টা হাসান মাহমুদ- ৩টা। একটা রান আউট। উইকেট পাননি কোন স্পিনার, এমনকি সাকিব’ও না। কোন উইকেট না পেলেও সাকিব ভালো বোলিং করেছেন ১০ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৪৪ রান। নাসুম বোলিং ফিগার আরো ভালো ১০ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ৩১ রান। এবং ৫০ ওভারের ম্যাচে একটি মাত্র মেডেন ওভার নাসুমের বোলিং থেকে এসেছে।

একাদশে পরিবর্তনঃ এই ম্যাচে দুইটা পরিবর্তন খুব কাংক্ষিত ছিলো, নাইম শেখ, এবং আফিফ হোসেন। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে একটা। আফিফ এর পরিবর্তে নাসুম আহম্মেদ একাদশে অন্তুর্ভুক্ত হয়েছেন। নাইম শেখ’কে নিয়ে নির্বাচক মন্ডলি নতুন করে ভাববেন বলে মনে করি। এই টুর্নামেন্টে নাইম শেখ এর স্কোর চার ম্যাচে ৮৫ রান। চার ম্যাচে তার গড় ২১.২৫ রান। ফার্স্ট রাউন্ডে স্রীলংকার বিপক্ষে-১৬, আফগানিস্থান এর বিপক্ষে-২৮ এবং পাকিস্থান এর বিপক্ষে-২০ রান। সুপার ফোর এর ম্যাচ শ্রীলংকার বিপক্ষে ২১ রান। যেই ম্যাচে বাংলাদেশের রান হয়েছে ৩৩৪/৫, (আফগানিস্থানের বিপক্ষে), দুইটা শতক, সেই ম্যাচে নাইম শেখ এর রান ২৮। একজন ওপেনারের কাছ থেকে রেগুলার ২০-২৫ রান প্রত্যাশিত না। যেখানে এনামুল হক বিজয় এবং তানজিদ হাসান তামিম একাদশের বাহিরে আছে। এই ম্যাচে অবশ্যই নাইম শেখ এর পরিবর্তন কাম্য ছিলো।

-একদিনের ক্রিকেটে ৭ নাম্বার পজিশনটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। ৬-৭-৮ নাম্বার ব্যাটার’রা দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়। অতীতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আমরা এই ভুমিকায় অনেক দেখেছি। মাহমুদুল্লাহর রিপ্লেসরা কতটুকু পারছে সেই যায়গা পুরন করতে? কিম্বা কতটুকু সম্ভাবনা দেখাচ্ছে? ভেবে দেখবার বিষয়।
-এই টুর্নামেন্টে শামীম হোসেন এর স্কোর দেখে নেই চলুন এই ম্যাচে তিনি করেছেন ৫ রান। পাকিস্থানের বিপক্ষে করেছেন ১৬ রান এবং আফগানিস্থান এর বিপক্ষে করেছেন ১১ রান। তিন ম্যাচে মোট ৩২ রান। গড়ে ১১।

-শ্রীলংকাকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিতে উইকেট কিপার ব্যটার কুসাল ম্যান্ডিস ৫০ রান এবং সেদ্রা সামাভিক্রমা ৯৩ রান উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছে। এবং বোলিং এ মাহেস থাকসেনা ৩ উইকেট, দাসুন সানাকা ৩ উইকেট এবং মাথিসা পাথিরানা ৩ উইকেট। বিশেষ করে দাসুন সানাকার কথা অলাদা ভাবে বলতে হয়, ৯ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। যার মধ্যে মিরাজ, নাইম এবং মুশফিকের মত মূল্যবান উইকেট রয়েছে।

-পরিশেষে বলা যায়, দলকে জয়ের ধারায় পৌছাতে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি নবীনদেরও ভূমিকা থাকতে হয়। সেই অর্থে আমরা নবীনদের ভুমিকা দেখছি না একমাত্র তৌহিদ হৃদয় ছাড়া। সময় এসেছে নাইম শেখ এবং শামীম হোসেন এর সামর্থ আন্তর্জাতিক মানের কিনা সেটা বিবেচনা করার।।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.