আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ।

২৬

স্টাফ রিপোর্টার:আব্দুল ওহাব

ঠাকুরগাঁও শহরের রোডর ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী মো. সাখাওয়াত হোসেন। আট বছর ধরে তিনি রোডে একটি দোকান ঘরে ব্যবসা করছেন। বছরখানেক আগেও ভাঙাড়ি কেনাবেচা করে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। এখন দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। রোজগার কমলেও খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। সীমিত আয়ে সংসারের খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে তার।

 

রোবার শহরের ঠাকুরগাঁও রোড কাঁচাবাজারে কথা হয় সাখাওয়াতের সঙ্গে। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধুন্দল ও ঢ্যাঁড়শ কিনেছেন ৩০০ টাকায়। তিনি বলছিলেন, কাঁচাবাজারে ঢুকলেই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চলে যায়। মাছ-মাংসসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। আয় না বেড়ে কমেছে। সংসার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

 

শহরের রোড কালিবাড়ী বাজার, কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছয় মাসের তুলনায় শাকসবজির দাম অনেক বেড়েছে। তবে দাম ওঠানামা করে। স্থানীয় চাষিরা সবজি বেশি নিয়ে এলে দাম কিছুটা কমে। সরবরাহ কম থাকলে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায়। তবে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করলে দাম কমবে বলে আশা বিক্রেতাদের।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন সবজির প্রায় ৫০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ৫০ শতাংশ অন্য জেলা থেকে আসে। কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০, আদা ও রসুন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা ৬০, পটোল ৪০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, আলু ৪০, চিচিঙ্গা ৪০ এবং চালকুমড়া ও লাউ আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পুঁইশাক, কলমিশাক, লালশাক ৪০ থেকে ৫০ এবং শসা ও বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আড়তদার হাসিনুর রহমান জানান, এখন যে চালকুমড়া ৪০ টাকা, তিন-চার মাস আগে তা ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যেত। লাউয়ের দামও একই। কাঁচাবাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। কৃষকদের সরবরাহ বেশি হলে দাম এমনিতেই কমে যায়। সরবরাহ কম থাকলে কেজিপ্রতি দাম বাড়ে।

 

সব ধরনের মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। রাজনগরের ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ জানান, দু’তিন মাস আগেও ছোট রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেট মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার ওপরে কিনতে হয়। ১৫০ টাকার পাঙাশ মাছ এখন ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

 

মাছ ব্যবসায়ী সপিজুল ইসলাম জানান, স্থানীয়ভাবে মাছের জোগান কম। জয়পুরহাট, নাটোর থেকে বড় পুকুরে চাষ করা মাছ আসছে। কয়েক দিন আগে এসব মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ হয়। দেশি ও নদীর মাছের চাহিদা বেশি থাকলেও জোগান কম। তাই দামও বেশি।

 

ছয় মাসের তুলনা করলে কাঁচাবাজারের শাকসবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও পাইকারি কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। এখন বাজারে বিক্রি হওয়া শাকসবজির অর্ধেকের বেশি জেলার বাইরে থেকে আসে। এ জন্য দাম বেশি।

 

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পরশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কাঁচাবাজারসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে, এ জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চলছে।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.