মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে আত্মহত্যা, লিখে গেলেন সকল কারন

৭৬

ডেস্ক রিপোর্ট :

ভোলার লালমোহন উপজেলায় গত ৩১.১০.২২ ইং তারিখে রত্না নামের দুই বাচ্চার মা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। লালমোহন উপজেলা থানা পুলিশ আত্মহত্যার ডাইরি উদ্ধার করে।
ডাইরিতে তার আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে যান, এতে তার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক সমস্যা তুলে ধরেন। তাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দেওয়া হয়। তার ভাই মাহিম আমাদের রিপোর্টার কে জানাই এটা আত্মহত্যা না আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট আসলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করব। আমি ভাই হিসেবে হত্যার বিচার চাই।

মাহিম এর আবেগঘন পোস্টটি পুরোপুরি তুলে ধরা হলো :

আমার ছোটবোন গত ৩১/১০/২০২২ ইং তারিখে তার শশুর বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করে । মারা যাওয়ার আগে সে তার ডাইরিতে আত্মহত্যার কারন লিখে যায় । এর পেছনে কারা দায়ী, এবং কাদেরকে ক্ষমা করা যাবে না তাও লিখে রাখে । কিন্তু ডাইরি উদ্ধার করার সময় তার শশুরবাড়ির লোকজন কিছু পাতা ছিড়ে ফেলে ।। আমি বিশ্বাস করি, ওর মতো বুঝদার একটা মেয়ে ছোট ছোট দুইটা সন্তান রেখে কখনো এই কাজ করতে পারে না । তাকে কি পরিমান মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে পরোক্ষভাবে খুন করা হয়েছে তা শুধু আল্লাহ পাকই ভালো জানেন । আমি আর আমার পরিবার এই খুনের সঠিক বিচার চাই ।

এই আমার বোনের সুইসাইড নোট…

আসসালামু আলাইকুম, সবাই ভালো থাকবেন।
আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমি ও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু এই সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিল না। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছে করেনা। বাবা মা স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোন পরপুরুষের সাথে ও কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করে ও চোর সবার মুখে মুখে। বাবা আমার অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কেউরে ছাড় দিবানা, ওরা সবাই মিথ্যেবাদি । আমার চাচা শশুর ওরা সবাই নাটের গুরু। ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যে অপরাধ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কি হতে পারে!! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলসি আমি চুরি করি নাই। এখন তোরা খুশী, সবাই খুশীই থাক। আমি চলে গেলাম কেউ আর তোদের সাথে সত্যের প্রতিবাদ করবেনা। আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিলো সমাজকে, এই সমাজে ভালো মানুষের মুল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়ে দুজনকে দেখিয়েন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় বলে বুঝাতে পারবো না। মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যার মা নাই সে বুঝে – বাবা মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই। আরেকটা কথা যদি পারো আমার মৃত দেহটাকে তোমাদের বাড়িতে মাটি দিও আর আমার গোসল আরজু আপার শাশুড়ী, পারুলি আপারে দিয়ে দিও। ৪ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ ও ২ রাকাত নফল নামাজ মানত ছিলো, আরজু আপুরে বইলেন আদায় করে দিতে, আমার শরীর ভালো নাই তাই পরতে পারি নাই। একটা কোরআন শরিফ দান করে দিও। এতে আমার শত্রুদের বিচার করে দেখাবে আমার আল্লাহ। আল্লাহ যদি থাকে দেখবে ওরা দুনিয়ায় সাজা পাবে ।

প্রিয় স্বামী, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, দুইটা মেয়ের খেয়াল রাইখো। অন্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে সুখে থাইকো।

প্রিয় বাবা মা বোন ভাই বাড়ির তোমারা সবাই ভালো থেকে। আর আমার মেয়ে দুইটাকে খেয়াল রাখিও।

আমার ছোট ভ্যানেটি ব্যাগ এর ভিতরে কানের দুল আছে, আংটি নাকের নথ ফুফুর একটা কানের দুল ফুফুর কানের একটা ফুফুকে দিয়ে দিয়েন। আর আমার গুলো আমার মেয়ে দুইটার জন্য বাবা মায়ের কাছে রেখে দিয়েন।

মাইসা ও আরিসা কে হাফিজি লাইনে পড়ানোর চেষ্টা কইরেন। আর ওরা না চাইলে জোর কইরোন না, ওদের স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দিও। ওদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েন না।, আমার মতো হতভাগ্যি এই দুনিয়ায় যেন আর না জন্মায় এই প্রার্থনা করি আল্লাহর কাছে। সবাই আমার মাইসা আরিসা কে খেয়াল রাইখো গো।

ভালো থেকো সবাই, আল্লাহ হাফেজ।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.