ব্যাটিং ব্যর্থতায় শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশের পরাজয়।

৬৭

নিজস্ব প্রতিবেদক,বশির উদ্দিন আহমেদ।

আজ কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলায় বাংলাদেশ চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত যথাযথ এটা বোলাররা প্রমাণ করলেও আবারো বাজে ব্যাটিং এর অপরুপ প্রর্দশনী দেখিয়েছে বাংলাদেশ।এক তৌহিদ হৃদয় ছাড়া বাকি সব ব্যাটসম্যান ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ।

এত বছর ধরে এত ক্রিকেট খেলে মাত্র একজন ব্যাটসম্যান ছাড়া বাকিদের ব্যর্থতা সত্যি‌ই পীড়াদায়ক।এত চমৎকার পিচে এত বাজে ব্যাটিং অবাক করার মতোই ।আজকেও টপ‌অর্ডার যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তাতে করে দলের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং যে আশার আলো জ্বেলে ছিল বাংলাদেশের শিবিরে তা ব্যাটিং ব্যর্থতায় কর্পূরের মতো উড়ে যায় ।এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব কাপের আসরে নিজেদের প্রমাণের ভিত্তি গড়বে এখন শুধু এটাই প্রত্যাশা।

টসে জিতে বাংলাদেশ বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ।গত ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশ এমনিতেই ব্যাকফুটে চলে গেছে তাই আজ পিচের কন্ডিশন বিবেচনায় আফিফ হোসেনের বদলে বাঁ হাতি অফ স্পিনার নাসুম আহমেদকে একাদশে জায়গা করে দেয়া হয় ।নাসুম আহমেদ উইকেট না পেলেও দশ ওভারে মাত্র ৩১ রান দিয়ে শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানদের রানের গতিকে শ্লোথ করতে সাহায্য করেছেন ।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাসকিন ১০ ওভার বল করে ৬২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন । শরিফুল ৮ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট এবং হাসান মাহমুদ ৯ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। অর্থাৎ তিনজন পেসার নিয়েছেন ৮ উইকেট।আর একজন ব্যাটসম্যান রান আউট হয়েছেন। অর্থাৎ স্পিনারদের কার্যকারিতা শুধু রানের গতিকে শ্লোথ করার ছিল ।কেননা সাকিব ১০ ওভার বোলিং করে ৪৪ রান দিয়েছেন।কোন উইকেট পাননি।এই যখন সমীকরণ তখন স্বাভাবিক ভাবেই আশা করা গিয়েছিল আজকের ম্যাচ বাংলাদেশ জিতবে।কেননা শ্রীলংকার স্পিনের মান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো না ।অথচ হয়েছে তার উল্টো।

শ্রীলঙ্কার সাদিরা সামারবিক্রম ও উইকেট কিপার কুশল মেন্ডিস ছাড়া আর কেউই উল্লেখযোগ্য কোন রান করতে পারেনি । আজকে তৌহিদ হৃদয়ের সাথে বাংলাদেশের যে কোন একজন ব্যাটসম্যান যদি সহযোগিতা করতে পারতেন তবে হেসেখেলে‌ই বাংলাদেশ জিততো।
সাদিরা সামারবিক্রম ইনিংসের শেষ বলে তাসকিনের বলে ডিপ মিড‌ উইকেটে অতিরিক্ত খেলোয়াড় আফিফের হাতে ধরা পড়েন । ততক্ষণে তিনি দলের জন্য ৭২ বলে ৮ টি চার ও ২টি ছয়ের সাহায্যে মূল্যবান ৯৩ রান করেন । শরিফুলের বলে তাসকিনের হাতে ধরা পড়ার পূর্বে কুশল মেন্ডিস ৭৩ বলে ৬ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে দলকে মূল্যবান ৫০ রান দিয়ে যান।ফলে ৫০ ওভারে শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করে ২৫৭ রান ৯ উইকেট হারিয়ে।

আপাতদৃষ্টিতে সহজ টার্গেটে পরিণত হ‌ওয়া এই ম্যাচের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নাঈম শেখ ও মিরাজ চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার‌ই পরিচয় দিয়েছেন । মিরাজ শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ২৯ বলে ৪ টি চারের সাহায্যে ২৮ রান সংগ্রহ করেন।রানের জন্য ধুঁকতে থাকা নাঈম শানাকার বলে খেলবেন কি খেলবেন না এই করতে করতে ব্যাটের কানায় লেগে উঁচু ক্যাচে পরিণত করেন যা ধরতে উইকেট কিপার কুশল মেন্ডিস কে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি।আর ইনজুরি থেকে ফিরে লিটন কুমার তার ছন্দ পেতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পেতে চেষ্টা করছেন আর তাই ওয়েললাগের বল আলতো ছোঁয়াতে উইকেট কিপার কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন।চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব পাথিরানার উইকেটের বাইরের বলকে খোঁচা দিয়ে কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন।বিপদের সময় যার উপর সবচেয়ে নির্ভর করে দল সেই মুশফিকুর রহিম ও আলতো শর্ট খেলে মিড অফে বাজিথার হাতে ধরা পড়েন আর মূলত তখনই বাংলাদেশ খেলা থেকে ছিটকে যায়।

কিন্তু তৌহিদ হৃদয় যে সাহসীকতা নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তার যোগ্য সংগী অবশ্যই শামীম হোসেনের হ‌ওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শামীম বরাবরের মতো আজও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।শামীম এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিয়ে দলের সর্বনাশ ডেকে আনেন। উদীয়মান এই খেলোয়াড়রা যদি এই সব মূহুর্তে দলকে সাপোর্ট করতে না পারে তা দলের জন্য দুর্ভাগ্যজনক‌ই বলা চলে ।

তৌহিদ হৃদয় যে আশার আলো জ্বেলে ছিল তা নিভে যায় থেকসানের খাটো লেন্থের বলে ঠিক মতো ব্যাট নিতে পারার কারণে। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি এলবিডব্লিউর ফাঁদে পা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।দলের জন্য আশার প্রদীপ জ্বালানো তৌহিদ হৃদয় ৯৭ বলে ৭ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে ৮২ রান করেন। তৌহিদ হৃদয়ের আউটের পর পর‌ই দলের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।যদি শেষ দিকে নাসুম , শরিফুল ও হাসান মাহমুদরা চেষ্টা করেছেন তবে সে‌ই চেষ্টা জয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না ।তাই ২১ রানে‌ পরাজয় নিয়ে বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে ।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে থেকসান ৯ ওভারে ৬৯ রান ,শানাকা ৯ ওভারে ২৮ রান ও‌ পাথিরানা ৯.১ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৩ টি করে উইকেট পান।

সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হয়েছেন শ্রীলংকার সাদিরা সামারবিক্রমা ।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.