ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং শিশুর মানুষিক বিকাশ…

২২

লেখক ও বিশ্লেষক:
মো: সালেহীন ফেরদৌস
সহকারী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ-
ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

গত দুইদিন আগে দেশের সবথেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা থেকে আবার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে শুরু করেছে।
লোডশেডিং অনেকটাই কমে গিয়েছে।
তারও একমাস আগে ভারত থেকে আদানীর বিদ্যুৎ এসেছে দেশে।
এই দুই জায়গা থেকে বিদ্যুৎ আসার আগে গত দেড় মাস কি পরিমাণ ভয়াবহ লোডশেডিং এর কবলে পড়েছিল দেশ,আমরা সকলেই জানি। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় লোডশেডিং তাও একটু সহনীয় ছিলো। কিন্তু ঢাকার বাইরের অবস্থা ছিলো ভয়াবহ। এরই মাঝে ফেসবুকে বেশ কিছদিন ট্রোল ছিলো এই কথাটা,”কারেন্ট এইখানে যায় না,মাঝে মাঝে আসে।”
এই ঘটনার উল্লেখ করলাম কারণ কারেন্ট এর সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইস এর বেশ একটা যোগসূত্র আছে।আমাদের যাদের জন্ম ৮০ এর দশকে,তারা কারেন্ট গেলে একটা বেশ সুন্দর সময় পার করতাম। তখন এতো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ছিলো না। ছিলোনা ইউটিউব, ফেসবুক অথবা টিকটকের মত সোশ্যাল মিডিয়ার আধিক্য। আমাদের যুগের বিনোদন বলতে ছিলো কেবল বিটিভি। বিকেলে বাসায় সামনের উঠানে পাড়ার ছেলেমেয়েরা একসাথে খেলতে নামতো। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পড়া লেখায় মন দিতেই হতো। আজকাল এগুলা আর দেখা যায় না। সেইদিন ইউটিউব দেখছিলাম। এক বছরের ছোট বাচ্চা ঘুমের মাঝেও মোবাইল টেপার মতো হাত নাড়ছে। আজকাল ছোট বাচ্চাদের খাবার সময় মায়েরা হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেয়।মোবাইল না হাতে থাকলে তারা খেতে চায় না,এমনকি ঘুমাতেও চায় না।
একদিন কথা হচ্ছিলো আমার ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রধান নাজরিমা সুলাতানার সাথে। উনার ছেলে ক্লাস ফাইভে পড়ে।উনি ছুটি নিচ্ছেন দুইদিনের।কি কারণে ছুটি নিচ্ছেন,জানতে চাইলে উনি বলেন,”ছেলের পরীক্ষা।”
বাসায় না থাকলে ছেলে পড়তে চায় না।
আমার ইউনিভার্সিটিতে শুক্রবার ক্লাস নিতে হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। শুক্রবারদিন চাকুরীজীবিরা ক্লাস করতে আসে। তাই শুক্রবারদিন প্রেশার একটু বেশীই থাকে। একদিন শুক্রবার কলিগ নাজরিমা সুলতানার ছেলে সারাদিন মোবাইল টিপে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিলো-এটাই বললেন তিনি।
আজকাল আমাদের শিশুদের মোবাইল আসক্তি অথবা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আসক্তি অতিরিক্ত পরিমানে বেড়েছে। খেলাধুলার জায়গা নেই একে,তার উপর এই ডিভাইস আসক্তি মানুষিক বিকাশের উপর চরম প্রভাব বিস্তার করছে। একটা সময় সামাজিক বন্ধন বেশ গভীর ছিলো আমাদের সময়। এই সামাজিক বন্ধন এতোটাই ক্ষীণ এখন,পরিবারে কার সাথে কি বন্ধন-এটাই মাঝে মাঝে আমরা শিক্ষা দিতে পারি না আমাদের শিশুদের। যার ফলে এমন একটা জেনারেশন গড়ে উঠছে,যারা সবদিক দিয়েই নাজুক। আমার মাঝে মাঝে ভয় হয়,এতো এতো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এর ভিড়ে আমরা একটা মূর্খ জাতি গড়ে তুলছি না তো?
পাঠকের কাছেই প্রশ্ন রেখে গেলাম।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.