ম্যাচ সমীকরনঃ বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়া |

৪৮

মোঃ নূর আলম

o ১৫ই সেপ্টেম্বর, শ্রীলংকার রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়ার মধ্যকার ডে-নাইট ম্যাচ। এটি ছিলো এশিয়া কাপের ১৬ তম আসর। আর বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়ার এই ম্যাচটি ছিলো এই আসরের ১২ তম ম্যাচ, এবং সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ। টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বিবেচনায়ন এই ম্যাচের কোন গুরুত্বই ছিলো না। কারন প্রথম দল হিসেবে ইন্ডিয়া আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। পাকিস্থানকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে শ্রীলংকাও ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ বনাম ইন্ডিয়ার এ ম্যাচটি ছিলো সিডিউল ম্যাচ। নিয়ম রক্ষার এই ম্যাচেই দর্শক উপভোগ করলো দুর্দান্ত এক ম্যাচ, উত্তেজনা ছিলো পুরো ম্যাচ জুড়েই। এই ম্যাচে লক্ষনীয়ভাবে দু’দলেই দেখা গেছে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন।

o সুপার ফোরের শেষ এই ম্যাচ নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হলেও দু’দলের জন্যই ছিলো মর্যাদার লড়াই।ক্রিকেট বিশ্বে ইন্ডিয়া বর্তমান এমন একটি দল, যাকে হারানো যে কোন দলের জন্যই কঠিন। আর বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার ম্যাচ সব সময়েই প্রতিদ্বন্দ্বীতামুলক হয়। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যেহেতু একমাত্র আফগানিস্তানের সাথে জয় লাভ করেছে, তাই এই ম্যাচে জয় বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করনে নিশ্চয়ই। তারপরও টুর্নামেন্টে দু’দলেরই যেহেতু এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি বা হারাবার ভয় ছিলো না, তাই দু’দলই একাদশে এনেছে বেশ কিছু পরিবর্তন।

o বাংলাদেশের একাদশঃ এ দিন বাংলাদেশের একাদশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। ওপেনার নাইম শেখ এর যায়গায় তানজিদ হাসান তামিমের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ আসরে প্রথম বারের মত সুযোগ পান এনামুল হক বিজয়। স্থান পান শেখ মেহেদি, স্পিন বোলার – লোয়ার অর্ডার ব্যটার। এবং অন্তজাতীক ক্রিকেটে ডেব্যু হয় তানজিদ হাসান সাকিবের, তিনি মুলত একজন পেস বোলার এবং লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করার সামর্থ রাখেন।

বিশ্রামে ছিলেন – তাসকিন, শরিফুল, হাসান মাহমুদ। পারিবারিক সঙ্গত কারনেই মুশফিক ছুটিতে আছেন, দ্বিতীয়বারের মত সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি।

o ইন্ডিয়ার একাদশঃ বাংলাদেশের মত ইন্ডিয়াও এ দিনে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। উল্লখেযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে ভিরাট কোহলি, এ ম্যাচে একাদশে ছিলেন না কোহলি। ছিলেন না হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদিপ ইয়াদব, বুমরাহ, এবং সিরাজ। অন্তজাতিক ক্রিকেটে ড্যেবু করেন থিলক ভারমা।

o টস: ইন্ডিয়া টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করেন। জবাবে ইন্ডিয়া ব্যাট করতে নেমে ৪৯ .৫ ওভার ব্যাট করে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ২৫৯ রান করে। ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৬ রানে জয় লাভ করে। এই জয় এশিয়া কাপে, ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম ইন্ডিয়াকে হারিয়েছিলো ২০১২ সালে দেশের মাটিতে। দীর্ঘ ১১ বছর পর এলো দ্বিতীয় জয়। ২০১২ সালের সেই দলে বাংলাদেশকে নেত্রীত্ব দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম।

o  পাওয়ার প্লেঃ প্রথম পাওয়ার প্লে’তে (১ থেকে ১০ ওভার) বাংলাদেশের রান ছিলো ৪৪ রান ৩ উইকেটের বিনিময়ে। ১৩ রানে প্রথম উইকেট, ১৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট, ২৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় প্রথম পাওয়ার প্লের মধ্যেই। এরপর চতুর্থ উইকেটের পতন হয় দলীয় ৫৯ রানের মাথায়। লিটন দাস, তানজিদ তামিম, আনামুল বিজয় এবং মেহেদি মিরাজ এই চার উইকেট পতনের পর ক্যাপ্টেন সাকিব এবং তৌহিদ হৃদয় নান্দনিক এক জুটি উপহার দেন। ১১৫ বল খেলে ১০১ রানের এক পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে একটা সন্মানজনক স্কোরের দিকে যাবার পথ সুগম করে দেন। সাকিব ব্যাক্তিগত ৮০ রান করে আউট হবার পর হৃদয় নাসুমকে সাথে নিয়ে ৪৩ বলে ৩২ রানের একটা পার্টনারশিপ করে। তৌহিদ হ্রদয় ব্যাক্তিগত ৫৪ রান করে আউট হলে নাসুম শেখ মেহেদিকে নিয়ে ৩৬ বলে ৪৫ রানের এক অসাধারন পার্টনারশিপ করেন। এরপর নাসুম ব্যাক্তিগত ৪৪ রান করে আউট হলে শেখ মেহেদি, তানজিম সাকিবকে নিয়ে ১৬ বলে ২৭ রানের পার্টনারশিপ করেন। আর এই পার্টনারশিপগুলোর উপর ভর করে বাংলাদেশ একটা ফাইটিং স্কোরে পৌছায়।

পক্ষান্তরে ইন্ডিয়া প্রথম পাওয়ার প্লেতে করে ৪২ রান ২ উইকেটের বিনিময়ে। প্রথম উইকেট ২ রানে, দ্বিতীয় উইকেট ১৭ রানে, তৃতীয় উইকেট ৭৪ রানে, চতুর্থ উইকেট ৯৪ রানে। প্রথম চার উইকেটের বিশ্লেষনে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের চাইতে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেটের পতন হয় ১৬০ রানের মাথায়, পক্ষান্তরে ইন্ডিয়ার পঞ্চম উইকেট পতন হয় ১৩৯ রানের মাথায়। এখানে এসে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার পার্থক্য হয়ে যায়। সাকিব যেমন হৃদয়কে সাথে নিয়ে ১০১ রানের একটা পার্টনারশিপ করেন। পক্ষান্তরে সুবমান গিল ব্যাক্তিগত ১২১ রানের (১৩৩ বলে) অনবদ্য এক ইনিংস উপহার দেন ইন্ডিয়া দলের জন্য। কিন্ত এখানে লক্ষনিয় সাকিব এবং হৃদয় এর মত বড় জুটি কিন্ত করতে পারেন নি গিল। সাকিব-হৃদয়ের মত ১০১ রানের জুটি করতে না পারলেও সুবমান গিল উল্লেখযোগ্য বেশকিছু জুটি করেছেন। সুবমান গিলের উল্লেখযোগ্য পার্টনারশিপ- থিলক ভারমা সাথে ১৫ রানের, কে,এল রাহুলের সাথে ৫৭ রানের, ইসান কিসানের সাথে ২০ রানের, সুরিয়াকুমার ইয়াদভ সাথে ৪৫ রানের, রবিন্দ্রু জাদেজার সাথে ৩১ রানের, আক্সার পাতেলের সাথে ৩৯ রানের পার্টনারশিপ করেন। এতগুলো পার্টনারশিপ একটা ম্যাচের ফলাফল পক্ষে আনার জন্য যতেষ্ট মনে হলেও ফলাফল কিন্তু ইন্ডিয়ার পক্ষে যায়নি। কারন বাংলাদেশের ৮, ৯, ১০ নাম্বার ব্যাটার যে অনুপাতে রান করেছে, ইন্ডিয়ার ৮, ৯, ১০ নাম্বার ব্যাটার সেই অনুপাতে রান করতে পারেনি। বাংলাদেশের ৮,৯,১০ অর্থাৎ নাসুম-৪৪ (৪৫ বল), শেখ মেহেদি-২৯ (২৩ বল), তানজিম সাকিব-১৪ (৮ বল)। এই তিন ব্যটারের মোট রান ৮৭। পক্ষান্তরে ইন্ডিয়ার ৮,৯,১০ অর্থাৎ আক্সার প্যাটেল ৪২ (৩৪ বল), সারদুল ঠাকুর ১১ (১৩ বল) এবং মোহাম্মদ সামি ৬ (৬ বল)। এই তিন ব্যাটারের মোট রান ৫৯। ঠিক এই যায়গাতেই বাংলাদেশের কাছে পিছিয়ে গেছে ইন্ডিয়া। এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২৮ রানের ব্যাবধান এখানে।

দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে’তে (১১ থেকে ৪০ ওভার) বাংলাদেশের সংরহ ১৪৪ রান, এ সময় বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে’তে ইন্ডিয়ার হারায় ৪ উইকেট এবং রান করে ১৪৬। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে’তে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের চাইতে ২ রান এগিয়ে থাকলেও উইকেট কিন্তু একটা বেশি হারায় তারা।

o বাংলাদেশ একাদশের যোগ-বিয়োগঃ এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বারের মত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি তানজিদ তামিম। দুই ম্যাচে তার রান (০ এবং ১৩) মোট ১৩। চার ম্যাচে ৮৫ রান করা আরেক ওপেনার নাইম শেখ এই ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন। এই টুর্নামেন্টে প্রথম সুয়োগ পাওয়া আনামুল বিজয় নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। ৪ রন (১১ বলে) করে অউট হয়ে যান এই ব্যাটার। বরাবরের মত এ ম্যাচেও ফ্লপ শামিম পাটোয়ারি। এ ম্যাচে তিনি করেন ১ রান (৫ বলে)। চার ম্যাচে তার রান ৩৩। শামিম পাটোয়ারির এই যায়গায় আফিফের অন্তুর্ভুক্তি হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। খুব ভালো ফর্মে নেই লিটন কুমার দাস। রানের খাতা না খুলেই সাজ ঘড়ে ফিরে যান এই স্টাইলিস্ট ব্যাটার। এই টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তিন ম্যাচে রান ৩১। লিটন এর মত ব্যাটারের কাছ থেকে প্রত্যাসা অবশ্যই অনেক বেশী। একটা স্টাম্পিং ও মিস করেছেন এ দিনে, যা ছিলো দৃস্টিকটু। অন্তজাতীক অঙ্গনে একটা স্টাম্পিং, একটা ক্যাচ কিম্বা একটা রান আউট মিস করলে এর খেসারত অনেক বড় করে দিলে হয়। তৌহিদ হৃদয় খুব ভালো খেলছেন। ধারাবাহিকতা আছে। কমিট্মেন্ট আছে, স্টাইলিস্ট এবং রান করার ক্ষুধা আছে। এই টুর্নামেন্টের ৫ ম্যাচে তার রান ১৫৮ সেই সাখ্য দেয়। ক্যাপ্টেন সাকিব এর কথা না বললেই নয়। ব্যাট হাতে হরেছেন ৮০ রান। বল হাতে নিয়েছেন মুল্যবান একটি উইকেট, সুরিয়াকুমার ইয়াদব বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান সাকিব। এই দিন ক্যাপ্টেন হিসেবেও ছিলেন অনবদ্য এক সাকিব। তাই তিনি হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

o বোলিং এর দিকে তাকাইঃ এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে থেকে একজনের নাম বলা খুব মুশকিল। অন্তত তিনজন বোলার এই ম্যাচ জয়ের জন্য ভুমিকা রেখেছেন। ড্যেবুটেন্ট বোলার তানজিম সাকিব ওভারের প্রথম বলেই রোহিত সর্মার উইকেট নিয়ে অন্তজাতিক ম্যাচে যাত্রা শুরু করেন। তৃতীয় ওভারে এসে তুলে নান থিলক ভার্মার উইকেট। এরপর বলতে হয় মুস্তাফিজের নাম, তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। মূল্যবান তিন উইকেট। মুস্তাফিজের শিকার হন রাভিন্দু জাদেজা, সারদুল ঠাকুর এবং আক্সার প্যাটেল। শেখ মাহাদি নিয়েছেন ২ উইকেট। বড় বড় দুই উইকেট। কে,এল রাহুল এবং এই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সুবমান গিল এর উইকেট।

o এই ম্যাচ বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে ৬ রানে। এই জয় আসন্য বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশকে চাংগা রাখবে নিঃসন্দেহে। এশিয়া কাপের এই ম্যাচগুলো এবং আসন্য নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের ম্যাচগুলো এনালাইসিস করে বাংলাদেশ নিশ্চই ভালো একটা দল পেয়ে যাবে আসন্য বিশ্বকাপের জন্য। টিম বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.