কক্সবাজারে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদ’সহ ৬ জন র‌্যাবের হাতে আটক |

১৪

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, কক্সবাজার।

আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এর আরসা’র সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ০৬ জন আরসা সদস্যকে কক্সবাজারের
টেকনাফ থানা বাহারছড়া-শ্যামলাপুর এলাকার গহীন পাহাড়ী এলাকা থেকে দেশী ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী, জালনোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মানবপাচারকারী, প্রতারক, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের শরণার্থী শিবির ও পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক কোন্দলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, শরণার্থী শিবির ও এর সংলগ্ন গহীন পার্বত্য এলাকাসমূহে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা)’সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ সকল খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে; যার কারণে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় এলাকাবাসীকে সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত ঘটনাসমূহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। র‌্যাব এ সকল সন্ত্রাসী গ্রুপ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া-শ্যামলাপুরের গহীন পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার ১। হাফেজ নুর মোহাম্মদ (২৮), পিতাঃ দিল মোহাম্মদ’কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাহারছড়া ও শ্যামলাপুরের বিভিন্ন এলাকা হতে আরসা’র অন্যান্য সন্ত্রাসী ২। মোহাম্মদ হোসেন জোহার (৩০), পিতাঃ ধলা মিয়া ও ৩। মোঃ ফারুক @ হারেস (২৩), পিতাঃ ওবায়দুর রহমান, ৪। মনির আহাম্মদ (৩৬), পিতাঃ জমলুক, ৫। নূর ইসলাম (২৯), পিতাঃ অলি আহাম্মদ, ৬। মোঃ ইয়াছিন (২১), পিতাঃ হোসেন’দেরকে গ্রেফতার করা হয়। ০১টি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ০১টি বিদেশী রিভলবার, ০১টি শর্টগান, ০৪টি দেশীয় এলজি, ০৩টি দেশীয় রামদা ও গোলাবরুদসহ নগদ ৭০,০০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক এবং পাশ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এর শীর্ষ নেতা ও সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতারকৃত হাফেজ নুর মোহাম্মদ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প অন্যতম এর সামরিক কমান্ডার হিসেবে ‘আরসা’র নেতৃত্ব প্রদান করত। তার নেতৃত্বে ‘আরসা’র ৩০-৩৫ জন সদস্য কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প ও তার পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তারা পাশ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত হাফেজ নুর মোহাম্মদ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় জনগণের নিকট হতে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতো। চাঁদার অর্থ না পেলে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা ভিকটিমকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক বাংলাদেশে পরিবহণ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও সংলগ্ন এলাকাসমূহে সংরক্ষণের কাজে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যরা সহযোগিতা করতো বলে জানা যায়। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে পাহাড়ী গহীন জঙ্গলে আত্মগোপনে চলে যেত। তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতো বা অপহরণের পর লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। তারা বেশ কয়েকদিন ধরে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে টেকনাফ থানাধীন শ্যামলাপুরে অবস্থান করছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত হাফেজ নুর মোহাম্মদ (২৯) জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। ২০১৬ সালে সে ‘আরসা’ সদস্য আরিফ উদ্দিনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘আরসা’ এ যোগ দেয়। পরবর্তীতে সে সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব পায়। আরসার সামরিক শাখার প্রধান ওস্তাদ খালেদের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা ও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। সে কুংফুতে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত ও বিস্ফোরক তৈরীতে পারদর্শী ছিল। সে আরসা’র অন্যান্য সদস্যদের কুংফু প্রশিক্ষণ দিত। সে আরসা’র সামরিক শাখার প্রধান ওস্তাদ খালেদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ ও আরসা’র মূল সংগঠক আরিফ উদ্দিন, হাসেম কুইল্লা এর কাছ থেকে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষণ নেয়। পরবর্তীতে সে ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-৮ এ অবস্থান করতে থাকে। প্রাথমিকভাবে সে ক্যাম্প-৮ এ আরসার হেড জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পায়।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.