এই সরকারকে বিদায় করে‌ই দেশনেত্রীকে মুক্ত করা হবে এবং বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে…মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২৪

বশির উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা।

আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে অনশন কর্মসূচি পালিত হয় ।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি জনাব আব্দুস সালাম এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন । পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর এর সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা লিটন মাহমুদ। বিএনপির ছাড়াও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আজকের অনশন কর্মসূচি পালন করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গনমানুষের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ অসুস্থ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।অথচ এই অবৈধ সরকার তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে রাজি নয় ।অথচ তাঁর চিকিৎসকরা বার বার করে বলছেন যে গত দুই বছর ধরেই তিনি জটিল রোগে ভুগছেন।তাই তাঁকে সুস্থ করতে হলে দেশের বাইরে কোন ভালো হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।অথচ সরকার পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার মিশনে নেমেছে ।দেশের মানুষ সব বুঝে ।তাই যদি দেশনেত্রীর জীবনের উপর হুমকি আসে তবে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না ।

দেশনেত্রীর অপরাধ তিনি জনগনের স্বার্থের কথা চিন্তা করেন ।দেশের মানুষকে গনতন্ত্র দিয়েছেন ।দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি করেছেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারের আমলে দেশের মানুষ আজ বিপর্যস্ত।দেশের মানুষ আজ এই অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায় ।তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা।গরীব আরো গরীব হচ্ছে। মধ্যবিত্ত হারিয়ে গেছে তারা তিলে তিলে মরছে । শুধু আওয়ামী লুটপাটের সংগীরা আজ ভালো আছে । তিনি বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন,তলে তলে সব ঠিক হয়ে গেছে ।আসলে তলে তলে কিছুই ঠিক হয় নি ।এই হায়েনা সরকারের হাত থেকে বাঁচতে হলে লড়তে হবে। এবং এই লড়াইয়ে জিততে হবে আজকের এই অনশন কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশার লোকজন শুধু সংহতি প্রকাশ করেনি ।তারা এই অবৈধ ,তাঁবেদার, লুটেরা সরকারের বিদায় করবে এই প্রতিজ্ঞা ও করেছে । তিনি বলেন‌,যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটে তবে সরকার দায়ী থাকবে এবং এর বিচার এইদেশের মাটিতে অবশ্যই হবে ।

তিনি বলেন এই সরকারের কাছে আজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়‌ও নিরাপদ নয় । কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে অনেকেই আহত করেছে।আর এই হামলার সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত।আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি বলেই হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে আমরা কোন কর্মসূচি রাখি নাই ।যাতে হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করতে পারে । তিনি রানা দাশগুপ্তের বক্তব্য থেকে বলেন, সরকার চাইলে পূজা উৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে না চাইলে অশান্তি হবে । কাজেই এই সরকার পরিকল্পিতভাবে হিন্দুসহ সকল সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে বিএনপির উপর দায় চাপায় ।তাই সরকার কে আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না ।আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়‌ও বুঝতে পেরেছে আসলে তাদের শত্রু কে ।কারা তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট করেছে‌।

অনশন কর্মসূচিতে বিএনপির ব্যাপক নেতাকর্মীরা অংশ নেন । মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা পার্টি অফিসের সামনের মঞ্চে বসে অনশন কর্মসূচি পালন করেন ।আর দলীয় নেতাকর্মীরা রাজপথে অবস্থান নেন ।এই অনশন কর্মসূচিতে বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়,ডঃ ম‌ঈন খাঁন, নজরুল ইসলাম খান,বেগম সেলিমা রহমান। ভাইস প্রেসিডেন্ট বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন ফারুক, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক জনাব মীর সরফত আলী সপু, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক জনাব আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ, পারভেজ রেজা । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফয়েজ শাকিল আশরাফ উদ্দিন আহমেদ রুবেল, স‌ওগাতুল সাগীর, বারেক ইকবাল , সাইফুল সিকদার সহ আরো অনেক‌ই।

সকাল ১১থেকে শুরু হ‌ওয়া তিন ঘণ্টার এই অনশন ভাঙান লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান ডঃ অলি আহমেদ ,ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। এছাড়াও এই অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল ইব্রাহিম, মাহমুদুর রহমান মান্না।

আজকের এই অনশন কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশার লোকজনের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল।ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, আইনজীবী, অভিনেতা, অভিনেত্রী,গায়ক গায়িকা সহ সমাজের বিভিন্ন পেশার লোকজন।
এছাড়া আজ সকালে পিজি হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ পনের বছর পর বিএনপির অনুমোদিত ডাক্তারদের সংগঠন ড্যাব মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ।এই মানব বন্ধন কর্মসূচী থেকে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয় ।এখানে বিভিন্ন চিকিৎসক অভিযোগ করেন ,দেশে যেহেতু লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্হা নেই তাই অবিলম্বে নেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।পরে মিছিল সহকারে তাঁরা বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন ।

মির্জা আব্বাস: মির্জা আব্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন,আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করছি ।এটা একটা অমানবিক সরকার।এমন সব কথা এরা বলে যা কোন ভদ্র মহিলা বলতে পারে না ।তিনি সুস্থ মস্তিষ্কে কথা বলে কিনা সন্দেহ আছে ।আমি ঘৃণা ভরে হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাখান করছি ।এই দেশে খালেদা জিয়া গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন । বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগকে পুনঃজন্ম দিয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান।আজ এই দেশে গনতন্ত্র নেই । মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই । তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধীতা করছেন অথচ আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে‌ই ক্ষমতায় এসেছেন ।একটা কুলাঙ্গার তার রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে ।বেগম জিয়াকে তাঁর ক্যান্টনম্যান্টের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন‌,তার মানে বিচারপতিদের রায় ছিল সাজানো ।তাই এই সরকারের পদত্যাগ না হ‌ওয়া পর্যন্ত সবাইকে মাঠে থাকতে হবে ।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়:এক দাবি হাসিনার নিঃশর্ত পদত্যাগ।দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভোমত্ব আজ হুমকির মুখে।তাই আমরা দেশ‌ নেত্রীর মুক্তি এই সরকারের কাছে চাই না ।এই সরকারের পতন ঘটিয়েই আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করবো‌।আপনারা যে লুটপাট করেছেন তার হিসাব দিতে হবে ।যদি দেশনেত্রীর কিছু হয় তবে আপনাদের মরোনত্তোর বিচার হবে ।কেউ রেহাই পাবেনা না ।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার কায়সার কামাল বলেন‌,যদি নেত্রীর কোন দূর্ঘটনা ঘটে তবে প্রধান আসামি হবে হাসিনা,দুই নম্বর আসামি হবে আনিসুল হক আর তিন নম্বর আসামি হবে এটর্নিজেনারেল আমিন।এদের নামে অবশ্যই মামলা হবে এবং বিচার‌ও এই দেশের মাটিতেই হবে‌।কোন‌ রেহাই দেয়া হবে না ।

অনশন কর্মসূচি শেষে আগামী ১৮ তারিখের সমাবেশে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে যার যার এলাকায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। অনশন কর্মসূচি উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.