আজ মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশীর ১০৫তম জন্মদিন।

১৯

মোঃ শান্ত মিয়া, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।

ব্রিটিশ বিরোধী, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দেশবীর মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশী ১৯২০ সালের ২০ শে জানুয়ারী ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বরাইদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ব্রিটিশ বিরোধী, প্রয়াত আব্দুল খান। ২য় পূর্ব পুরুষ ভিরা খান, ৩য় পূর্ব পুরুষ হোনামদি খান, ৪র্থ পূর্ব পুরুষ মাদারী খান, ৫ম পূর্ব পুরুষ খানেরবাপ, ৬ষ্ঠ পূর্ব পুরুষ মাহাদী সাহেব।

কথিত ইতিহাস অনুযায়ী, মাহাদী সাহেব নবাব সিরাজদৌলার পক্ষ নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৭৫৭ সালে যুদ্ধ করে ছিলেন। শিক্ষা জীবনঃ বাদেশী তার উপজেলা ভালুকার মেদিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম ও ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুর হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। ছাত্র জীবনে মুসলিম লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কর্ম জীবনঃ লেখাপড়া শেষ করে- (০১) ব্রিটিশ আর্মিতে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। (০২) এরপর জোদ্দারী করেন। (০৩) প্রায় ৪০ বছর ব্যবসা করেন ঢাকা-ময়মনসিংহে। সর্বশেষ আবার জোদ্দারি করেন।

ভাষা আন্দোলনঃ অধ্যয়নকালে পরিচিত হন- লেখক আবুল মনসুর আহম্মেদের সাথে। ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন – তমদ্দুন মজলিস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সভাপতিঃ হন লেখক আবুল মনসুর আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক হন মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশী। ময়মনসিংহ অঞ্চলে আবুল মনসুর আহম্মেদ ও মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশীর নেতৃত্বেই শুরুহয়- ভাষা আন্দোলন। পরে এরসাথে যুক্ত হন অন্যান্যরা। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বরে ময়মনসিংহ বিপিনপার্কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেনঃ আবুল মনসুর আহমেদ। ভাষা আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য ময়মনসিংহে গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম কমিটি ও পরে সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি দুই কমিটিতেই তিনি সহ- সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে বাদেশী ও কমিটির নেতাদের নেতৃত্বে বহুবার এই বিপিন পার্কে মিটিং মিছিল হয়েছে। মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশী কেন্দ্রীয় তমদ্দুন মজলিস ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সর্ব দলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতিও হয়ে ছিলেন।

বাদেশীর নেতৃত্বে তার নিজ এলাকা ভালুকায়ও মিটিং মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদেশী ব্যবসা করতেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় পাকিস্তান সরকারের বিষ চোখে পরেন বাদেশী। পরে তাকে ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে বহু ঝামেলা পোহাতে হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে সংযুক্ত করার পরে তার নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধঃ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুহলে, তিনি ময়মনসিংহের মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ এর সাথে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ এর নেতৃত্বে ৪৫০০ সৈনিকের এক বিশাল মুক্তিবাহিনী (আফসার বাহিনী) গড়েউঠে। মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ- উক্ত বাহিনী উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন- মোঃ হোছেন আলী খান বাদেশীকে। তিনি মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ ও বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের সঙ্গীহয়ে বহু যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করেন।

আফসার বাহিনীর যুদ্ধ এলাকা ছিল- ময়মনসিংহ সদর দক্ষিণ ও ঢাকা সদর উত্তর এলাকা। বিশাল বাহিনী পরিচালনায় বাদেশীর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।রাজনীতিঃ বাদেশী সাহেব ১৯৪৯ সালে মাওঃ ভাষানীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগদান করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ- সভাপতি, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৯ সালের আগে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

অন্যান্য আন্দোলনঃ তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয়দফা আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান ও ১৮৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন।

স্বীকৃতিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হেলাল উদ্দিন তাকে বাদেশী ও দেশবীর উপাধিতে ভূষিত করেন। তমদ্দুন মজলিস এর মাতৃভাষা পদক-২০২৩ পেয়েছেন তিনি। বহু সংগঠন ও ব্যক্তি কর্তৃক সম্মাননা পত্র পেয়েছেন তিনি।

আজ বাদেশীর নিজস্ব ফেইসবুকে তিনি পোস্ট করেন, আমার জন্মদিনে প্রত্যাশা- জাতিসংঘ- পৃথিবীর সকল মানুষের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি আজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.