অষ্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের শুভসূচনা।

৫২

বশির উদ্দিন আহমেদ,ঢাকা।

সমীকরণ :

টস: অষ্ট্রেলিয়া (ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন‌),
অষ্ট্রেলিয়া:১৯৯(৪৯.৩ ওভার),
ভারত:২০১/৪ (৪১.২ ওভার),
ফলাফল:ভারত ৬ উইকেটে জয়ী,
সেরা খেলোয়াড়:কেএল রাহুল।

আজ বিশ্ব কাপের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হট ফেভারিট ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।চেন্নাইয়ের এই মাঠে অষ্ট্রেলিয়া এর আগে বিশ্ব কাপের তিনটি ম্যাচ খেলেছে ।যেখানে তিনটিতেই অষ্ট্রলিয়া জয়ী।গত বিশ্বকাপের পর ভারত অস্ট্রেলিয়া ১২ বার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে যেখানে ৬ বার করে উভয় দল জয়ী হয়েছে।চেন্নাই এই ষ্টেডিয়ামের পিচ অতটা ব্যাটিং সহায়ক নয়।২২৭ থেকে ২৯০ রান জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বলে অভিজ্ঞদের ধারনা ।

পিচ রিপোর্টে বলা হয়েছে ,পিচ একটু স্লো‌ এবং পেসারদের জন্য খুব একটা সুবিধাজনক হবে না । ভারত তিনজন এবং অষ্ট্রেলিয়া দুই জন স্পিনার নিয়ে খেলছে ।এখানে মজার একটা তথ্য আছে এই মাঠেই ২০১১ বিশ্ব কাপের ম্যাচে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন ডেভিড বুন ও জিওফ মার্শ।আর আজ উদ্বোধন করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার আর জিওফ মার্শ এর ছেলে মিচেল মার্শ।

বিশ্বকাপের ৬ষ্ঠ ম্যাচে টসে জিতে অষ্ট্রেলিয়া ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।এই প্রথম এবারের বিশ্ব কাপে টসে জিতে কোন দল প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলো‌।এই সিদ্ধান্ত যথার্থতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অষ্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।শুরুতে বুমরাহ বলে মিচেল মার্শ স্লিপে বিরাট কোহলির দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন।ওয়ার্নার কুলদীপ যাদবের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫২ বলে ৬ টি চারের সাহায্যে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরেন।স্মিথ রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণীতে পরাস্ত হয়ে সরাসরি বোল্ড হলে অষ্ট্রেলিয়ার রানের চাকা থমকে দাঁড়ায়।স্মিথ ৭১ বলে ৫ টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়া লাবুশাংকে,ম্যাক্স‌ওয়েল, উইকেট কিপার কেরি ,গ্রীন , অধিনায়ক প্যাট কামিন্স কেউই বড় কোন স্কোর করতে না পারার কারনে অষ্ট্রেলিয়ার দলীয় সংগ্রহ তেমন একটা সমৃদ্ধ হতে পারে নি ।

ভারতীয় স্পিন বোলাররা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বেশ ভালো ভাবেই সম্পাদন করেছে বলা যায়। শুরুতেই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল এই পিচে যথেষ্ট টার্ণ থাকবে হয়েছে ও তাই । অষ্ট্রেলিয়ার‌ ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে এই পিচে । স্বাভাবিক কোন শর্টস খেলতে পারেননি অষ্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা।১৬৫ ‌রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর মিচেল স্টার্ক ও এডাম জাম্পা মিলে দলীয় সংগ্রহ বাড়াতে পুরো ওভার খেলার দিকে মনোযোগ দেন । কিন্তু পান্ডিয়া ও সিরাজ নীচের দুটি উইকেট ভাগাভাগি করে নিলে ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে অষ্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৯ রান।

ভারতীয় স্পিন ত্রয়ী অশ্বিন,যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেজা মিলে ৬ টি উইকেট নিয়েছেন।এর মধ্যে জাদেজা ১০ ওভারে ২ টি মেডেন সহ মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৩ টি উইকেট দখল করেন। অপরদিকে তিন পেসার বুমরাহ ২ টি ,সিরাজ ও পান্ডিয়া ১ টি করে উইকেট পান।
খেলার বিরতিতে রবীন্দ্র জাদেজা তার সাক্ষাৎকারে বলেন ,তিনি যেহেতু চেন্নাই সুপার কিংসের খেলোয়াড়, তাই পিচ সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা ছিল। তিনি বলেন,আমি আত্নবিশ্বাসী ছিলাম দুই তিনটে উইকেট পাব । তিনি তিন উইকেট পেয়েছেন।তিনি চেন্নাই এর দর্শকদের অভিনন্দন জানান মাঠে এসে দলকে সমর্থন দেয়ার জন্য।

২০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভারত মাত্র ২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায়।ঈশান কিষান মিচেল স্টার্ক এর প্রথম ওভারেই একটু শর্ট পিচ ধরনের বলে ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে ক্যামেরুন গ্রীনের হাতে ধরা পড়েন শূন্য রানে মাত্র ১ বল খেলে । ঈশান এর উইকেট প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মিচেল স্টার্ক বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম ৫০ উইকেটের দেখা পেলেন ।এর আগে এই রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিংগার ।অপর ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা হ্যাজেল উডের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৬ বলে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন।শ্রেয়াশ আইয়ার ৩ বলে শূন্য রানে ডেভিড ওয়ার্নার কাছে শর্ট কাভারে‌ ধরা পড়লে ২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত।প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে ফেরা ভারতের ইতিহাসে প্রথম ।

অষ্ট্রেলিয়ার সাফল্য বলতে প্রথম তিনজন ব্যাটসম্যানকে শূন্য রানে ফেরানো‌।এরপর অভিজ্ঞ ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুল সব শংকা দূরীভূত করে দেন। ভারতীয় শিবিরে যে ঘূর্ণিঝড় উঠেছিল সেই ঘূর্ণিঝড়কে পুরোপুরি ঠান্ডা করে দেন এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।তাদের লড়াকু ইনিংসের উপর ভর করে ভারত সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।যদিও বিরাট কোহলি ব্যক্তিগত ১২ রানের মাথায় জীবন ফিরে পান মিচেল মার্শের কল্যাণে।সেই বিরাট কোহলি ১১৬ বলে ৬ টি চারের সাহায্যে ৮৫ রান করে হ্যাজেল উডের বলে মিড উইকেটে লাবুশাংকের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন। ততক্ষণে দলের জন্য প্রয়োজনীয় কাজটুকু করে দিয়ে গেছেন ।

কোহলি ৭৫ বলে ৩ চারের সাহায্যে অর্ধশত রান করেন।অপর ব্যাটসম্যান রাহুল ৭২ বলে ৫টি চারের সাহায্যে অর্ধশত রান করেন এবং শেষ পর্যন্ত ১১৫ বলে ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীবেশে মাঠ ছাড়েন।বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুল চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২০০ বলে ১৫০ রান সংগ্রহ করেন।যা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৬৪ রানের এই জুটি ভাঙে কোহলির আউটের মাধ্যমে।হ্যাজেল উড ৯ ওভারে ১ টি মেডেন সহ ৩৮ রানে ৩ টি উইকেট দখল করেন।৯৭ রানের মূল্যবান ইনিংসের জন্য সেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছেন কেএল রাহুল।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.