বশির উদ্দিন আহমেদ,ঢাকা।
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।আজ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন ,আর পিছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই । মহাসমাবেশ থেকেই নতুন মেরুকরণ হবে ।তাই নেতাকর্মীদের আত্নবিশ্বাসের সহিত সামনের আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।তিনি বলেন, অনেক বাঁধা বিপত্তি আসবে, সেই সব বাঁধ বিপত্তি পেরিয়েই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।
মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে বলেন,পূজা উপলক্ষ্যে সরকার কে সময় দিলাম।এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিবে এই পূজার ছুটিতেই তারা পদত্যাগ করবে নাকি গণআন্দোলনে ভেসে যাবে । তিনি বলেন,দেশের জনগণ এখন আর এই ভোট চোর অবৈধ সরকারকে দেখতে চায় না ।২০১৪ সালে বিনা ভোটে আর ২০১৮ সালে নিশিরাতে ভোট ডাকতি করে এই সরকার টিকে আছে ।তাদের এবার বিদায় নিতেই হবে । আর কোন উপায় নেই। মহাসচিব অভিযোগ করেন, আজকের সমাবেশে আসা অন্তত ২৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার।যতই গ্রেফতার করুন না কেন দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না ।তিনি বলেন , দেশনেত্রীকে তাঁর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধাটুকুও দিচ্ছে না এই নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার।এই সরকার আদালতকে ব্যবহার করে বিএনপির বিভিন্ন জনপ্রিয় নেতাদের অবৈধ রায়ে সাজা দিচ্ছে।তিনি বলেন অন্তত ৯৫ জন বিএনপির সিনিয়র নেতাকে সাজা দেয়ার পাঁয়তারা করছে এই ফ্যাসিস্ট সরকার। কিন্তু এইসব অপকর্ম করে আর পার পেতে দেয়া হবে না । অবশ্যই এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে । তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই ।এই সরকারকে বিদায় করেই আমরা রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে যাব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,বসাবসি হবে না ।আমরা রাজপথে বসে থাকবো না ।রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকেই এই সরকারকে বিদায় করবো। কোন টালবাহানা না করে পদত্যাগ করুন।অন্যথায় পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না । তিনি বলেন , ওবায়দুল কাদের বলেছেন ঢাকায় বসলে শাপলা চত্বরের চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হবে।তাহলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছেন তার সংখ্যা বলুন । তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,হেফাজত আর বিএনপি এক না ।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,তার বক্তব্যে বলেন , পূজার ছুটিতেই সিদ্ধান্ত নেন ।থাকবেন না যাবেন।আপনাদের সাথে এখন আর কেউ নেই।দেশের জনগণ এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলো চায় আপনাদের দ্রুত বিদায়।তাই ভালোয় ভালোয় বিদায় হোন । নতুবা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। মহানগর দক্ষিণ এর আহবায়ক জনাব আব্দুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আমাদের আঘাত করে তবে আমরাও পাল্টা আঘাত করবো ।ওরা লাঠি নিয়ে নামলে আমরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবো না, আমরাও লাঠি নিয়ে নামতে জানি।
এছাড়াও সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডঃ মঈন খাঁন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী,ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক জনাব আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সাবেক সহ সভাপতি আনু মুহাম্মদ শামীম আজাদ, পারভেজ রেজা, ওয়াহেদ চয়ন,রেজাউল করিম বাবু, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ রুবেল, সওগাতুল সাগীর, বশির উদ্দিন,ফয়েজ শাকিল, বাহারুল ইসলাম বাহার, বারেক ইকবাল, সাইফুল সিকদার, সারোয়ার হোসেন সারু, মনিরুজ্জামান,কবির হোসেন সহ আরো অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির জনসভায় জনতার ঢল।একদফা দাবি আদায় ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।আজকের জনসভায় ব্যাপক জনসমাগম হয়েছে । সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায় ,পল্টনের এলাকা ছাড়িয়ে কাকরাইল, মৎস্য ভবন ,পুরানো পল্টনের অলিগলি, মালিবাগ মোড়,আরামবাগ নটরডেম কলেজের মোড় থেকে শুরু করে পীরজঙী মাজার পর্যন্ত এই সমাবেশের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।
নেতাকর্মীদের এই ঢল রাজপথ ছাড়িয়ে অলিগলিতে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ।এলাকার দোকানদারা বিশেষ করে হোটেল,চা পানের দোকানে ভিড় করছে নেতাকর্মীরা।বিক্রি বেশি হওয়াতে দোকানদাররা বেজায় খুশি। নেতাকর্মীরা রং বেরঙের ব্যানার,ফেষ্টুন, প্লেকার্ড বহন করছে এবং শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা। বিভিন্ন নেতার ছবি সম্বলিত এইসব ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লেকার্ডে শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিভিন্ন রং এর ছবি দেখা গেছে ।সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক জনাব আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নরসিংদীর( বেলাবো মনোহরদী) এলাকার জনগনকে নিয়ে বিশাল শো ডাউন করেন । তাঁর শো ডাউনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতাকর্মীদের ও ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ।
আজ সকাল থেকে পাঁচটি ট্রাকের উপর স্টেজ তৈরির কাজ শুরু হয় ।স্টেজ তৈরির সময় থেকেই ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে।বেলা বাড়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে সকাল ১১টার মধ্যেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় ।
আজকের এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর আহবায়ক জনাব আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর এর সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা লিটন মাহমুদ।