শরীয়তপুরে ঘুসের টাকা ফেরত চাওয়ায় দুই নারী লাঞ্ছিতের ঘটনায় সমাজসেবা কর্মকর্তার বিচারের দাবী

১২

 

শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃশাহরিয়ার আহমেদ রিয়াজ:শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ঘুসের টাকা ফেরত চাওয়ায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী সামছুল আলমের হাতে দুই নারী লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী ও তাদের স্বজনরা।

সোমবার (৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবী জানান তারা।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী নারীরা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপজেলার মির্জাপুর এলাকার দুই গৃহবধূ নাজমা বেগম ও জান্নাত বেগম ঋণের জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করেন। এসময় ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ওই দুই নারীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুস নেন সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তবে আবেদনের পাঁচ মাস হয়ে গেলেও তারা ঋণ পাননি।

পরে ২২ মে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এসে ঋণ চাইলে সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তাদের ঋণ দিতে গড়িমসি শুরু করে। এসময় ওই দুই নারী ঘুসের ১০ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই কর্মকর্তা প্রথমে নাজমাকে থাপ্পড় মারেন। এতে জান্নাত বেগম বাধা দিলে তাকেও ধাক্কা মারতে মারতে অফিসের বাইরে নিচে ফেলে দেন। পরে ওই দুই নারী দৌড়ে ইউএনও কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এবং বিচার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

এ ঘটনার ১ মাস পরে ২২ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে অন্যত্র বদলি ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদনে দাখিল করেন। এদিকে ঘটনার ৬ মাস হয়ে গেলেও অভিযুক্ত ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সমাজসেবা অধিদপ্তর। তারা এখনো একই কর্মস্থলে চাকুরী করছেন। এ ঘটনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী নারীরা।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী নাজমা বেগম বলেন, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ঋণের আবেদন করেছিলাম। পরে ঋণ দিতে সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আমার কাছে পাঁচ হাজার ও আমার ভাবির কাছে পাঁচ হাজার ঘুস নেন। তারা আমাকে কোনো ঋণ দেয়নি। আমি সেই টাকা ফেরত চাইলে আমাকে ও আমার ভাইয়ের বউকে মারধর করেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত আমরা কোন বিচার পাইনি। মিজানুর রহমান অন্যায় করেও এখনো এখানেই চাকরি করতেছেন। আমরা কোনো বিচার পেলাম না। আমরা অপরাধীর বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী জান্নাত বেগম বলেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আর সামছুল আমাদের লাঞ্চিত করে। আমরা ইউএনওর কাছে বিচার চেয়েছিলাম কিন্তু এখনো কোনো বিচার পাইনি। অপরাধীরা এখনো এখানেই চাকুরী করছেন। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই আর মিজানুর রহমানের বদলি চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈদ্য নাদিম বলেন, ওই ঘটনার পর ভেদরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী সামছুল আলমের বদলির জন্য ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কি কারণে তাদের বদলি করা হচ্ছে না তা বলতে পারবো না। আমরা প্রয়োজনে আবারো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।

এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তদন্ত কমিটিতে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হয়রানির বিষয়টি উঠে আসে। এর পরই আমরা তাদের বদলির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠাই। তবে তাদের ডিপার্টমেন্ট এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.