ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির ৩ এবং আ.লীগের ৮ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী।

৬০

 

আল – মামুন
কালিগঞ্জ ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন।

নির্বাচনকে লক্ষ্য করে ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে, রাস্তায়, মোড়ে শোভা পাচ্ছে নানা রংয়ের সাইনবোর্ড। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে যারা মনোয়ন প্রত্যাশী তারা এখন থেকেই গ্রাম পর্যায়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।কোন কোন প্রার্থী সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- আওয়ামীলীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু,উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক উপজেলা সাবেক  ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি  কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, কেন্দ্রীয় বাস্তহারা লীগের সভাপতি বীর মুক্তি যোদ্দা তোফাজ্জেল হোসেন বাবু, ইঞ্জিনিয়ার সাগর এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ইসরাঈল হোসেনে নাম শোনা যাছছে।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য এম শহীদুজ্জামান বেল্টু, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঝিনাইদহ-৪ আসন মূলত বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত।

১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু এই আসনে টানা ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে শহীদুজ্জামান বেল্টুকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের আনোয়ারুল আজীম আনার নির্বাচিত হন।

এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির উভয় দলের মধ্যে লবিংগ্রুপিং বিদ্যমান। আওয়ামী লীগের ২টি গ্রুপ রযেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার,ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান দুইটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন জাতীয় কিংবা দলীয় অনুষ্ঠান আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপ আলাদা আলাদা ভাবে পালন করছে। আওয়ামীলীগ থেকে কে মনোনয়ন পেতে পারেন এমন প্রশ্নের খোঁজে কথা হয় দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে।

অনেকেই জানান,বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কালীগঞ্জের অনেক উন্নয়ন করেছেন।মনোনয়ন দৌঁড়ে তিনি অনেকটা এগিয়ে।

আবার অনেকেই বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন খান তৃর্ণমূল পযায়ের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে অবহেলিত প্রবীণ আওয়ামী লীগেকে একত্রিত করছেন।

আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সাবেক মেয়র  মোস্তাফিজুর রহমান বিজু। তিনি মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনিও নৌকার মাঝি হবার জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন ।

তবে নৌকার মাঝি এবার কে হচ্ছে তা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে দলটির নেতাকর্মীদের। অপরদিকে বিএনপির ৩ টি গ্রুপ বিদ্যমান। সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু।

একটিতে  উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ।
একটিতে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অপরটিতে নেতৃত্ব দেন।

মনোনয়ন পেতে যে সকল প্রার্থী গণসংযোগ চালাচ্ছেন তাদের বিষয়ে কথা হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে। অনেকেই জানান, বিএনপির দুঃসময়ে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপিকে মূলত চাঙ্গা করে রাখেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ  বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে গিয়ে হামিদকে প্রায় ২০টি মামলা কাধে নিতে হয়েছে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সু-সম্পর্ক ও সার্বিক যোগাযোগ রেখেছেন।

নেতাকর্মীদের মামলা সামাল দিতে সহযোগিতা করেছেন। অপরদিকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম শহীদুজ্জামান বেল্টু ঠিক মতো মাঠে না থাকলেও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন।

বিএনপির নেতাকমীরা আরো জানান,শহীদুজ্জামান বেল্টুর এখন অনেক সমর্থক রয়েছেন। তিনিও বর্তমানে নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছেন, কথা বলছেন, করছেন গণসংযোগ।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে বর্তমানে বেশী আলোচনায় রয়েছেছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রনেতা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপির নতুন ভোটার কিংবা সমর্থকদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ নতুন ও মেধাবী নেতা হিসেবে পরিচিত। এলাকার লোকজনকে তিনি বিভিন্ন সহযোগিতা করছেন। তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কোন প্রার্থীর নাম না পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির মোস্তফা আলমগীর রতনের নাম শোনা গেছে। তিনি এ আসন থেকে এবারও প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত ৫টি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৩১ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৪১ হাাজর ৯৭১ ভোট।

তার নিকটতম আওয়ামী লীগের শাহ মো. জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ৩১ হাজার ৫৫৩ ভোট। এ আসন থেকে জামায়াতের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম পান ১৯ হাজার ৯৪৪ ভোট।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৪২ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৬০ হাজার ৬৯৬ ভোট।

আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ৪৯ হাজার ৬০৫ ভোট। জামায়াত ইসলামীর আবু তালেব পান ২০ হাজার ১শ ৮ ভোট।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৩ হাজার ২৭৬ ভোটের মধ্যে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ৯৫ হাজার ৯৯১ ভোট। আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ৭৪ হাজার ৪৫৮ ভোট।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান পান ১ লাখ ৫ হাজার ৮৫২ ভোট। আর বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু পান ১ লাখ ১ হাজার ১৭৫ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজীম আনার পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪৭৮ ভোট।

তার নিকটতম প্রার্থী বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির মোস্তফা আলমগীর পান ৫ হাজার ৩শ ৯৮ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন এবং ঝিনাইদহ সদরে আংশিক ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ ৪ আসনটি গঠিত।

এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৫ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৭ জন।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.