ঝিনাইদহে কর্মসংস্থান প্রকল্পে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহের জেরে সাংবাদিক কে চেয়ারম্যান এর হুমকি।

১৪

 

সাইফুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার ।ঝিনাইদহে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি) প্রকল্পে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করায় সাংবাদিক এম.এইচ রুবেলকে মানহানী মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানাভাবে ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছেন সদর উপজেলার ১১নং পদ্মাকর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিকাশ কুমার বিশ্বাস। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি চলছে।

সংশ্লিষ্ট ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন (ইজিপিপি) প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সরেজমিন অনুসন্ধানে যান সাংবাদিকরা। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ (শনিবার) পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মুকা মিয়ার বাড়ি হতে কালা চাঁদের বাড়ি ও মোজাহার মিয়ার বাড়ি হতে মনিরুজ্জামান মুন্সীর বাড়ি পর্যন্ত নতুন মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পে ২৬ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। (২) অচিন্তনগর ইব্রাহিম মন্ডলের বাড়ি হতে হুদাগোপালপুরের শেষ সীমানা পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তা বাঁধাই ও মাটি ভরাটের কাজ। উক্ত প্রকল্পে ৩৬ জন শ্রমিক কাজ করার কথা কিন্তু সরেজমিনে সেখানেও কোন শ্রমিকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। (৩) খুলুল বেড়বাড়ি আতর মন্ডলের বাড়ি হতে ঈদগাহ পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ কাজে ৩০ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। অথচ সেখানেও কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। বিধিমালা অনুযায়ী প্রতি সপ্তায় শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত ৫দিন কাজ করার কথা।

অথচ রাস্তায় কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। প্রতি কার্য দিবসে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্রমিকদের কাজ করার বিধান থাকলেও কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি। সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের প্রত্যেক শ্রমিক প্রতিদিন কাজের বিনিময় পারিশ্রমিক হিসেবে ৪শ’ টাকা হারে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ৫দিনের টাকা নিজের মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে তুলতে পারবেন। সরেজমিন ইউনিয়নের ৩টি প্রকল্প ঘুরে প্রকল্পের রাস্তায় কোন সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। সাইন বোর্ডে বিস্তারিত তথ্য দেয়া আছে। যাতে করে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে পারে। সাইনবোর্ড না থাকায় শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রাস্তার আশেপাশের লোকজন জানায়, গত এক মাসে ভেতর মাঝে মধ্যে অল্প কিছু লোক দিয়ে কয়েক দিন কাজ করিয়েছে। বেশ কিছুদিন হলো কাজ বন্ধ আছে। নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করার পাঁয়তারা করছে প্রকল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। দুটি প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ সাজেদুল ইসলাম ও সংরক্ষিত ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লাবনী খাতুনের নাম থাকলেও এ প্রকল্পের সকল কাজ ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি লাবনী খাতুন জানান, আমরা নামে মাত্র প্রকল্প সভাপতি। এর থেকে বেশী কিছু বলতে পারবোনা। প্রকল্পের কাজ হচ্ছে কিনা সেটা চেয়ারম্যান এর কাছে শুনে আপনাদের জানাতে পারবো।

কর্মসংস্থান প্রকল্পের রাস্তায় সাইন বোর্ড ও শ্রমিক না থাকা এবং বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বিকাশ কুমার বিশ্বাস জানান, আপনারা প্রকল্প এলাকায় গেছেন কেনো? আমি পরিষদে আছি, আপনারা (সাংবাদিকরা) পরিষদে আসেন। এরপর পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তুু সাংবাদিকেরা ম্যানেজ না হয়ে পরিষদ ত্যাগ করার পরপরই ঐ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন নেতাদের দিয়ে নিউজ প্রকাশ না করার জন্য সুপারিশ করাতে থাকেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান বিকাশ কুমার বিশ্বাস নিজেই শনিবার বিকাল ৫.১৯ মিনিটের সময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ০১৭১১-১৫৪৭৮৮ থেকে এ প্রতিবেদককে কল করে নিউজ প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেন যার কল রেকর্ড ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

প্রকল্পে শ্রমিক না থাকা ও অনিয়মের ব্যাপারে পিআইও এবং উপ-সহকারী প্রকৌলীর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, প্রকল্পের কাজ না করে যদি কেউ বিল করে তবে তার বিল কর্তন করা হবে। কাজ না করে বিল নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সাংবাদিকরা যখন সোচ্চার, ঠিক তখনই সরকারের বিভিন্ন মহলে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু নামধারী কিছু নেতাকর্মী নিজেদের দুর্নীতি-অনিয়ম-অপরাধ ঢাকতে সাংবাদিকদের নানাভাবে হয়রানি ও আক্রমণের স্বীকার হন। একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারের স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে দাবি সচেতন মহলের।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.