কেমোথেরাপি দিতে যাওয়ার পথে একই পরিবারের ৪ জন নিহত ।

৩৪

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী: মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত ইউনুস আলী (৮০)। তাকে বাঁচাতে দীর্ঘ ছয় মাস থেকে দিতে হয় কেমোথেরাপি।

কেমোথেরাপি দেওয়ার লক্ষ্যে একটি রিজার্ভ সিএনজিতে ওঠেন অসুস্থ ইউনুস, তার ছেলে-মেয়ে ও নাতনি। ইউনুসের প্রাণ বাঁচাতে আসার পথে একটি দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই লাশ হলেন চার স্বজন।

এমন হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিহতদের পরিবারে। একসঙ্গে চার স্বজন হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন তারা।
ইউনুস আলীর ভাতিজি মিথিলা আক্তার বলেন, চাচা ইউনুস আলী দীর্ঘদিন থেকে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

তার কেমোথেরাপি চলছিল। কেমোথেরাপির জন্য দুপুরে গুরুদাসপুর থেকে স্বজনরা চাচাকে নিয়ে রওনা দেন একটি রিজার্ভ সিএনজিতে। তারা রাজশাহীতে এলে চাচাকে চিকিৎসককে দেখানোর কথা ছিল। চাচার সঙ্গে ছিলেন চাচাতো ভাই, বোন ও বোনের মেয়ে। তারা সবাই মারা গেছেন। তাদের এমন মৃত্যুতে পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এর আগে শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নেন ইউনুসের ছেলে লাবু হোসেন। এরপর তারা সবাই এক সিএনজিতে ওঠেন। রওনা দেন রাজশাহীর হাসপাতালের উদ্দেশে। পথে এমন দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। পরে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে নিহতদের মরদেহ হাসপাতালে লাশ ঘরে রয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামের ইউনুস আলী (৮০), তার ছেলে লাবু হোসেন (৪০), মেয়ে পারভিন খাতুন (৩৫), ইউনুস আলীর নাতনি শারমিন খাতুন (১৬) এবং একই উপজলার মকিমপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মোখলেসুর রহমান (৪০)। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন।

ইউনুস আলীর নাতি নিহত শারমিনের বাবা আবু সাইদ বলেন, তার বাবার ছয় মাস আগে শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আপন ভাই, বোন ও তার মেয়েসহ চারজন একটি সিএনজি ভাড়া করে রাজশাহীতে আসছিল। বিকেল ৩টার দিকে শুনি সড়ক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে। তার একমাত্র কন্যা শারমিনও মারা গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ফায়ার সার্ভিসের লিডার আরিফুল ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে ৮টায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। ট্রাকের নিচে কিছু বা আশপাশে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে যতটুকু জেনেছ সংঘর্ষের পর ট্রাক ও সিএনজিটি উল্টে যায়। ফলে ট্রাকের নিচে পড়ে সিএনজি। এতে সিএনজিতে থাকা চালকসহ পাঁচ জন মারা গেছে।

গুরুদাসপুরের চাপিলা ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ হস্তান্তর করলে আমরা মরদেহ নিয়ে এসে দাফন করব।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ জামিরুল ইসলাম বলেন, ট্রাকটি নগরীর খড়খড়ি বাইপাস থেকে নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। আর সিএনজি নাটোরের দিক থেকে রাজশাহী আসার পথে বেলপুকুর চেকপোস্ট মোড়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের পরে ট্রাক ও সিএনজি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও পরে একজনের মৃত্যু হয়।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.