মান্দায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ের নির্মাণ সেতুতে।

 

ব্যুরো প্রধান রাজশাহী।নওগাঁর মান্দায় জোতবাজার খেয়া ঘাটে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আত্রাই নদীর সেতুটি এলাকবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। সেতুটির দুই দিকে সংযোগ সড়ক না থাকায় খেয়াঘাটের মাঝিরা সেতুতে উঠতে পারাপারের জন্য তৈরি করেছে বিপদজনক এক বাঁশের সাঁকো। এতে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছে এবং দিতে হচ্ছে অর্থ। ফলে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল নওগাঁ-৪৯ মান্দা ৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। মান্দা উপজেলার নূরল্যাবাদ, বিষ্ণুপুর, প্রসাদপুর ও কশব ইউনিয়ন এবং নীলকুটি, গোটগাড়ী হাট, দামনাশ, বাগমারা রোডসহ জোতবাজার খেয়াঘাট আত্রাই নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ২১৭ দশমিক ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এতে এর পেছনে ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দুপাশে সাদা আর লাল রঙে রাঙানো হয়েছে পুরো অংশ। সংযোগ সড়ক না থাকায় খেয়াঘাটের মাঝিরা সেতুতে উঠা ও নামার জন্য কিছু অংশে মাটি ভরাট করে অস্থায়ী এক বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে। এটি দেখতে খুব ভয়ংকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কোন রকম ঝুঁকি নিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলাচল করতে দেখা যায় এবং পারাপারের সময় নেওয়া হচ্ছে টাকা। মূহুর্তেই দুই যুবক সাঁকো দিয়ে খুব সাবধানে মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর থেকে নামছেন। একজন মোটরসাইকেলের চালকের আসনে বসে চালাচ্ছেন, আরেকজন মোটরসাইকেলটি পেছন থেকে ধরে আছেন যাতে সাঁকো থেকে পড়ে না যায়।

পাঁজরভাঙ্গা গ্রামের মোঃ সুমন বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ, সেতুটি পেলেও রাস্তার জন্য মাটি কাটা না হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ এখনো কাটেনি। তাড়াছা এই বাঁশের চাটা বেয়ে সেতুতে উঠতে ১০ টাকার টোল আদায় করছে। যদি সেতুটিতে সংযোগ রাস্তার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হবে।

ভুক্তভোগী সবাই-হাট গ্রামের অটোরিকশা চালক মোঃ লিটন বলেন, আমি সাবই-হাট অনেক দূর থেকে যাত্রী ভাড়া করে পাঁজরভাঙ্গা এলাকায় সেতু বেয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি ব্রিজ নির্মাণ হলেও পারাপারের জন্য বাঁশের চাটা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে অটোরিকশা নিয়ে পার হওয়া খুবই বিপদজনক। বিধায় আমাকে এখন অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ যেতে হবে।

এ বিষয়ে এলাকার স্থানীয় শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান বলেন, বাঁশের চাটা বেয়ে সেতুতে উঠার জন্য জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ নিয়ে লোকজন যাতায়াত করছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আগামী ১৫ তারিখ থেকে এসএসসি পরীক্ষা এবং বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে শত-শত শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়ে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করবে। ফলে তাদের সুবিধার জন্য হলেও ১৫ তারিখের আগে যেন রাস্তাটির ব্যবস্থা করা হয়।

এ বিষয়ে বাইবোল্লা গ্রামের সচেতন ব্যক্তি মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, সেতুটি এই এলাকার স্বপ্নের। মাটির অভাবে নাকি পূরণ করতে পারছে না। কিন্তু এভাবে ফেলে রাখলে তো হবে না, জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তারা এই বাশেঁর সাঁকো তৈরি করে যে রাস্তা বানিয়েছে সেটি ঝুকিপূর্ণ। কখন কোন মূহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটবে তা বলার অবকাশ রাখে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মান্দা উপজেলার প্রকৌশলী শাইদুর রহমান মিঞা বলেন, তারা বাঁশের চাটা দিয়ে যে রাস্তা তৈরি করেছে, সেটা আমরা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে আটকিয়ে দিয়েছি। যদি তারা চালু করে থাকে তাহলে এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়কের জন্য জেলার কন্ট্রাক ছিল, সেটা বাতিল হয়েছে। এটা হয়তো টেন্ডার হয়ে জুনের মধ্যে কাজটা হয়ে যাবে।

50% LikesVS
50% Dislikes
Comments (০)
Add Comment