মো: ফয়সাল হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) মাগুরা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা–১ আসনে এবারও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর।। তবে শেষ মুহূর্তে সাকিব আল হাসান এসে সব হিসাব–নিকাশ বদলে দিয়েছেন। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকায় মনোনয়ন পেতে ব্যার্থ হলেও আগামী নির্বাচনে মাগুরা–১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাকিব আল হাসানকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এছাড়া নিজ অনুসারী ও দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধ করেছেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে।
সাকিবের মনোনয়ন কেনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেছিলেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, গত ১৫ বছরে মাগুরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন সাইফুজ্জামান শিখর। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগসব জায়গাতেই তার অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতে সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়নবঞ্চিত করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার অবস্থান একদম পরিষ্কার। নেত্রী আমাকে নৌকা আমানত হিসেবে দিয়েছেন। এই আমানত ফেরত দেয়ার দায়িত্ব আমার। ফলে সাকিব এখানে কোনো বিষয় না, (নৌকা) যাকেই দিত, আমি আমার সর্বোচ্চ যতটুকু করার, আমি তার জন্য করতাম। সাকিবের জন্যও আমার যতখানি যা করার আমি করব। এটা নিয়ে সাকিবের টেনশন (চিন্তা) করার কিছু নেই।’
সাইফুজ্জামান শিখর আরও বলেন, সাকিবের সঙ্গে কথা হয়েছে, তার বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাদের বলেছি, এটা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন।
এদিকে মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসানের মনোনয়নে তার বাড়িতে উৎসুক স্থানীয়দের ভিড় বাড়ছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তাকে নিয়ে এখনো মিশ্র প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, দলীয় বিবেচনায় কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে আমাদেরকে নৌকার সেই প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, এ ব্যাপারে আমরা দলীয় ভাবে সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেব। এ বিষয়ে আপাতত অন্য কোন মন্তব্য করতে চাই না।
জেলা আওয়ামী লীগের অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাখারুল ইসলাম শাকিল বলেন, সাকিব আল হাসানের মনোনয়নে আমি সন্তুষ্ট নই। রাজনীতির মাঠে সে একেবারেই নতুন। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। এতো অল্প সময়ের ভেতরে মাগুরা-১ আসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাকে মনোনয়ন দেয়াটা মোটেই যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। আগামী ৫ বছরে আমরা সাংগঠনিকভাবে অনেক পিছিয়ে যাব।
এদিকে সোমবার সকালে সাকিবের বাবা খন্দকার মশরুর রেজাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ, সম্পাদকসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে ওই বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার জানান, আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে সাকিবের জন্য কাজ করতে। আমরা সেই কাজই শুরু করেছি।
এ ব্যাপারে সাকিবের বাবা খন্দকার মাশরুর রেজা কুটিল বলেন, আমার ছেলেকে মনোনয়ন দেয়ায় দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলীয় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই যেন সে জনপ্রতিনিধি হয়ে মাগুরার মানুষের সেবা করতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন।