বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বেশ কয়েকটি ‘সংস্কার কমিশন’ বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারে বড়সড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে কমিশনগুলো।
এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র সংস্কারে মোট দশটি কমিশন গঠন করা হলেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়গুলো।
সংবিধান সংস্কার বিষয়ক কমিশন কাজ শুরুর পর পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, আনুপাতিক হারে ভোটের বিধান, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে বড়সহ বেশ কিছু পরিবর্তনের পরামর্শ এসেছে বলে তারা জানিয়েছে।
বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তা বন্ধে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন পরিবর্তন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার বিধান চালু, ইভিএম বাতিলসহ বেশ কিছু আইনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে সব বিষয় সংস্কারের কাজ শুরু করেছি সেটি বাস্তবায়ন করা গেলে আগামীতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’
যদিও এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে অন্তর্র্বতী সরকার।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিদ্যমান যে সংবিধান আছে তার ভিত্তিতেই সংস্কার কাজ চূড়ান্ত করছে সরকারের বিভিন্ন কমিশনগুলো।
সংস্কার কমিশন সংবিধান পুনর্লিখনে যদি হাত দেয় তাহলে এসব প্রস্তাবনার অনেক কিছুই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে এমন শঙ্কাও দেখা যাচ্ছে।
তাই কমিশনগুলোর সাথে আলাদাভাবেও বৈঠক করছে সংবিধান সংস্কার কমিশনকে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো যাতে আমাদের প্রস্তাবনাগুলোয় সামঞ্জস্য থাকে। পরস্পরবিরোধী না হয়। সেই বিবেচনায় থেকে সেই কাজ করবো।’
তবে শেষ পর্যন্ত এসব প্রস্তাবনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সায় না মিললে এই উদ্যোগ কতখানি সফল হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে।
কেননা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলো সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে সরকার। পরে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।
এই সব সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদান করা।
কী পরিবর্তন আসতে পারে সংবিধানে?
পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দীর্ঘ দিনের শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের সবচেয়ে বড় দাবি উঠেছে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
এর বাইরেও নাগরিক সমাজ, দেশের সাধারণ নাগরিক কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন সভা সমাবেশে নানা ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে অংশীজনসহ অনেকের সাথে বৈঠক করেছে।
সংস্কার কমিশনের সাথে বৈঠকে বসে কেউ কেউ বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে সংবিধান রয়েছে সেটি যেকোনো সরকারকে স্বৈরাচারী করে তুলতে পারে। যে কারণে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে নানা সংস্কার প্রস্তাবও এসেছে।
সংস্কার কমিশন এর মধ্যে যেসব পরামর্শ পেয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা কমানোসহ একজন ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করতেও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
২০১১ সালে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়েও নানা বিতর্ক হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ওই সংশোধনী বাতিলের পরামর্শও দিয়েছে অংশীজনদের কেউ কেউ।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো-কমানো নিয়ে দুই ধরনের পরামর্শই এসেছে কারো কারো কাছ থেকে।
সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পরামর্শগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করছি। যে যে বিষয়গুলোতে এখন পর্যন্ত ঐকমত্য আছে সেগুলোও নোটডাউন করছি’।
বিভিন্ন অংশীজন, বিশেষজ্ঞদের বাইরেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।
নাগরিকদের জন্য অনলাইনে সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত জানানোর ব্যবস্থা রাখা হলেও, বাস্তবে খুব অল্পসংখ্যক মানুষকেই অনলাইনে মতামত দিতে দেখা গেছে।
অনলাইনে নাগরিকদের মতামত দেয়ার সময় শেষ হয়েছে ২৫ নভেম্বর, সোমবার। সেদিন সকাল পর্যন্ত অনলাইনে মতামত পড়েছে ৪৬ হাজার। সাধারণ মানুষদের অনেকেই বলেছেন, তারা জানেন না এই মতামত দেয়ার বিষয়ে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই। যে কারণে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো কিভাবে অনুমোদন করা যায় সেটি নিয়েও নানা মতামত আসছে।
এক্ষেত্রে কারো কারো পরামর্শ গণপরিষদ গঠন করে সংবিধানের অনুমোদন করা। আবার অনেকে বলছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে দিলে তারা তা সংসদে তা অনুমোদন করবে।
অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদের বাইরে সংবিধান পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। একইধরনের মতামত এসেছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও।
কমিশন প্রধান অধ্যাপক রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা আপাতত সাতটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এখানে কী হবে সেটা আমরা চূড়ান্ত করতে পারবো। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটি আমরা এখনই বলতে পারবো না।’
এই কমিশন মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোও হয়তো শেষ পর্যন্ত কিছু কিছু প্রস্তাবে একমত নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশের বেশিভাগ মানুষ যদি ওই সব প্রস্তাবের পক্ষে তাদের সমর্থন জানায় তাহলেই সে সব সংস্কার প্রস্তাব গুরুত্ব পাবে এই সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে।
টেকসই নির্বাচন ব্যবস্থার পথ খোঁজা হচ্ছে
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।
এরপর তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া তিনটি জাতীয় নির্বাচন ও বেশিভাগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে দেশে নির্বাচন নিয়ে এমন অনাস্থা-সঙ্কট ও স্বৈরাচারী প্রথা গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
যে কারণে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করতে দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ খুঁজছে কমিশন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভোটের সময় সরকার যদি ইসির কথা না শোনে তাহলে এ নিয়ে কিছু বলা নেই সংবিধান কিংবা আইনে।’
এই সংস্কার কমিশন জানাচ্ছে, প্রস্তাবে তারা নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা, সীমানা নির্ধারণ আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করার বিষয়েও একমত হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে সব নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে তা নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন। যে কারণে সংস্কার কমিশন আইনের ধারায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে যার মাধ্যমে পরবর্তীতে কমিশন গঠনে সরকার কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, নির্বাচনে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রস্তুত, রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী অপরাধ বন্ধে আইনে সংস্কারের মতো বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বিবিসি বাংলাকে মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে স্বাধীন করা যায় কিংবা জনগণের কাছে ইসির দায়বদ্ধতা নিয়েও আমরা আলোচনা করছি।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে মতামত নিতে এরই মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্কার কমিশন।
মজুমদার বলেন, ‘সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পাঠাবো।’
যদিও এরই মধ্যে পুরনো আইনে নির্বাচন কমিশন গঠন গঠন হয়ে যাওয়ায় সংস্কার কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সংস্কারের যে সব প্রস্তাবনা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে পুলিশের নানা কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিষয়টিকে সামনে রেখে অন্তর্র্বতী সরকার দেশের পুলিশি কাঠামো ঢেলে সাজানোর কথা বলছে।
এই কমিশন পুলিশ ব্যবস্থা সংস্কারে সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে ওয়েব সাইটে জনমত জরিপও করেছে। তবে তাতে কেমন সাড়া মিলছে তা জানা যায়নি।
সেখানে আইনি কাঠামো সংস্কার, পুলিশের জবাবদিহিতা, পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধি, জনকল্যাণমূলক কাজে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, পুলিশের অপকর্ম রোধে নানা প্রস্তাবনাও এসেছে।
সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক শেষে পুলিশ সংস্কার কমিশন জানিয়েছে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় দেখার কারণে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়।
যে কারণে আগামীতে সরকারির চাকরির ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফ রাজ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ জিনিসগুলো বাদ দিতে সুপারিশ করবো। এক নম্বর ডকুমেন্ট হলো ন্যাশনাল আইডি কার্ড। এটার পেছনে আইন আছে। এটা নেয়ার সময় সবকিছু তদন্ত করা হয়।’
হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে পুলিশ গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিতে পারবে সংস্কার প্রস্তাবে এমন সুপারিশও করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান।
এই সংস্কার কমিশন বলছে, বর্তমানে পুলিশ চলছে প্রায় দেড় শে’ বছরের পুরনো আইন দিয়ে। যে কারণ পুলিশি কাঠামো ও এ নিয়ে নানা সঙ্কট থেকে গেছে বছরের পর বছর।
যে কারণে পুলিশ সংস্কারে নানা প্রস্তাবনার পাশাপাশি পুলিশ আইন সংস্কারেরও সুপারিশ দেবে কমিশন।
জনপ্রশাসনে কী পরিবর্তন আসতে পারে?
বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্নও উঠেছে।
আবার অনেক সময় সরকারি আমলাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নানা অভিযোগ উঠলেও সেগুলো বন্ধে কঠোর কোন উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
এমনকি গণঅভ্যুত্থানের পর গত তিন মাসেও মৌলিক কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি জনপ্রশাসনে।
গত অক্টোবরে সাবেক আমলা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে অন্তর্র্বতী সরকার।
এই কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। ওয়েব সাইটে নাগরিকদের কাছে প্রশ্ন দিয়ে জনপ্রশাসনের কী কী জায়গায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সে বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করছে।
এর বাইরেও বিভিন্ন অংশীজন, জনপ্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করেছে এই কমিশন।
এক্ষেত্রে অনেকে জনপ্রশাসনে দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে স্বচ্ছতা, প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণে উদ্যোগ, বদলি কিংবা পদায়নে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মানার মতো বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিভাগেও এরই মধ্যে সভা করছে কমিশনের সদস্যরা।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রশাসনে কাঠামোগত জায়গা থেকে একটি এবং জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তুলতে আরেকটি। এই দুইটি সংস্কার সবচেয়ে বেশি জরুরি। কমিশন সব মতামতকে আমলে নিয়ে কাজ করছে।’
কমিশন সদস্যরা বলছেন, রাজনীতিবিদদের অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার এক ধরনের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সেটি বন্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়েও ভাবছে সংস্কার কমিশন।
কমিশন সদস্য মেহেদি হাসান বলেন, ‘গত ১৬ বছরে মনস্তাত্বিক জায়গায় একটি বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই মনস্তাত্ত্বিক জায়গা ঠিক করার জন্য সংস্কার লাগবে। তা না হলে যত সংস্কারই করা হোক না কেন তা স্থায়ী হবে না।’
সংস্কার-সমন্বয় ও নির্বাচন
অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত সেপ্টেম্বরে কমিশন গঠনের ঘোষণার পর অক্টোবরের শুরু থেকে কাজ শুরু করেছে কমিশনগুলো।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কোন কোন পরির্বতনগুলো সাংঘর্ষিক হতে পারে সেটি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা প্রস্তাবণা চূড়ান্ত করার আগে তাদের সাথে বৈঠকে বসবো যাতে সাংঘর্ষিক কোনো পরিবর্তন না হয়।’
সংবিধান সংস্কার কমিশন এ কারণে সুপারিশমালা প্রস্তুতের পাশাপাশি চূড়ান্ত দফায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাথে বৈঠকে বসার উদ্যোগ দিয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমরা চাইবো আমাদের প্রস্তাবনার মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে। পরস্পরবিরোধী ও সাংঘর্ষিক ধারা না থাকে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে।’
এসব কমিশনগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিলেও যে চূড়ান্তভাবে সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটি নিয়েও সন্দেহ আছে।
কেন না সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার পর এটি নিয়ে রাজনৈতিক দলের সাথে আবার বৈঠকে বসার ঘোষণা দিয়েছে সরকার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেও অনেক সুপারিশই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয় যেমন আছে। তেমনি কিন্তু সাধারণ মানুষ মতামতের বিষয়ও আছে। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বেশি সংখ্যক মানুষের মত।’
এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করে নির্বাচন কবে হবে সেই প্রশ্ন বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পথে হাঁটতে চান তারা। সূত্র : বিবিসি
da/iN