ভয়ংকর অনলাইন জুয়ার খপ্পরে অধিকাংশ তরুণ যুবক |

 

মোঃ সাইদুল ইসলাম হেলাল
ব্যুরো প্রধান রাজশাহী |
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে শহর ও গ্রামের অধিকাংশ তরুণ যুবক। লেখাপড়া বাদ দিয়ে জুয়ার টাকা যোগাড় করতে দিনের সিংহভাগ সময় ব্যয় করছে তারা। অনলাইনের বেটিং সাইট গুলোতে রয়েছে তাদের অবাধ চলাচল। অনেকেই জুয়ার টাকা যোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে চুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলা চলছে। তাই নতুন করে অনলাইন জুয়ায় যুক্ত হচ্ছেন অনেক তরুণ ও যুবক। কেউ কেউ অনেকটা কৌতুহলের কারণে এই সাইটে যুক্ত হয়ে এখন জুয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে।

তবে অনলাইন জুয়া বন্ধে এখন পর্যন্ত কোন প্রশাসন কোন ধরনের পদক্ষেপ নেন নাই ও গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। অনেকটা প্রকাশ্যে অনলাইন জুয়া চললেও, এ বিষয়ে একদমই নিশ্চুপ প্রশাসন।

অনলাইন জুয়ায় জড়িত তরুণ যুবকরা জানায়, ভেলকি, বেটবাজ ৩৬৫, অনএক্সবেটসহ নানা নামে পরিচালিত অনলাইন সাইটে ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস খেলায় বেটিং করে তারা। এসব সাইটে ক্যাসিনো খেলার সুযোগও রয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে এসব সাইটের এজেন্টদের থেকে কয়েন কেনেন তারা। পরবর্তীতে সেই কয়েন দিয়ে বেটিং করেন এবং কেসিনো খেলেন। এসব সাইটে ১ কয়েনের দাম ১০০টাকা। সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা ডিপোজিট করে ১০ কয়েক কিনতে হয় অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট থেকে। জুয়াতে কয়েন জিতলে সেই কয়েনের পরিমাণ টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমেই পাওয়া যায় ১০ মিনিটের মধ্যে। দ্রুত সময়ে প্রচুর অর্থ উপার্জনের লোভে সবকিছু হারিয়েছে অনেকে। শহর ও গ্রামের অধিকাংশ তরুণ যুবকরা নিয়মিত ঝুঁকছে অনলাইন জুয়ার দিকে। অনেকেই জড়িয়ে যাচ্ছে নানাবিধ অপরাধে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছেন অনেকে। অনলাইন জুয়া এতোটাই সহজলভ্য হয়ে গেছে যে চায়ের দোকান, হাট-বাজারে প্রকাশ্য লাভ লসের বিষয় আলোচনা করে তরুণ যুবকেরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গুগল সার্স করে অনলাইন জুয়ার সাইটের এজেন্টদের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার সংগ্রহ করতে হয়। এরপরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে নাম আর ফোন নাম্বার দিলে এজেন্টরা একাউন্ট খুলে দেয়। আবার স্থানীয় ভাবেও কিছু এজেন্ট কাজ করে। এরা পরিচিত অনলাইন এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কথা বলে গোপনে নিজেই একাউন্ট খুলে দেন। পরে এজেন্টদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে বেটিং এর জন্য একাউন্টে মেলে কয়েন। আসক্তরা পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। ফেসবুকে ক্যাসিনো খেলার এ্যাড ও দিচ্ছে এতেকরে জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। সম্প্রতি সময়ে অনেক তরুণ যুবকের একাউন্ট থেকে কয়েন (টাকা) হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি অনলাইন জুয়ার নতুন ওয়েবসাইট। আগামী দিনে এসব বিষয় নিয়ে বড় ধরনের সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।একজন স্কুল শিক্ষার্থী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন ‘বন্ধুদের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার বিষয়টি জানেন। পরে প্রাইভেট পড়ার ৫০০ টাকা স্যারকে না দিয়ে, সেই টাকায় খেলা শুরু করেছিল সে। শুরুর দিকে ভালো লাভ হয়েছিলো। কয়েকদিন পরেই লসের পাল্লা ভারী হয়। ইতিমধ্যেই সে বাড়ি থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা নিয়ে জুয়ায় হেরেছে। শেষ পর্যন্ত মুঠোফোন বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাকে। এটা নেশার মত। একবার খেলা শুরু করলে নিস্ব না হয়ে ফেরা যায় না।’ তারমত এমন গল্প আছে অনেক তরুণের।

সচেতন মহলের ব্যক্তিবর্গ বলছেন, অনলাইন জুয়া মহামারি আকার ধারণ করেছে। যা নির্মুল করা অতীব জরুরি বিষয়। সম্প্রতি চুরি ছিনতাইকারীর মতো ঘটনা বেড়েছে।
অনলাইন জুয়া ও মাদকের কারণেই এসব তরুণরা হয়তো ভয়ংকর এই অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধে, প্রশাসনের সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়াতে হবে। স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের অনলাইন জুয়ার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা উচিত।

এ বিষয়ে প্রশাসন তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে জড়িত দের খুব শিগ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

100% LikesVS
0% Dislikes
Comments (০)
Add Comment