নেদারল্যান্ডস কে হারিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ মিশন শুরু। 

বশির উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা।

সমীকরণ :

পাকিস্তান:২৮৬ (৪৯ ওভার)
নেদারল্যান্ডস:২০৫(৪১ ওভার)
ফলাফল: পাকিস্তান ৮১ রানে জয়ী
সেরা খেলোয়াড়:সৌদ শাকিল।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট দ্বিতীয় ম্যাচে আজ ভারতের হায়দ্রাবাদে মুখোমুখি পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস ।১৯৯২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেদারল্যান্ডসের কাছে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে । পাকিস্তান মানেই আনপ্রেডিকটেবল কিছু।যা সচরাচর হয় না বা করা যায় না তাই পাকিস্তানের জন্য হয় এবং করে । বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটি এত দীর্ঘ সময় পরেও কোন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছেনা এটা সত্যিই বিস্ময়কর।অনেক লিজেন্ডস ক্রিকেটার পাকিস্তান দলে আসা যাওয়া করলেও কেউই দলে ধারাবাহিক ছিল না ।তবে পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে সৌন্দর্য হয়তো এটাই যে পাকিস্তান সম্পর্কে কোন আগাম ধারণা দেয়া যায় না ।

আজ টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান মাত্র ৩৮ রানে প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজ‌ওয়ানের ১২০ রানের জুটি পাকিস্তানকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।সৌদ শাকিল একটু মারমুখী ব্যাটিং করে ৩২ বলে ৭টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে অর্ধশত পূর্ণ করেন।অপর দিকে রিজ‌ওয়ান দেখেশুনে খেলে ৫৮ বলে ৬ টি চারের সাহায্যে অর্ধশত পূর্ণ করেন। কিন্তু তাঁরা কেউ ইনিংসকে বেশি লম্বা করতে পারেননি। উভয়েই ৬৮ রান করে আউট হলে পাকিস্তান আবারো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।সেখান থেকে নীচের সারির ব্যাটসম্যনরা টেনে তুলতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু যতটা করলে দলের রানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হ‌ওয়ার কথা ততটা করতে না পারলে মাত্র ২৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল এই নেদারল্যান্ডসের সাথে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ যে ভাবে নড়েবড়ে অবস্থায়,তাতে পাকিস্তান যদি তাদের স্বাভাবিক খেলায় ফিরে আসতে না পারে তবে এই দল নিয়ে বেশিদূর আগানো যাবে বলে মনে হয় না । নেদারল্যান্ডসের বাস ডি লিড একটু খরুচে হলেও পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন ধ্বসিয়ে দিয়ে কাজের কাজ ঠিক‌ই করেছেন। মিডিয়াম পেসার এই ডি লিড ৯ ওভারে ৬২ রান দিয়ে পাকিস্তানের ৪ টি মূল্যবান উইকেট তুলে নেন ।কলিন একারমেন ৮ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে নেন ২ টি উইকেট। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইমামুল হক,ফকর জামান,বাবর আজম,ও ইফতেখার আহমেদ ব্যর্থ হলে দলের সংগ্রহ আশানুরূপ হয় নি। তারপরেও দলটি যেহেতু নেদারল্যান্ডস সেহেতু এই রান পাকিস্তানের জন্য নির্ভরতা এনে দেয়।

জবাবে ২৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নেদারল্যান্ডস ২৮ রানের মাথায় হাসান আলীর বলে পুল শর্ট খেলতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে শাহিন শাহ আফ্রিদির হাতে ধরা পড়েন । অকেশনাল বোলার ইফতেখার আহমেদের বলে একারমেন বোল্ড হয়ে ৫০ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন। পাকিস্তানের জন্য জন্য বিপদজনক হয়ে উঠা বিক্রমজিৎ সিং আউট হন লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে । বিক্রমজিৎ মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে গেলে ফখর জামান ডিপ মিড‌উইকেটে অনেকটা দৌড়ে মূল্যবান ক্যাচ নিয়ে পাকিস্তানকে স্বস্তি দিয়েছেন ।আউট হ‌ওয়ার আগে বিক্রমজিৎ ৬৭ বলে ৪ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে ৫২ রান সংগ্রহ করেন।এরপর চেঞ্জ বোলার হারিস র‌উফের জোড়া আঘাতে নেদারল্যান্ডস ব্যাকফুটে চলে চায় ।তিনি ২৭তম ওভারে তেজা নিদামানুরু ও এড‌ওয়ার্ডসকে ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে দারুন ভাবে ফিরিয়ে আনেন ।এরপর পাকিস্তানের বোলাররা সবাই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পেলে নেদারল্যান্ডস খেলা থেকে ছিটকে যায়।জয়টা তখন পাকিস্তানের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের পক্ষে হারিস র‌উফ ৯ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ৩ টি উইকেট পান ।এছাড়া হাসান আলী ২ টি এবং আফ্রিদি, ইফতেখার,নেওয়াজ ও শাদাব খান ১ টি করে উইকেট পান।

পাকিস্তানের বোলিং লাইনে শাহীন শাহ্ আফ্রিদির মতো ফাষ্ট বোলার থাকার একটা সুবিধা অন্য বোলাররা পেয়ে থাকেন।সবাই আফ্রিদিকে দেখেশুনে খেলে কিন্তু অন্য বোলারদের উপর চড়াও হতে চায় ।যার ফলে অন্য বোলাররা খরুচে হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পেয়ে থাকেন ।যা পাকিস্তানকে ম্যাচ জয়ে সাহায্য করে ।তবে পাকিস্তানের ব্যাটিং এবং বোলিং উভয়েই বেশ নড়েবড়ে।ব্যাটিং যেমন বাবর আজম নির্ভর তেমনি বোলিং ও আফ্রিদি নির্ভর। পাকিস্তান কখনোই একটি দল হয়ে খেলতে পারে না ।যার কারনে‌ অনেক সহজ ম্যাচ ও তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।এখন দেখার বিষয় এই বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলবদ্ধভাবে খেলতে পারে কিনা ।নতুবা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে হয় না ।

100% LikesVS
0% Dislikes
Comments (০)
Add Comment