জীবিকার খোঁজে ময়লার ভাগাড়ে সিরিয়ার শিশুরা।

ইঞ্জি:রাজিবুর রহমান, ইউ কে।

কথায় আছে “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়”। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া এখন ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়ে পড়েছে। টানা ১২ বছর ধরে চলছে যুদ্ধ। ক্ষমতার দম্ভ, টিকে থাকার লড়াই, নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি রাজায় রাজায় শুরু হওয়া এ ত্রিমুখী লড়াইয়ে পথে বসেছেন দেশটির নাগরিকরা। পৈতৃক বসতভিটার ভগ্নস্তূপের সঙ্গে মিশে গেছে তাদের উপার্জনের অবলম্বনও।

এখন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছোট ছোট আবর্জনার স্তূপ, ময়লার ভাগাড়ে নিজেদর জীবিকা খুঁজছেন অসহায় সিরীয়রা। সম্প্রতি এমনই একটি পেশা বেশ রমরমা হয়ে উঠছে কর্মহীন শ্রমবাজারে প্লাস্টিক কুড়ানি ‘টোকাই’। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই ছুটছে সিরিয়ার নতুন এ কর্মসংস্থানে।

রাজধানী আলেপ্পো থেকে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমঘেঁষা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের ছোট ছোট ছিটমহল সবখানেই শুরু হয়েছে ‘প্লাস্টিক বিপ্লব’। নতুন পেশার আশা। ফেলে দেওয়া বা পরিত্যক্ত এই বর্জ্যকে কাজে লাগিয়েই আয়ের সন্ধান করছেন স্থানীয়রা।

কেউ কেউ সেই ‘অমূল্য রত্ন’ সংগ্রহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে নিজ নিজ এলাকার বিশাল বিশাল ময়লার ভাগাড়ে। কেউ আবার তা কিনে তৈরি করছে ঘর-গেরস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় সব উপকরণ। পাটি, মাদুর, কার্পেটসহ নানাবিধ বাসন-কোসন।

আলেপ্পো শহরের বাস্তুচ্যুত মোহাম্মদ বেলাল বেছে নিয়েছেন প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ। গৃহযুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তিনি। সব কিছু হারিয়ে উপায়ান্ত না দেখে শেষমেশ প্লাস্টিকে সংগ্রহের কাজকেই বেছে নেন আয়ের পথ হিসাবে। পুনর্ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক সংগ্রহ করেন ইদলিব প্রদেশের হেজরেহ গ্রামের একটি আবর্জনা স্তূপ থেকে। দুর্গন্ধ, পোকামাকড়, রোগের ঝুঁকি সহ্য করে খালি হাতেই আস্তাকুড় খুঁড়ে খুঁড়ে সংগ্রহ করেন প্লাস্টিকগুলো। এটাই এখন তার জীবিকা। তিনি ও তার দুই সন্তান মিলে সপ্তাহে আয় করেন ৭-১০ ডলার (১৭,৫৮৪-২৫,১২০ সিরীয় পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭০৩-১০০৪ টাকা)। কঠোর পরিশ্রম হলেও তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, অন্তত আবর্জনা থেকে তাদের আয় আসছে।’ ভ্রাম্যমাণ টোকাই, আবর্জনার গাড়ি ও বাচ্চাদের কাছ থেকে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য কেনেন উঠতি ব্যবসায়ী ফারহান স্লেইমান।

আবর্জনায় কাজ করার ফলে কলেরা বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সবার স্বার্থেই কাজটি অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ইদলিব প্রদেশের আরেকটি অংশের একটি কারখানায়ও তৈরি হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে পাটি ও মাদুর। যেখানে ৩০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কারখানার মালিক খালেদ লাশু (৩৪) বলেন, পাটি তৈরি একটি পারিবারিক ঐতিহ্য। মাদুর বিক্রিয়কারীদের মধ্যে একজন মোহাম্মদ আর কাসেম পাটিগুলোর জনপ্রিয়তা উল্লেখ করে বলেন, গ্রীষ্মকালে প্লাস্টিকের পাটির চাহিদা বেড়ে যায়, কারণ তারা কম তাপ ধরে রাখে।

গরম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিকের এই পাটিগুলো সাশ্রয়ীও বটে। সিরিয়ায় ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা।

100% LikesVS
0% Dislikes
Comments (০)
Add Comment