কৃষকের স্বপ্নের ধান কেটে সাবাড় করছে ইঁদুর |

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী:

চলছে আশ্বিন মাস। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সবুজ স্বপ্নের ছড়াছড়ি। আমনের শেষ মুহূর্তে ক্ষেতে ক্ষেতে ইঁদুর রাজত্ব শুরু করেছে। কাচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুরের দল। ইঁদুরের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষকেরা।
ইঁদুরের ক্ষত থেকে আমন ধান বাচাঁতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে ছুটছে কৃষকেরা। কিন্তু ইঁদুর মারতে কোন প্রযুক্তির ব্যবহার করবেন সে বিষয়েও কোন ধারণা দিতে পারছেনা কৃষি কর্মকর্তারা। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, আমনের যে কোন ব্যাধি থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা কমে। কিন্ত ইঁদুরের অত্যাচারে ক্ষেতে বিষ মাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। ক্ষেত থেকে ইঁদুর দুর করতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। তাই সরকারকে ইঁদুর দমনে নতুন প্রদ্ধতি আবিস্কার করতে হবে। যেন সকল কৃষক ইঁদুর থেকে রক্ষা পাই। না হলে ক্ষেতের অর্ধেক ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যাবে। লোকসানে পড়বে প্রান্তিক কৃষকেরা।
রাজশাহী জেলা উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ইঁদুর অতি চালাক প্রাণি। শুধু বিষ টোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধে দিলে ও রাতে ফসলের ক্ষেতে টায়ার পোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুর কিছুটা ভয়ে ক্ষেত ছেড়ে চলে যাবে। কৃষকদের সেই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধোঁনছা গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।
বরেন্দ্রোর উচু নিচু পটভূমি হিসাবে পরিচিত রাজশাহী গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা। এ দুই উপজেলায় বন্যার ও অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতেও জলাবদ্ধতা হয়না। তাই ধানসহ যে কোন ফসলের উপযোগী। এবছর দুই উপজেলায় প্রায় ৯৫ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে। আর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কৃষকের জমিতে কিছু না কিছু কাঁচা ধান কেটেছে ইঁদুর।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক রয়েল আলী চলতি বছর অন্যের পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমন চাষাবাদ করেছেন। এ বছর বাজারে ধানের দান দেখে মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। হয়তো এবার লাভের পাল্লা ভারী হবে। কিন্ত তার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে ইঁদুরের দল। তার ৫ বিঘা আমন ক্ষেতের প্রায় ১৫ শতক কাচা ধান কেটে সাবাড় করে দিয়েছে ইদুুর।
কৃষক রয়েল জানান, ইঁদুর তাড়াতে ক্ষেতের মাঝ খানে টিনের ঢোল ব্যবহার করেছি। সারারাত ঢোল বাজানো হয়। তবুও ইঁদুরের কাছ থেকে কাচা ধান রক্ষা করা যায়নি। যে পরিমান ধান কেটেছে ইঁদুর এতে করে তার ১৫ মণ ধান কম হবে বলে জানান তিনি। গোদাগাড়ী উপজেলার চাদন্দালায় গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, অন্য যে কোন বছরের চেয়ে চলতি বছর ইঁদুরের অত্যাচার বেশি। এ বছর তার ২৫ শতকের বেশি আমন ক্ষেতের কাচা ধান কেটে ফেলেছে ইঁদুর। রাতে ক্ষেতের পাশে পুরনো টায়ার পুড়ানো, পটকা ফোঁটানো, বিষ টোপ ব্যবহার করা করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছেনা। ধান ঘরে তুলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে অন্যসব বছরের চেয়ে এবার ইঁদুরের আক্রমণে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা হাজার হাজার কৃষকের কাঁচা-আধাপাকা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে। কৃষি কর্মকর্তারাও ইঁদুর মারার নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করতে পারছেনা।
এসব বিষয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক স্থানে ঝোপ-জঙ্গলের কারনে ইঁদুরের অত্যাচার বেশি। ইঁদুর অতি চালাক একটি প্রাণি। আমরা কৃষকদের নানাভাবে ইঁদুর নিধনের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও ইঁদুর নিধন কার্যকর্ম কিছু দিনের মধ্যে শুরু করা হবে। ক্ষেতের চার পাশে ঝোপ-ঝাড় পরিস্কার রাখার পরামর্শ দেন কৃষদের।

100% LikesVS
0% Dislikes
Comments (০)
Add Comment