একপেশে খেলায় বাংলাদেশকে ধরাশায়ী করলো নিউজিল্যান্ড।

বসির উদ্দিন আহমেদ,ঢাকা।

সমীকরণ :

টস: নিউজিল্যান্ড (বোলিং)
বাংলাদেশ:২৪৫/৯
নিউজিল্যান্ড:২৪৮/২(৪২.৫ ওভার)
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
সেরা খেলোয়াড়:লুউকি ফার্গুসন।

আজ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১১তম ম্যাচে চেন্নাইতে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। শক্তির মানদন্ডে নিঃসন্দেহে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে । নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই যথেষ্ট পরিশীলিত এবং পরিনত। বাংলাদেশ সেই তুলনায় এখনো পরিনত দল হয়ে উঠতে পারে নি।দল নির্বাচন নিয়ে যেমন বির্তক আছে তেমনি দলের একাদশ ঠিক করা এবং ব্যাটারদের ব্যাটিং পজিশন নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে । মেহেদী হাসান মিরাজ দলের অন্যতম পারফরমার হলেও সে নিজেই জানে না কোন দিন কোন পজিশনে ব্যাটিং করবে ।তাঁকে নিয়ে প্রতিনিয়ত এক্সপেরিমেন্ট করা হচ্ছে।মনে হচ্ছে যেন এটা বিশ্বকাপের ময়দান না ,কোন পাড়া মহল্লার ক্রিকেট লীগ চলছে ।এক‌ই অবস্থা নাজমুল হোসেন শান্ত কে নিয়ে।কখনো তিনে কখনো চারে ব্যাটিং করতে হচ্ছে দলের বর্তমানে ধারাবাহিক ভালো খেলা এই ব্যাটারকে।

বিশ্বকাপের আগেই যেখানে অন্যান্য দল তাদের সেরা একাদশ নির্বাচনে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে শক্তিশালী একাদশ বাছাই কাজ শেষ করেছে সেখানে বাংলাদেশ এখনো একাদশ‌ই ঠিক করতে পারেনি ।পনের সদস্য টিমে কোন ব্যাক‌আপ ব্যাটার রাখা হয়নি।অর্থাৎ ব্যাটাররা যত‌ই খারাপ খেলুক না কেন যেহেতু তাদের বিকল্প নেই তাই তাদের খেলাতেই হবে । একমাত্র শেখ মাহাদীর সাথে অদল বদল করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। অদ্ভুত এক টিম তৈরি করা হয়েছে ।ভারতের পিচ কখনোই পেস বান্ধব না , তারপরেও পাঁচ জন পেসার নেয়া হয়েছে ।

আজকের ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে যারা বসে আছেন সবাই বোলার । অদ্ভুত উটের পিঠে বাংলাদেশ।অথচ একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ যথেষ্ট সমীহ জাগানো দল । বিশ্বের সকল দেশের বিরুদ্ধে‌ই বেশ ভালো ভাবেই জয়ের রেকর্ড আছে ।এই বিশ্বকাপে ও আইসিসির রেঙ্কিন এ সাত নম্বর দল হিসেবে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে ।যেখানে একসময়ের সারাজাগানো দল এবং বর্তমানেও যথেষ্ট সমীহ আদায়কারী দল ওয়েষ্ট‌ইন্ডিজ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দরজা ও পেরোতে পারেনি। শ্রীলঙ্কাকে বাছাইপর্বের দরজা পেরিয়ে‌ই বিশ্বকাপের মতো আসরে খেলতে আসতে হয়েছে।অথচ সেই শ্রীলংকা কি ক্রিকেট খেলছে আর বাংলাদেশ!!! আফগানিস্তানে বিপক্ষে জয়ের পর যে ভাবে আমাদের খেলোয়াড় ও কোচিং প্যানেলের লোকজনের কথার ফুলঝুরি ফোটাতে ছিল মনে হচ্ছিল যেন বিশ্বকাপ‌ই জিতে গেছে ।

এশিয়া কাপের ব্যর্থতার পর কেউ কেউ এই বলে দেশের সমর্থকদের সান্ত্বনা দিয়েছেন যে,আমাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপ।অথচ হযবরল অবস্থা এখন বাংলাদেশের।অতি অন্ধ সমর্থক ও বাংলাদেশ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেনা।অথচ সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ও কেউ কেউ দেখিয়েছেন।

আজ টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই উচ্চ বিলাসী শর্ট খেলতে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে সময়ের অন্যতম সেরা বোলার ট্রেন্ট বোল্ট কে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস।এরপর অফফর্মে থাকা তানজিদ তামিম দুইটি চোখ ধাঁধানো বাইন্ড্রি মেরে ভালো শুরুর ইংগিত দিয়েও আবার ব্যর্থ হলেন ।ফর্মে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৬ বলে ৩০ রান ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৮ বলে ৭ রানে‌ বিদায় নিলে দলের বড় সংগ্রহের আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। কিন্তু মুশফিক ও সাকিব জুটি আবার বড় সংগ্রহের আশা জাগালেও সাকিব ৫১ বলে ৪০ রান কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। মুশফিক তার স্বভাবসুলভ ভালো খেলে খেলে হেনরীর নীচু হয়ে আশা বলকে ক্রস খেলতে গিয়ে ৭৫ বলে ৬৬ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান।

অনেক আলোচনা সমালোচনার খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলকে টেনে নিয়ে যান শেষ পর্যন্ত।১৩ বছর পর আটে খেলতে নামেন মাহমুদউল্লাহ।এর আগে ৪ বার তিনি আটে ব্যাটিং করেছেন ।।তিনি ২ টি ছক্কা ও ২ টি চারের সাহায্যে ৪৯ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত ছিলেন।মূলত মাহমুদউল্লাহর কারনে‌ই দলের সংগ্রহ ২৪৫ রানে গিয়ে থামে ।অথচ এই মাহমুদউল্লাহকে বিশ্বকাপের দলে রাখা না রাখা নিয়ে কত‌ই না নাটক হয়েছে। আফগানিস্তানের সাথে ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও পরবর্তী ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথেই তাঁকে একাদশের বাইরে রাখা হয় ।আজব সব কাজকারবার।সব খাঁজ কাঁটা খাঁজ কাঁটা ।

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ফার্গুসন ৪৯ রানে ৩ টি এবং হেনরি ৫৮ রানে ২ টি ,ট্রেন্ট বোল্ট ৪৫ রানে ২ উইকেট সংগ্রহ করেন ।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলের তৃতীয় ওভারেই ১২ রানের মাথায় মুস্তাফিজুর রহমানের বলে রাচিন রবীন্দ্র উইকেট কিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন।কন‌ওয়ে সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন।তিনি ৫৯ বলে ৩ টি চারের সাহায্যে ৪৫ রান সংগ্রহ করেন।অন্যদিকে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আঘাত জনিত সমস্যার কারনে গত জানুয়ারির পর আজ প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেও অনুপস্থিত ছিলেন।নিজের প্রিয় পজিশন তিনেই তিনি ব্যাটিং করে ৮১ বলে ৫ টি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্যে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে দলের ভিত্তিকে মজবুত করেন ।সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে চালকের আসনে নিয়ে আসেন উইলিয়ামসন।দলীয় দুইশত রানের মাথায় তিনি আহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন। তিনি ১০৭ বলে ৮ টি চার ও১টি ছয়ের সাহায্যে ৭৮ রান সংগ্রহ করেন।দলকে নিরাপদ বন্দরে রেখে যান তিনি।বাকি কাজটুকু সমাধা করেন মিচেল ও ফিলিপস।মিচেল ৬৭ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন।এই রান করতে তিনি ৬টি চার ও ৪টি ছয়ের মার মারেন।

যতটা টার্নি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল ততটা টার্ন বোলাররা পাননি।২৪৫ রান এই রকম পিচে সাধারণ মানের রান‌ই বলা চলে ।এই ধরনের উইকেটে তিনশোর নীচে রান কম‌ই বলা যায়।আর বাংলাদেশের যে ব্যাটিং লাইন আপ তা দিয়ে তিনশোর কোটা পার হ‌ওয়া দুষ্কর। যেহেতু ব্যাটাররা রান তুলতে পারে নি তাই এই ধরনের পিচে বোলারদের অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কোন গতি নেই ।বাস্তবে তাই হয়েছে ।এখনো মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহকেই দলের জন্য পারফর্ম করতে হয় ।তাহলে গত পনের বছর ধরে দলের অর্জনটা কি ?এই পনের বছরেও দলের‌ জন্য নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় বের করে আনতে না পারাটা দলের জন্য এবং দেশের জন্য দূর্ভাগ্যজনক বলতে হয় ।অথচ এই পনের বছরে কত কীর্তিমান খেলোয়াড় দেশে দেশে‌ জন্মেছে । বর্তমান বিশ্বে অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড় মুশফিক, সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহ।

100% LikesVS
0% Dislikes
Comments (০)
Add Comment