মোঃ শামসুর রেজা তুষার
“আমি যখন মোটামুটি ভাল একটা চাকরি করি, তিন বেলা পেট ভরে খেয়ে আরামে বেঁচে থাকার মত অবস্থা আমার আছে — তখন আমার মাথায় চিন্তা আসে, লকডাউন দেয়া উচিত. … কারণ এই লকডাউনে আমার তেমন কোন ক্ষতি হবে না … যেহেতু আমার খেয়ে পরে বাঁচা নিয়ে সমস্যা নাই, করোনার সংক্রমণই আমার জন্য টপ প্রায়োরিটি !!
এই আমিই যখন শপিং মলে একটা কাপড়ের দোকান চালাই কিংবা টিউশনি করি কিংবা পাঠাও-উবার চালিয়ে পরিবার সামলাই, লকডাউন আমার জন্য বিভীষিকার মতই … আগামীকাল আমার ভাতের ব্যবস্থা হবে কিনা আমি জানি না, করোনার সংক্রমণ আমার জন্য অনেক পরের চিন্তা !!!
একজন ইন্টার্ন ডাক্তারের স্টেটমেন্ট …
গত রাতে হাসপাতালে বসে সামান্য অক্সিজেনের অভাবে চোখের সামনে হাঁসফাস করে অনেকগুলা মানুষকে মরে যেতে দেখেছে … আই.সি.ইউ খালি নাই … একজন তার মা কে নিয়ে এসে ডাক্তারকে বলছে, “আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো, আমার মা কে একটু অক্সিজেন দেন” … ডাক্তার খুবই অসহায়, কাকে রেখে কারে বাঁচাবেন, এত লোকের অক্সিজেনের কোনো ব্যবস্থা নাই হাসপাতালে !!
যার পরিবারে করোনা থাবা মেরেছে তার কাছে করোনার সংক্রমণ একটা ভয়াবহ কনসার্ন, কারণ সে চোখের সামনে করোনার ভয়াবহতা দেখেছে … যারা চোখের সামনে ভয়াবহতা দেখে নাই, যারা কাছের মানুষটাকে এই হাঁসফাস করতে করতে মরে যেতে দেখে নাই, তাদের কাছে এই রোগ নিয়ে সিরিয়াস চিন্তাটা আসে না, আসবেও না ….
মানুষের সাইকোলজিটা এমনই !!!
একজন তার বেতনের টাকা দিয়ে আজকে তার মাকে দাফন করে আসলো, তার কাছে টাকাপয়সা এখন ভীষণ তুচ্ছ !!!
যার কপালে আজকে দুপুরে ভাত জোটে নাই, তার কাছে করোনা ঠিক তেমনই তুচ্ছ !!
আসলে আমরা কে ভুল? কে-ই বা সঠিক?
কোন চিন্তাটা সত্য? কোনটাই বা মিথ্যা?
কাকেই বা আমি জাস্টিফাই করবো?
আমরা নিজের জীবনের গল্প দিয়ে পুরো পৃথিবীটাকে দেখি … অথচ এই এক পৃথিবীতে অসংখ্য অদেখা গল্পরা ভেসে বেড়ায় … কারো গল্পে ক্ষুধা, কারো গল্পে বিলাসিতা, কারো গল্পে দীর্ঘশ্বাস, কারো গল্পে হাহাকার — যার যার গল্প, তার তার কাছে তীব্র সত্য !!!
এতকিছুর পরেও আমাদের সবার জীবনের একটা ধ্রুব সত্য কি জানেন?
আমরা বাঁচতে চাই … আমরা ক্ষুধাহীনভাবে বাঁচতে চাই, প্রিয় মানুষটাকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, সুস্থভাবে বাঁচতে চাই, হাসিমুখ নিয়ে বাঁচতে চাই … বেঁচে থাকার তাগিদেই আমাদের এত সব যুদ্ধ, এত সব গল্প !!