হালদা নদীর পাড়ে স্থাপিত হবে আরো ৬টি আধুনিক হ্যাচারি

১৮৫

মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন,হাটহাজারী প্রতিনিধি: হালদা নদীর পাড়ে নতুন করে আরো ৬টি আধুনিক মানের হ্যাচারি নির্মাণ করা হবে এবং হালদা নদীর পাড়ে বর্তমানে অবস্থিত পুরাতন ৬টি হ্যাচারিকেও নতুন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের দুর্ভোগের ভোগান্তি কমে গিয়ে সহজলভ্যতায় নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজননের পাশাপাশি রেণু উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধাও। তারই ধারাবাহিকতায় নির্মাণের প্রথম বছরে সুফল মিলছে বেসরকারিভাবে নির্মিত হালদা পাড়ের আইডিএফ’র হ্যাচারি।

উল্লেখ্য, হালদা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় হালদা নদীর উভয় পাড়ে বিগত সময়ে ৬টি হ্যাচারি নির্মাণ করে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রায় এক যুগ আগেই নদীর উভয় পাড়ে চালু হওয়া এসব হ্যাচারি গুলোর অবস্থান হচ্ছে রাউজানের কাগতিয়া, গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরা এবং হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাটের বড়ুয়াপাড়ায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোন না কোনটি হ্যাচারিতে নির্মাণগত ত্রুটি, চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়া, মিঠা পানির সরবরাহ অব্যবস্থাপনা, কুয়ার কাজের সংস্কার, দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনায় তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম সংগ্রহকারীরা। এরই মধ্যে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রাউজানের কাগতিয়ায় স্থাপন করা হ্যাচারিটি। যা অনেকটা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিও। মৌসুমের এমন সময়ে এসে ভোগান্তির মাঝে পড়ে রেণু উৎপাদন করতে গিয়ে এমনি দুর্দশার অভিযোগ নিয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীদের।

বর্তমানে রাউজানের গহিরার মোবারকখীল, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাটের বড়ুয়া পাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও সেগুলোর নিয়মিত সংস্কারের অভাব এবং অন্যান্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শাহ মাদারি হ্যাচারি থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম আহরণকারীরা। যার ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ২৭ মে হালদা নদী থেকে প্রথম দফায় ডিম আহরণের পর হ্যাচারীতে রেণু ফোটাতে গিয়ে শাহ মাদারি হ্যাচারিতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা। পূর্বে থেকে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শুধুমাত্র হ্যাচারিতে নিজস্ব মিঠা পানি সংগ্রহে রাখার জন্য পুকুর ও গভীর নলকূপ না থাকায় হালদার লবনাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে বেশিভাগ রেণু মরে যায়। এতে ক্ষতির শিকার হয় ডিম সংগ্রহকারীরা। এ অবস্থা থেকে স্থায়ীভাবে নিরসনের লক্ষ্যে বর্তমানে পূর্বের ৬টি হ্যাচারিকে সংস্কার করে আধুনিকায়নের পাশাপাশি নতুন করে হালদা নদীর উভয় পাড়ে আরো ৬টি হ্যাচারি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

এদিকে বর্তমানের ৬টি হ্যাচারি ছাড়াও হালদাতে চলতি বছর থেকে চালু হয়েছে একটি নতুন হ্যাচারি। যা রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী এলাকায় নদীর পাড়ে ৪ একর জমির উপর হ্যাচারিটি নির্মাণ করে বেসরকারি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। নতুন এ হ্যাচারিতে ১০টি পাকা সিস্টার্ণ, ৮টি মাটির কুয়া এবং ৫টি পাকা সারকুলার ট্যাংক এবং সুবিশাল পুকুরও রয়েছে। জানা যায়, রেণু ফোটানো ছাড়াও এ হ্যাচারিতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের উদ্যোক্তারা।

এদিকে সরকারিভাবে নতুন আরো ৬টি হ্যাচারি নির্মাণের প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী বলেন, হালদা পাড়ে নতুন করে আরো ৬টি আধুনিক মানের হ্যাচারি নির্মাণ এবং পুরাতন ৬টি হ্যাচারিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ও রেণু উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাবে।

নতুন হ্যাচারি নির্মাণের প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ডঃ মোঃ মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদায় নতুন হ্যাচারি নির্মাণে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। সাধারণত আমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমাতে হালদাতে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়ে নদীতে জোয়ারের পানিতে লবণ পানি প্রবেশ করে। তাই প্রতিটি হ্যাচারিভিত্তিক পুকুরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যাতে ডিম সংগ্রহকারীরা রেণু ফোটানোর সময় নদীর পানির পরিবর্তে পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারে।’

এদিকে আইডিএফ’র জোনাল ম্যানেজার শাহ আলম বলেন, ‘পশ্চিম বিনাজুরীর আইডিএফ’র হ্যাচারিতে চলতি বছর প্রথম দফায় ৩৮০ কেজি ডিম দেওয়া হয়। এসব ডিম থেকে ১২ কেজি রেণু উৎপাদন হয়। দ্বিতীয় দফায় ২২০ কেজি ডিম দেওয়া হয়েছে। রবি ও সোমবার রেণুর পরিমাণ জানা যাবে। ডিম সংগ্রহকারীদের এ হ্যাচারিতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’

আইডিএফ’র নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম বলেন, ‘হালদা দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী কাজ করছে আইডিএফ। এর পাশাপাশি রুই জাতীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধিসহ হালদার সুফল বাড়ানোর লক্ষ্যে আইডিএফ’র হ্যাচারিটি নির্মাণ করে। এ হ্যাচারিতে গবেষণা, প্রশিক্ষণসহ বহুমুখী কাজ থাকবে। যাতে হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা উপকৃত হয়।’

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.