সেনাসদস্যের সাথে ফেসবুকে পরিচয়ে বিয়ে তারপর ৬ মাস পর হত্যা!

৩৩৯

 

মোঃ হাসিবুর রহমান, গৌরনদী প্রতিনিধি।

বরিশালের গৌরনদীতে বগুড়ার কলেজছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর প্রথমবারের মতো নিজেদের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন সেনাসদস্য স্বামী।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ওই সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বরিশালের বাবুগঞ্জে একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত তরুণীর লাশের অংশবিশেষ, ব্যবহৃত ওড়না ও মুঠোফোন উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি দুই এলাকাতেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। নিহত তরুণীর নাম নাজনিন আক্তার (২৪)।

তিনি বগুড়া সদরের সাব গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল লতিফের মেয়ে। পড়াশোনা করতেন বগুড়া সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সাকিব হোসেন (২৪)। তাঁর গ্রামের বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামে।

বাবা ভ্যানচালক করিম হাওলাদার মা ও বোনকে নিয়ে গৌরনদী বাটাজোর হরহর গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়ার বাড়িতে একটি টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সাকিব সেনাসদস্য হিসেবে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। নিহত নাজনিনের পরিবার ও পুলিশ জানায়, নাজনিনের সঙ্গে ফেসবুকে সাকিব হোসেনের পরিচয় হয়। পরে সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক এবং পরে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁরা শরিয়ত মোতাবেক এবং ১ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। দুজনই বিয়ের কথা গোপন রাখেন।

পরে দুই পরিবারে জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার প্রথমে বিয়ে মেনে না নিলেও পরবর্তী সময়ে মেনে নেয়। তবে বিয়ের কাবিননামায় সাকিব প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে নিজের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ‘জালোকাঠি’ গ্রাম, পোস্ট আগৈলঝাড়া উল্লেখ করেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ সেনাসদস্য সাকিবের ছুটি বাতিল করে ২৮ মে কর্মস্থলে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিন হাজির হলে সাকিবকে সেনা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী নাজনিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান জানান, গত ৩ মে সাকিব কর্মস্থল বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক মাসের ছুটি নেন এবং বগুড়ায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করেন।

২৪ মে সকালে সাকিব স্ত্রীকে বলেন, তাঁর বাবা গুরুতর অসুস্থ। মা–বাবা তাঁকে দেখতে চান। এ কথা বলে শ্বশুরবাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে স্ত্রী নাজনিনকে নিয়ে তিনি বরিশালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। ওই দিন বিকেলে নাজনিনের পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরে মেয়ে-জামাতাকে না পেয়ে মুঠোফোনে ফোন করলে সাকিব একেক সময় একেক কথা জানান। রাত ১১টার দিকে নাজনিনের পরিবার ফোন দিলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

২৬ মে সকালে নাজনিনের বড় ভাই আবুল আহাদ বগুড়া সদর থানায় বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন। পুলিশ বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টকে জানায় এবং ২৭ মে নাজনিনের বড় ভাই আহাদ নিজেও বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ বরিশাল গৌরনদী মডেল থানা-পুলিশের সহায়তায় আজ অভিযুক্ত সাকিব হাসানকে নিয়ে লাশ উদ্ধারে বের হয়ে পাম্প দিয়ে ট্যাংকের পানি সেচ করে দুপুরে লাশের আংশিক, ব্যবহৃত একটি ওড়না, মুঠোফোন উদ্ধার করেছে।

লাশের বাকি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ সেনাসদস্য সাকিবের ছুটি বাতিল করে ২৮ মে কর্মস্থলে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিন হাজির হলে সাকিবকে সেনা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী নাজনিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

পরবর্তী সময়ে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ সাকিবকে বগুড়া থানায় সোপর্দ করে। পরে পুলিশের কাছে সাকিব খুনের দায় স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ২৪ মে রাত ১০টার দিকে স্ত্রী নাজনিনকে নিয়ে তিনি বাবার ভাড়া বাসায় পৌঁছান। সেখানে টিনের জীর্ণশীর্ণ ঘরে উঠলে স্ত্রী তাঁর কাছে জানতে চান, প্রেমের সময় তিনি বাবার বাড়ি পাঁচতলা বিল্ডিং বলেছিলেন।

তবে এখন কেন এখানে উঠলেন? এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে সাকিব নাজনিনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ মে রাত ১২টায় তিনি স্ত্রী নাজনিনকে প্রথমে গলায় রশি পেঁচিয়ে, পরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে নাজনিনের লাশ গলার ওড়না দিয়ে টেনে নিয়ে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনসহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।

নিহত নাজনিনের বড় ভাই আবুল আহাদ (৩০) বলেন, সাকিব বিয়ের কাবিননামায় মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তাঁর বাবা এলাকার একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং গ্রামে তাঁদের পাঁচতলা বাড়ি আছে বলে তাঁর ছোট বোন নাজনিনকে জানিয়েছিলেন।

গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, বগুড়া সদর থানার পুলিশ মডেল থানা-পুলিশের সহায়তায় আজ অভিযুক্ত সাকিব হাসানকে নিয়ে লাশ উদ্ধারে বের হয়ে পাম্প দিয়ে ট্যাংকের পানি সেচ করে দুপুরে লাশের আংশিক, ব্যবহৃত একটি ওড়না, মুঠোফোন উদ্ধার করেছেন তাঁরা।

লাশের বাকি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর থেকে সাকিবের মা–বাবা ও বোন পলাতক রয়েছেন। সাকিবের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে খুনের পুরো ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি।

67% LikesVS
33% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.