মেহেদী হাসান সজীব, ডেস্ক রিপোর্টঃ গতকাল ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ঘটনা কে যেকোনো ক্রিকেট প্রেমিকেই নাড়া দিবে। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টিতে মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে মেজাজ হারিয়ে লাথি দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন সাকিব। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার ইমরান পারভেজ। এতেই রেগে লাথি মেরে স্টাম্প ভাঙেন সাকিব। পরের ওভারেই শুভাগত হোমের বোলিংয়ের সময় বৃষ্টি নামলে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিলে সাকিব নিজের হাতে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় সাকিব ও আম্পায়ারের মধ্যে। এরপর ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদের সঙ্গেও তর্কে জড়ান সাকিব। যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ফেসবুক পেজে ক্ষমা চান সাকিব এবং ড্রেসিং রুমে গিয়ে ক্ষমা চান খালেদ মাহমুদের কাছে।
এখন প্রশ্ন হল সাকিব কি আসলেই দোষী? ক্রিকেট ভদ্র তো মানুষের খেলা সে হিসেবে সাকিব কে অবশ্যই অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করানো যায়৷ কিন্তু সাকিব কে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে শাস্তি দিলেই কি সকল সমস্যার সমাধান হবে! বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্নীতি তো নতুন কিছু না। এসব তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে বছরের পর বছর হয়ে আসছে সাকিবের মত কতজনই বা এভাবে প্রতিবাদ করতে পেরেছেন? আর প্রতিবাদ করবেনই বা কি করে দেশের কয়েকটি ক্রিকেট ক্লাবের পেছনে আছে রাজনৈতিক অদৃশ্য এক শক্তি। যেটা দিয়ে খুব সহজেই নিজেদের মত করে ক্রিকেট কে ফিক্সিং করে ম্যাচ জয় পরাজয় নির্ধারণ করছে।
এর আগে ও অসংখ্যবার ক্রিকেট মাঠে আম্পায়ার, ম্যানেজমেন্ট কর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির, ম্যাচ ফিক্সিং এর অভিযোগ উঠেছিল। বিসিবি তখন কতটা ব্যবস্থা নিতে পেরেছে? আর কয়টা ম্যাচ বিসিবি তদন্ত করেছে সেটা ও দেখার বিষয়। হয়ত গতকাল সাকিবের প্রতিবাদের ধরন টা ছিল একদমই অপেশাদার কিন্তু অন্যদিকে যদি ভেবে বলা হয় তাহলে সাকিবের বউয়ের মত বলতে হয় সাকিবের কালকের প্রতিবাদ আম্পায়ারিং এর বিরুদ্ধে নয় প্রতিবাদ টা যেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আসলে গতকালের ঘটনায় বিসিবির উচিত হবে সাকিব কে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার আগে গতকালের ম্যাচে যে ঘটনা ঘটলো সে ঘটনার পেছনের কারন জানার, নাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক ভয়াবহ অশনিসংকেত অপেক্ষা করছে। হয়ত ঘটনা টা তদন্ত করে সঠিক ব্যাবস্থা নিতে পারলে সাকিবের প্রতিবাদের জায়গা টা সফল আর সার্থক হবে। টেনে ধরা যাবে ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্নীতির লাগাম।
গতকালকের ঘটনায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি পরিচালক ও সিসিডিএম প্রধান কাজী ইনাম জানান, সাকিবের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। দেখেন খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। আজকে আবাহনী-মোহামেডানের খেলা ছিল এবং এখানে বেশ উত্তেজনা ছিল, কিছু ঘটনাও ঘটেছে। সাকিব আল হাসানকে আমরা দেখতে পেয়েছি। এটা ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব লাইভেও ছিল। তাই আপনারা সবাই দেখতে পেয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে উত্তপ্ত একটি মুহূর্ত এসে যেতে পারে, কিন্তু আমরা আশা করি, সবসময় খেলোয়াড় তাদের মেজাজ ধরে রাখবে। যাই হোক, এটা স্বীকৃত ম্যাচ, এখানে নিয়ম আছে। ম্যাচ রেফরি, আম্পায়ার্স, তারা একটা রিপোর্ট দিবেন। আশা করছি, আজ তাদের রিপোর্ট আসবে। সব রুলস কিন্তু আছে, কোনো নিয়ম ভাঙলে নিয়ম অনুযায়ীই সব হবে। কাজী এনামের এমন বক্তব্যর পরই বুঝা যাচ্ছে সাকিব বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
এদিকে গতকালের এই ঘটনায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য পোস্ট হয়েছে। কিন্তু তাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় একটা অংশই মনে করে সাকিবের প্রতিবাদ টা যথার্থ ছিল। কিন্তু সাকিবের মত এতো বড় বিশ্ব মানের একজন ক্রিকেটার দ্বারা এমন আচারণ অনেকটাই অপেশাদার মুলক। হয়ত সাকিবের প্রতিবাদের ধরন টা অন্য ভাবে হলেও হতে পারত। তবে সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় একটা অংশই মনে করে ঘরোয়া ক্রিকেটে বার বার এতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাকিবের প্রতিবাদ টা যেন যথার্থই।ক্রিকেট মাঠে সাকিবের এমন আচরণ যে অশোভনীয়, তা মানছেন ক্রিকেটবোদ্ধা, ভক্তসহ প্রায় সবাই। কিন্তু অনেকে বলছেন, সাকিব লাথি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দৈন্যদশা। পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং যে ঘরোয়া ক্রিকেটকে দিনের পর দিন কলুষিত করছে, সাকিবের আচরণকে তারই প্রতিবাদ বলছেন অনেকে।