শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ছুটে চলা এক যুবক

২৪৪

মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন,হাটহাজারী: ছবিতে প্রদর্শিত যুবকটি যে নিজেই শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও তার ভিতরে রয়েছে প্রতিবন্ধী তকমাটা ঝেড়ে ফেলতে অধম্য মনের সাহসে সামাজিকভাবে নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ছুটে চলার নিত্যদিনে আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেকে বদলানোর স্বপ্নে বিভোর থাকা প্রতিবন্ধী মোঃ সালাউদ্দিন।

উল্লেখ্য গত পরশুদিন সকালে আমি হালদা নদীতে নিউজ সংগ্রহ করতে গেলে গড়দুয়ারা রশিদ পুকুর পাড় সংলগ্ন রাস্তায় হঠাৎ করে তার ছুটে চলার এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে তার মতামত নিয়ে প্রথমে ভিডিও এবং পরে কিছু ছবি তুলে তা আমি একজন মানবিক (দেখাও মানবিক হাটহাজারী) মেখল ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার আইডিতে তাকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরলে পরবর্তীতে সেখানের পরিচিত অপরিচিত সকলের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়ে এবং পরিশেষে দৈনিক সাহসী কন্ঠ পত্রিকার শ্রদ্ধেয় সম্মানিত মুখপাত্র ও অন্যতম মানবিক পৃষ্ঠপোষক শ্রদ্ধেয় জনাব মোঃ আব্দুল্লাহ্ আল নোমান ভাইজানের বিশেষ অনুরোধে তাকে দৈনিক সাহসী কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশ করতে উদ্যোগী হওয়ার ভূমিকা পালন করি।

তারই অংশ হিসেবে আজ সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে দেখতে পাই, প্রতিদিনের মতো আজও শুক্রবার সকালে সে গড়দুয়ারা জোরপুকুর পাড়ের দোকানে মোবাইল কার্ড সাথে হাতে বহন করে থাকা ভারী জিনিসপত্রের ব্যাগ থেকে সেলস্ সার্ভিস দিয়ে এসেছে!! এর কিছু সময় পরে ঘরে গিয়ে বসি এবং তার পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে সে বলে। আমার নাম মোঃ সালাউদ্দিন, স্থানী ঠিকানাঃ হানিফ তালুকদার বাড়ি, ৯নং গড়দুয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড।

এক সময়ে তিন বছর আগে অস্থায়ী বসবাস ছিলো গড়দুয়ারা ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডের আব্বাস তালুকদার বাড়িতে নানার ভিটাতে অস্থায়ী বসবাস ছিলো।

সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমানে হানিফ তালুকদার বাড়িতে বাবা (প্রবাসী) মোঃ জামাল উদ্দিনের পৈত্রিক ভিটায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়, বোন বড় ছোট ভাই হাফেজে কোরআন। এসময়ে সরকারি ভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে কোন ভাতা পায় কিনা সেটা জানতে চাইলে সে বলে! মাসিক বরাদ্দকৃত সরকারি ভাতার ৭৫০টাকা হারে ছয় মাস অন্তর এককালীন ৭৫০×৬= ৪৫০০/= টাকা মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করে থাকে।

এছাড়াও বর্তমানে যে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে হাটহাজারী থানার অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিয়ন, যথা মির্জাপুর মুহুরি হাট হয়ে গুমান মর্দন, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, মেখল, গড়দুয়ারা, মাদার্শা ইউনিয়নের বাজার ও রাস্তা ঘাটে অবস্থিত দোকানেতে সেবা দিতে গিয়ে কাঁধের মধ্যে মোবাইল কার্ডের ব্যাগ ঝুলিয়ে এবং হাতে ভারী জিনিসপত্রের ব্যাগ নিয়ে মাইলের পর মাইল হেটে যাওয়ার কারনে ক্লান্তিতে নেয়ে ঘেমে পর্যদুস্ত হয়ে পড়ার পরেও তার চোখে মুখে কখনো কষ্টের ছাপ বহন করেনা। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলার অধম্য মনের একান্ত প্রচেষ্টায় কষ্টের কথার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে সে বলে! আমি শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও সামাজিকগত ও অন্য কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা আমাকে দমাতে পারেনি, আর আমাকে আজ কাল যেমন দেখেছেন তেমনি ভাবে আমি প্রতিনিয়ত নিত্য দিনে অবিরাম ক্লান্তিবিহীন ছুটে চলি আগামীতে নিজেই উদ্যোগী হয়ে ভালো কিছু কাজ করার দৃঢ় প্রত্যাশায়। এবং সেই সাথে আমি আপনার মাধ্যমে সাহসী কন্ঠ পত্রিকায় আমার কিছু আক্ষেপের কথা বলতে চাই!! এলাকাতে আমার যথেষ্ট ভালো পরিচিত ও বিভিন্ন প্রকার মানবিক কাজের সুনাম অক্ষুণ্ণ আছে, এবং আগামীর দিনগুলিতে তা অব্যাহত আছে থাকবে সে বিশ্বাস আমার আছে।

সেই সাথে আমি আশা করবো দেশে যত প্রতিষ্ঠিত মানবিক কল্যাণের জন্য মানব সমাজের সেবাই নিয়োজিত আছে এবং সুদূর প্রবাসে যারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তাদের সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি!! আপনারা আমার এভাবে হেটে চলার কষ্টের কারন দেখে আমাকে মোটরসাইকেল কিনে না দিয়ে সেই টাকা গুলো পাঠিয়ে দিলে আমি আগামী নামমাত্র স্বল্প বেতনে চাকরি না করে নিজেই উদ্যোগী ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীর নানান প্রতিবন্ধকতার ক্লান্তির অস্বস্তির জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সহযোগিতা কামনা করছি।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.