রাজনীতি ও মিডিয়ার বাঁকা পথে জনজীবন ( পর্ব-১)

৩০

 

মো: রফিক ভূঁইয়া খোকা

আমাদের দেশে একটি কথার প্রচলন আছে – শীল-পাটার ঘষাঘষি মরিচের সর্বনাশ। জাতীয় -আন্তর্জাতিক, প্রাকৃতিক -অপ্রাকৃতিক কিছু ঘটলেই দেশে বিদ্যমান কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দল, তেলবাজ মিডিয়া ও চাটুকার সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী ওঠে-পড়ে, আদা-জল খেয়ে লেগে বসে কীভাবে নিজেদের থলে ভারী করা যায়, আনুকূল্য অর্জন হয়। পৃথিবীময় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেখানে বিশ্ব মোড়লদের নাভিশ্বাস এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য গবেষকদের দু:শ্চিন্তা সেখানে আমাদের দেশের চিরাচরিত রাজনীতি ও মিডিয়ার যাঁতাকলে পিষ্ট বেসামাল জনসাধারণের অর্থকষ্টে দিনাতিপাত যেন জনজীবনেরই সর্বনাশ ছাড়া কিছু নয়।

পুঁজিপতিদের এখানেও ব্যবসা। কোন কোন রাজনৈতিক দলের জন্য করোনা ভাইরাস সাপে বর হয়ে আশীর্বাদ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সকল প্রকার মিডিয়াতে করোনার ওপর নানা জাতের-প্রজাতের খবর প্রকাশ। নতুন করে যোগ হয়েছে।
ভারতের বহুল আলোচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র ঘটে যাওয়া জটিলতা, বিক্ষোভ, প্রাণহানী। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে ভারতের অবদানের মূল্যায়নস্বরুপ মুসলিম বিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদীকে না এনে সে দেশেরই অন্য কোন বিশিষ্ট রাজনীতিককে আমন্ত্রণ জানালে হয়তো এমটা হতো না। যাহোক অবশ্য নারাণগঞ্জের রিসোর্ট সেন্টারে ঘটে যাওয়া পরবর্তী ঘটন- অঘটন মোদী এ দেশে কী দিয়ে গেল আর কী নিয়ে গেল সে আলোচনাকে পেছনে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা হুজুগে বাঙ্গালি বলে আমাদের কর্মলিপিতে একটি তকমা লাগানো আছে।

সে কারণেই হয়ত সময়ে-সময়ে, যুগে-যুগে হুজুগে জাতি হিসেবে ভূষিত হওয়ার সনদপ্রাপ্তির পর থেকেই বেশি করে আজ এ ঘটনা কাল অন্য ঘটনা নিয়ে মেতে থাকি। আবার পরে নতুন ঘটনার অবতারণা হলে পরের ঘটনা নিয়ে হৈচৈ করি। ভাবি না, যাচাই-বাছাই করি না যদি হুজুগের খেতাবটা হাতছাড়া হয়ে যায় সেই ভয়ে। আবার জাতে-জাতে না মিললে ইষ্টি (আত্মীয়) হয় না। হুজুগ জাতির জন্য এ দেশের মানানসই এমন রাজনৈতিক দল ও মিডিয়া আছে তারা তাদের।

নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ও লাভজনক পুঁজি খাটাতে কোন ঘটনা না থাকলেও নতুন করে ঘটনার অবতারণা করবে যাতে তাদের পূর্বের ঘটনার থলের বিড়াল থলে থেকে বের হতে না পারে। বিড়ালের মিও-মিও শব্দ কারো কানে না পৌঁছে কিংবা নতুন ঘটনা দিয়ে মূল ঘটনাকে আড়াল করে ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরানো যায় ইত্যাদি। দুষ্টু চক্রের দুষ্টামির শেষ নেই যেমন চোরে শুনে না ধর্মের কাহিনী।

সেদিন গ্রামের এক সাধারণ লোক বলল, পেপার-পত্রিকায় কি মিছা (মিথ্যে) কথা লেখে? তার কথা শুনে আমি হতবাক। আবার ভালও লাগল মিডিয়ার প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাসের কথা শুনে। কিন্তু বিপরীতে আমাদের মিডিয়া ও মিডিয়ার সাথে জড়িতরা সাধারণ মানুষের সে বিশ্বাস কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি?

কতটা পারছি সত্য ও যথার্থ প্রকাশে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করতে? ব্যক্তি, দল, মতের ঊর্ধ্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের মিডিয়াগুলো কি পরিচালিত হচ্ছে? আমরা সাংবাদিকরা কি তেলবাজি আর হলুদ সাংবাদিকতার বেষ্টনি থেকে বের হতে পারছি? অধিকন্তু অপরদিকে স্বাধীনতা উত্তোর বাংলাদেশে আমরা জনগণ রাজনীতিতে ত্রিভুজ প্রেমের টানাপড়েনে পরে আছি। কোন ক্ষমতাসীন দল যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক তার প্রশংসার জুরি নেই। বিভিন্ন মিডিয়া ও মিডিয়া কর্মী-প্রতিনিধি সেই সরকারের গুণ কীর্তনে পঞ্চমুখ থাকে।

আবার ক্ষমতার মসনদ উল্টে গেলে তথাকথিত সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদেরও পাল্টে যায় সুর। নিজেদের স্বার্থ হাসিল আর পরবর্তী সরকারের আনুকূল্য হারানোর ভয়ে সকাল-সন্ধ্যায় মতের-লেখার পরিবর্তনের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ওঠে-পড়ে লেগে যায়। সরকার চিন্তা করে ক্ষমতায় আসা থেকে শুরু করে আমাদের কর্মকাণ্ড বুদ্ধওজীবীমহল থেকে আপামর জনসাধারণ পর্যন্ত পূর্বের তুলনায় গ্রহণযোগ্যতা অনেক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা সর্বমহলের এত প্রশংসা কেন? ইহা তেলবাজি না যথার্থ প্রশংসা তা বোধের পরিসীমার আড়ালেই থেকে যায়।

নবী-রাসূল ছাড়া কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়,পাপ করা থেকে মুক্ত নয়।
যে কোন লোকের অন্যায়- অপরাধ হয়, হতে পারে। তার জন্য যথার্থ আইন ও বিচার আছে। অপরাধীর শাস্তি -পরিত্রাণ সে অনুযায়ীই হবে। মামুনুল হকের বিষয়ে আইন ও তদসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া আমাদের এত হৈচৈ, হট্টগোল কেন?

50% LikesVS
50% Dislikes
২ Comments
  1. Khandokar Mofizur Rahman says

    I am interested to be a reporter of yours. I will be impressed if you have any opportunity. Thank you

    1. Editor says

      ধন্যবাদ, দৈনিক সাহসী কন্ঠের সঙ্গেই থাকুন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.