রাজনীতি ও মিডিয়ার বাঁকা পথে জনজীবন ( পর্ব-২)

৩২

 

মো: রফিক ভূঁইয়া খোকা

আর তিনি আমার – আপনার মতো সাধারণ মানুষ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার মস্ত বড় হাদিস বিশারদ আল্লামা আজিজুল হক (রহ)-এর ছেলে। তিনি নিজেও বড় মাপের একজন আলেম ও ওয়ায়েজ (বক্তা)। তার মতো উঁচু মাপের ধার্মিক ব্যক্তি যদি বর্তমানে আলোচিত এরুপ ন্যাক্কারজনক কাজ করে থাকে তবে ইহা বাংলাদেশের মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ লজ্জা রাখব কোথায়! এ নিয়ে যতই ঢাক-ঢোল পেটাই তাতে দেশে ও দেশের বাহিরে মুসলিম জাতি হিসেবে আমাদের মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, থুবড়ে পরবে ; এতে বাড়বে না ইজ্জত। এ নিয়ে দেশব্যাপী হাঁটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে গোলযোগ, তর্ক-বিতর্ক,মারামারি-সংঘর্ষ বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং তা অশুভই বয়ে আনবে। আর তাকে নিয়ে ঘটে যাওয়া বিষয়টা যদি তার প্রতি মিথ্যে অপবাদ হয়, চক্রান্ত হয় তবে এর পরিণতি আরো মারাত্মক। কোন আলেমের ওপর মিথ্যা আরোপের ফল, পরিণাম অতীত ইতিহাসে খুবই ভয়াবহ। কুরআন -হাদিসে এর ওপর খুব ধমক এসেছে। ইহাতেও দেশ ও জাতির তথা আমাদেরই ক্ষতি।

স্মরণ থাকা চাই, ‘সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্টতম সুদ হলো মুসলমানের ইজ্জত নষ্ট করা। তাই, মামুনুল হক নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছেই নিহীত ও সীমাবদ্ধ থাকাই অধিকতর আইনসম্মত ও নিরাপদ। মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য ইহাই যথেষ্ট যে যা সে শুনে তাই সে প্রচার করে। অপরাধী ব্যক্তি অপরাধ করে যে গুণাহ করে তার চেয়ে অধিকতর গুণাহ হয় যে প্রচার করে বেড়ায়। হুজুর দেখলেই, হুজুরের কথা শুনলেই কিছু লোক আছে যাদের শরীর চুলকায়। হায়রে মরার খাঁওজানি। ভাবখানা এমন, হুজুর ছাড়া তারা সকলেই দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। মনে হয়, গুণাহ তারা বুঝেই না, গুণাহ করবে তো দূরের কথা। তাই এরুপ বিরুপ মানসিকতা পরিহার করা দরকার।

বরং আমরা যারা আলেম-উলামা ও প্রয়োজনীয় ধর্মীয় পড়ালেখা থেকে অনেক দূরে তারা তো কোন কথায় গুণাহ হচ্ছে, ঈমান (জীবনের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান) চলে যাচ্ছে চলে গেছে সেটাই তো জানি না, বুঝি না। হুজুররা অপরাধ করলেই স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হয়ে যায়, তাদের এ দেশে স্থান নেই কিংবা সকল হুজুরকে খারাপ মনে করা ইত্যাদি নেতিবাচক ধারণা করা, ও পোষণ করা কোন ভাবেই সমীচীন নয়। এরুপ অপরিণামদর্শী, অবিবেচনাপ্রসূত ও বিকৃতমস্তিষ্কের অধিকারী রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ অন্যান্যদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন একান্ত জরুরী। বরং এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সত্যের অনুসন্ধানী হওয়া চাই। একবার নিজেদের দিকে তাকাই, পরে চুলকাই। চুলকানির মজায় তো নিজেদের খোঁস- পাঁচড়া আরো বাড়াচ্ছি, নন্দিত হচ্ছেন তিনি যার সমালোচনা করছি। তিনি তো এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব মণ্ডলে চলে গেলেন, স্থান হয়ে গেল তার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের স্বাদের খাঁওজানিতে।

নামের মধ্যে পীর, ঈমাম, ঈমান, ইসলাম ইত্যাদি লকব লাগালেই শুদ্ধ হওয়া, পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। যাবে না হওয়া পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, ধর্মের ব্যাখ্যাকারক, বুদ্ধজীবী। তার জন্য যথার্থ জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয় থাকতে হবে, অনুশীলন ও পরিচর্যা থাকা চাই সেসবের জন্য। তা না করে অপরের অন্যায়- অপরাধ দেখে- খোঁজে, সেসবের সমালোচনা করেই নিজেদেরকে অধিকতর ভাল ও পরিশীলিত মনে করা, নিজেরা পূত-পবিত্র হয়ে গেছি চিন্তা করা বোকার রাজ্যে বাস করা ছাড়া কিছুই নয়। রাজনীতি বাদে ইসলাম ধর্ম পরিপূর্ণ থাকে না, ইসলাম ধর্ম ছাড়া রাজনীতিও পরিপূর্ণতা পায় না। একটি অপরটির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং ধর্মের কথা বললেই, ধর্মীয় রাজনীতির আলোচনা হলেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার কথা বলে ধর্মের অপব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই।পাশাপাশি ইহাও মনে রাখা চাই, ধর্মের রাজনীতি করা আর ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এক বিষয় নয়। আলেম -উলামা ধর্মের ধারক-বাহক।

তারাই ধর্মের রাজনীতি করবে, সেই পথ তারা দেখাবে। এটা তাদেরই অগ্রাধিকার, তাদেরই কাজ। বরং আলেম ও ধর্মীয় দলগুলো ছাড়া অন্য কোন দল ও সে দলের সমর্থক ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ব্যবসা ও অন্য কোন ফিকির করার বিষয়টা এড়িয়ে দেওয়া যায় না, সম্ভাবনার সুযোগটা তাদের কাছেই থেকে যায়। আবার কোন আলেমের অপরাধ হলেই তা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা হয়ে যায় না। সে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কোন চিকিৎসক, প্রকৌশলী,শিক্ষক, উকিল কিংবা অপরাপর পেশার লোক অন্যায়, দুর্নীতি করলে তখন তাদের আমরা দুর্নীতিবাজ, অন্যায়কারী বলি। তখন তো আমরা এরুপ বলি না তারা চিকিৎসা, ওকালতি, শিক্ষকতা ইত্যাদি নিয়ে ব্যবসা করছে। মোদ্দা কথা, যত দোষ নন্দ ঘোষ। হুজুরদের সহ্য করতে না পারা চুলকানির দল, কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলসহ সুবিধাবাদ- জিন্দাবাদের দলেরা ফায়দা হাসিলের জন্যই তাদের ধান্দাবাজির এই মুখস্থ মন্ত্র, বুলি আওড়ায়। আর ফেরি করে বেড়ায়, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার কথা, নবীকে ব্যাঙ্গ করার কথা ইত্যাদির মতো গর্হিত কাজ আলেমরা – হুজুরা করে। এসব নতুন কিছু নয়। এসব আমাদের দেশের কথিত দুষ্ট লোক,দল ও চক্রের দীর্ঘদিনের লালিত অপসংস্কৃতি। ধর্ম জ্ঞানের অভাব, ধর্ম থেকে বিচ্যুত ও আলেম বিদ্বেষীরাই এরুপ অবুঝের প্যাঁচাল পারে।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.