মহামারির মধ্যেও তিনগুণ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছে : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

২২

মোঃ ফরহাদ আহমেদ,ঢাকা উত্তর প্রতিনিধি,ধামরাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কৃষকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। যাতে তাঁরা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ- মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সর্ব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন।
প্রায় পৌনে ৮ মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ এর সময় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে স্বাস্থ্যমত বিধি মেনে চলায় তাঁর আহবান পুনর্ব্যাক্ত করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই কৃষকদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাঁদের কষ্ট লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্গাচাষীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।’

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তাঁর সরকার সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশের উপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যাবস্থা নিচ্ছি। সেই সাথে সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যাবস্থা আমরা নিয়েছি। বর্তমানে সেচ কাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

ন্যায্য মূল্যে যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য সরকার যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করেছে এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাবস্থা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি সাম্প্রতিক ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যাবহার করবেন, কতটুকু ব্যাবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যাবহার করবেন কীনা বা কতটুকু করবেন সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে তথ্য কেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

তাঁর সরকার গবেষণার ওপর সবসময় অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারী, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্য-শষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। এরফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমানে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম, ভুট্টা এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তা বাজারজাত করার ব্যাবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা করোনায় ধান কাটার সমস্যায় তাঁর দল এবং সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র তাঁর সরকার ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের কৃষিকে আমরা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, তাঁরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কর্তব্য মনে করে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করে এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল। সার চাইতে গিয়ে ১৮জন কৃষককে জীবন দিতে হলো- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমি কৃষক লীগকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই- করোনা ভাইরাসের কারণে আমি নিজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সকলের সাথে দেখাও আমার হলো না।
প্রধানমন্ত্রী করোনার সম্পর্কে পুনরায় সতর্ক করে বলেন, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.