প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।

৩১৭

কাজী মোঃ রাইসুল ইসলাম,কলাপাড়া উপজেলা প্রতিনিধিঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও দফায় দফায় পূর্নিমা,অমাবরস্যার প্রভাবে সৈকত শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ক্রমশই বিলীন হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ইতোমধ্য সমুদ্রগর্ভে ভেসে গেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শত শত গাছ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা পাবলিক টয়লেট,জাতীয়,উদ্যান, পর্যটন পার্ক সহ মসজিদ,মন্দির।

স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের রুদ্র-রোষে হারিয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দফায় দফায় বিধ্বস্ত হয়েছে সৈকত লাগোয়া জাতীয় উদ্যান। ভেসে গেছে অভ্যান্তরীণ ছোট ছোট স্থাপনা। জাতীয় উদ্যানের লেকের উপর সেতু,ঘাটলা,গোলঘর, শোভাবর্ধনের বাগান, বেঞ্চ, স্থায়ী ছাতা সবই সাগরে বিলিন হয়ে গেছে। এরইমধ্যে ফয়েজ মিয়ার ফার্মস এন্ড ফার্মস লিঃ- এর সারি সারি নারিকেল বাগান সাগরবক্ষে হারিয়ে গেছে। সাগরে আগেই গিলে ফেলেছে সরকারি ডাকবাংলো, এলজিইডির বায়োগ্যাস পস্নান্ট। তবে ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় কোন পদক্ষেপ না নেয়ায়, কুয়াকাটার স্থানীয় বাসিন্দা সহ বিনিয়োগকারীরা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তবে পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমুদ্রের তলদেশে জমা পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। আর বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাকৃতি ও পরিবেশ।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরের ঢেউ এর ঝাপটয় সৈকতের গাছ গোড়া থেকে বেরিয়ে এসেছে। কোনরকম দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু গাছ সৈকতের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। ঝরের সময় ঢেউয়ের আঘাতে বালুতে লুটিয়ে পড়ছে বড় বড় গাছ। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামুদ্রিক ঢেউ এর ঝাপটায় ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বনাঞ্চল। অমাবস্যা, পূর্ণিমা কিংবা প্রাকৃতিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কুয়াকাটার স্থায়ী বাসিন্দা ইসাহাক শেখ বলেন, সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় সৈকতের বালু ক্ষয় হয়ে বেশ কিছু গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত বালক ক্ষয় হলে সৈকতের সৌন্দর্য হারাবে। জরুরী ভিত্তিতে সৈকতের বালু ক্ষয় রোধে স্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে তিনি জানিয়েছেন।

টুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অফ কুয়াকাটা টোয়াক’র সভাপতি ইমতিয়াজ রহমান তুষার বলেন, সৈকতে একসময় সারি সারি নারিকেল বাগান ছিল। একসময় গাড়ি পার্কিং, পিকনিক স্পট, পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র ছিল এ বাগানটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাগানটি আজ শুধুই স্মৃতি।

মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটা খাজুরা গঙ্গামতি বিটের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডব ঠেকানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উদ্যোগে সৈকতে বালুভর্তি জিও টিউব ফালানো হয়। জিও টিউব থাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ এর তাণ্ডবে সৈকত কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হালিম সালেহী বলেন, সৈকতে পূর্ব শতর্কতা মূলক বালুভর্তি জিও টিউব ফেলানো রয়েছে। সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে স্থায়ী প্রটেকশনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প আকারে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.