নোয়াখালীতে তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

২৩

 

নোয়াখালীতে তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

মোঃ নুর আলম, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

একদিকে তরমুজের বাম্পার ফলন অন্যদিকে বাজার দাম ভালো পাওয়ায় খুশি নোয়াখালীর তরমুজ চাষীরা। কেউ ক্ষেত থেকেই তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন। উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা।

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কম হলেও ফলন নিয়ে সন্তুষ্ট কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে ৮৫ ভাগ তরমুজ কেটে বিক্রি হয়ে গেছে।

চাষীরা জানান, বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন তারা। এ বছর ক্ষেতে ফলনে বিপর্যয় নেই।

করোনা ভাইরাসের কারণে বাজার দাম বা পরিবহন নিয়ে কিছুটা চিন্তিত থাকলেও তার কোন প্রভাব পড়েনি তরমুজের বাজারে। ফলে সন্তুষ্ট তরমুজ চাষীরা।সূবর্ণচর এলাকায় তরমুজ চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, তরমুজের ফলন অনেক ভালো। তরমুজ বাজারে করোনার প্রভাব পড়েনি। আমরা মোটামুটি দাম ভালো পাচ্ছি।

সুবর্ণচর উপজেলার চরকাজী মোখলেস, চরবৈশাখী,চরবাটা এবং চর নোমান ও সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পূর্ব শূল্যকিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ শুধু তরমুজ। যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা যায় তরমুজের সমারোহ। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে রাস্তার উপর এনে ট্রাকে জড় করছে কৃষকেরা। সেখান থেকে পাইকাররা গুণে নিচ্ছেন এলাকার বাইরের বাজার এবং অন্যান্য জেলায় বিক্রি করার জন্য। কৃষকের চোখে-মুখে তাই চিকচিক করছে হাসি। খুশিতে তারা সারাদিন পরিশ্রম করেও কোনো ক্লান্তি অনুভব করছেন না।

শুধু কৃষক একাই নয়, তার পরিবার-পরিজন সকলেই খুশিতে আত্মহারা। কারণ গত দু’বছরের লোকসান পুষিয়ে এ বছর তারা তরমুজ বিক্রি করে ভালো লাভ করছেন।

তরমুজ চাষী মোঃ কামাল উদ্দিন জানান, এ বছর প্রায় দেড় হাজার শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন প্রায় পঁচিশ লাখ টাকার তরমুজ। আরও বিক্রি করতে পারবেন প্রায় ৬-৭ লাখ টাকার। খরচের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন বলে খুশিতে আত্মহারা তিনি।

অন্য তরমুজচাষি আবদুল কাদের এবং রবিউল হোসেন বলেন, তারা চাষী কামাল উদ্দিন থেকে কম পরিমাণ তরমুজ চাষ করলেও এ বছরের তরমুজ বিক্রি করে খরচের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি টাকা লাভ করেছেন। তবে তারা জানান, সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশার কারণে পাইকাররা পরিবহন খরচ বেশি দিচ্ছে বলে তাদেরকে এ অজুহাতে মূল্য কম দিচ্ছে। নয়তো তারা এরচে অধিক লাভবান হতেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশরেফুল হাসান চন্দন বলেন, সদর উপজেলায় এবার প্রায় পাঁচশ বিশ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে চাষিরা ২/৩ ধাপে তরমুজ বিক্রি করেছে। আরও ১৫/২০ দিন বৃষ্টি না হলে চাষিরা আরও ২/৩ ধাপে তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। ফলে গত দুইবার তরমুজ চাষে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবার তারা ক্ষতি পুষিয়ে লাভ করতে পারবেন। তবে গত দুইবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক চাষি এ বছর তরমুজের চাষ না করে বোরো ধান, সয়াবিন, বাদাম ইত্যাদি চাষে মনোনিবেশ করেছেন। ধান এবং এ সকল পণ্যের বাজার বেশি হওয়ায় তাদেরও লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন জানান, উপজেলায় প্রায় তেরোশ’ নব্বই থেকে চৌদ্দশ’ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন চাষিরা। হেক্টর প্রতি তাদের খরচ হয়েছে নব্বই থেকে এক লক্ষ টাকা। আর বিক্রি হচ্ছে দুইলক্ষ থেকে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি গড় লাভ প্রায় এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ২৫-৩০ মেট্রিক টন।

তরমুজের বাম্পার ফলন নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল হক জানান, জেলার মোট নয়টি উপজেলার ২৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর তরমুজের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২৮ থেকে ৩০ টন। সরকারের পক্ষ থেকে চাষিদের সার, বীজ সরবরাহ এবং মাঠপর্যায়ে কর্মীদের যথাযথ দায়িত্ব পালন, বৈরিমুক্ত আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর জেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকটাই জৈব সার প্রয়োগ করায় এবং তরমুজ ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না হওয়ায় এ বছরের তরমুজ সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি এ বছরের তরমুজ উৎপাদন এবং রপ্তানি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.