রাসেল আদিত্য,মুন্সীগন্জ থেকে ফিরে :
গত ২১শে সেপ্টেম্বর মুন্সীগন্জ সদরের মোক্তারপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ২২শে
সেপ্টেম্বর রাত দশটার সময় মৃত্যুবরণ করেন যুবদল কর্মী দাবী করা শাওন(২৭)।সেই ঘটনার আপডেট খবর সংগ্রহ করতে আজ ২৩শে সেপ্টেম্বর সরেজমিনে মুন্সীগন্জ গিয়ে প্রথমেই নিহত শাওনের বাসায় যান এই প্রতিবেদক।
সদর থানাধীন মিরকাদিম পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডভুক্ত মুরমা গ্রামের সোহরাব আলী ভূঁইয়ার
চার ছেলে ও এক মেয়ের ভেতর শাওন সবার বড়
সন্তান।অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা
শাওন ২০২১ সালে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সাদিয়া।তাঁদের শাহাদ ভূঁইয়া নামের আট মাস বয়সী একটি ছেলে আছে।এই প্রতিবেদক শাওনের
বাসায় গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই বিলাপ করে কেঁপে ওঠেন শাওনের মা লিপি বেগম।তিনি বলেন
দুপুরে গাড়ী চার্জে দিয়া বাসায় আইসা তাড়াতাড়ি ভাত বাড়তে বলে গোসল করতে যায়।তাড়াহুড়া কইরা খাওয়া শেষ কইরা বাইর হইয়া যায়।বিকালে
খবর পাই পুলিশে শাওনরে গুলি করছে।কাল রাইতে আমার কলিজার টুকরাটা মইরাই গেলো।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন,কি দোষ আছিল আমার পোলাডার?ক্যান হেরে গুলি কইরা মাইরা ফালাইল?আমার ছোট নাতিটা বাপ ডাকার আগেই এতিম হইয়া গেল।
শাওনের স্ত্রী সাদিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,
শাওনের উপর চাপ কিছুটা কমাতে তিনি বাবার বাড়ী ও শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিন করে থাকেন।
ঘটনার দিন সাদিয়া বাবার বাড়িতে ছিলেন।সকালে ফোনে শাওন তাঁকে বলেছিলো সন্ধ্যায় সে
আমাদের নিতে আসবে।আর এলো না শাওন।
সাদিয়া তাঁর স্বামী হত্যার বিচার দাবী করেন। সে
রাজনীতি করতো কিনা জানতে চাইলে পরিবারের
সদস্যরা ও এলাকার মানুষজন বলেন,শাওন কোন
দল করতোনা।তাঁর উপার্জনে নির্ভর পুরো পরিবার,
এজন্য সে যতো বেশি সময় সম্ভব অটোরিকশা চালাতো।শাওনের ছোট ভাই সোহান জানায়,বন্ধু বান্ধবদের সাথে মাঝে মধ্যে শাওন মিছিলে যেতো।
আওয়ামীলীগের মিছিলেও সে গিয়েছে আগে।
গ্রামের সবাই বলেন শাওনের মতো ভালো আর নিরীহ ছেলে গ্রামে আর নেই।এমন ভালো একটি ছেলে এতো অল্প বয়সে হত্যার শিকার হবে,এটা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।তাঁরা শাওন হত্যার বিচার দাবী করেন।
প্রতিবেদক বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শাওনের বাড়ি ত্যাগ করার সময় পর্যন্ত লাশ এসে পৌঁছায়নি।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় ঢাকায় অবস্থান করা প্রতিবেদকের এক সাংবাদিক বন্ধু তাঁকে জানান শাওনের জানাজা পড়ানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।এখানে জানাজা শেষে লাশ মুন্সীগন্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
এদিকে সংঘর্ষে আহত সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান জানান,ঐ ঘটনায় দুটো মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাঁর একটিতে পুলিশ আর অন্যটিতে মোক্তারপুরের এক শ্রমিকলীগ নেতা বাদী হয়েছেন।দুটি মামলাতেই ৩৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৩৬৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
তাঁদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।