তোহফায়ে রামাদান:(১০ম পর্ব)রোজায় করনীয় ও বর্জনীয়

১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: কোরআন হাদীসের রেফারেন্সের আলোকে রোযার করনীয় ও বর্জনীয় :

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর কল্যাণ ও প্রতিদান অপরিসীম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘বনি আদমের প্রত্যেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ বলেন, তবে রোজা ব্যতীত। কারণ, রোজা বান্দা আমার জন্যেই পালন করে, তাই আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো।’

রোজাকে বলা হয় তাকওয়ার সিঁড়ি। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য মানবমনে তাকওয়া বা খোদাভীতি সৃষ্টি করা।
একটি হাদিসে এসেছে, রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ, যতক্ষণ তা ফেঁড়ে ফেলা না হবে। জনৈক সাহাবি জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রোজা আবার কিভাবে করে ফেঁড়ে যায়? তিনি বললেন, মিথ্যা এবং গিবত দ্বারা। এসব হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, রোজা রেখে যাবতীয় পাপকর্ম বর্জন করলে, রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে। এই কারণে ওলামায়ে কেরাম বলেন, রোজাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করতে হলে ছয়টি কাজ করতে হবে। তা হলো:

১. চোখের হেফাজত :
চোখের দৃষ্টি পাপের প্রথম ধাপ। বলা চলে কুদৃষ্টি পাপের মূলপথ। হাদিসে নবীজী (সা.) এরশাদ করেন- “কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।” (কানজুল উম্মাল-১৩০৬৮) এ তীর সরাসরি অন্তরে আঘাত করে। ফলে অন্তরে তাকওয়ার প্রদীপ জ্বলে না।

২. জবানের হেফাজত :
জবানের হেফাজত সর্বাবস্থায় জরুরি। তবে রোজা অবস্থায় এর গুরুত্ব আরো বেশি। কেননা রাসূল (সা.) রোজাদারকে অশ্লীল বাক্যালাপ, গালি-গালাজ, মিথ্যা, গিবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কতক আলেমের মতে রোজা অবস্থায় মিথ্যা ও গিবত করার দ্বারা রোজা নষ্ট হয়ে যায়।

৩. কানের হেফাজত :
যে সমস্ত কথা মুখে উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তা শ্রবণ করাও নাজায়েজ। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, গিবত যে করে এবং যে শোনে উভয়ে সমান পাপী। সুতরাং রোজা অবস্থায় গান-বাজনা, গিবত-পরনিন্দা, ইত্যাদি শ্রবণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. সকল অঙ্গের হেফাজত :
আল্লাহর দেয়া প্রতিটি অঙ্গই মানুষের জন্যে অমূল্য নেয়ামত। তিনি মানুষকে তা দান করেছেন সঠিকপথে ব্যবহার করার জন্যে। যদি অঙ্গ দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করা হয়, তবে রোজ কেয়ামতে সে অঙ্গ ওই ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা হা-মীম সেজদা:২০)

৫. অতি ভোজন না করা :
কারণ, অতিভোজনের ফলে কামভাব ও পশু প্রবৃত্তি দমিত হয় না। অথচ রোজার উদ্দেশ্য পশু প্রবৃত্তি দমন করা।

৬. অন্তরে আল্লাহর ভয় ও আশা জাগ্রত রাখা :
যে কোনো ইবাদত আদায় করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার আশা রাখা এবং ভয় রাখা উচিত। রোজাদারের দিন কাটবে আল্লাহর আজাবের ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে। আর রাত কাটবে নামাজ, দোআ ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। তাহলে রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.