তেলবাজি-( পর্ব-৩) এখন- যেন তেলেই সফলতা, তেলেই সার্থকতা

৬৬

 

মোঃ রফিক ভূঁইয়া খোকা

বর্তমান নির্বাচনকালীন আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ে পাশ করা একজন জনপ্রতিনিধির নির্বাচনোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গেলাম। উক্ত অনুষ্ঠানের মাইকিং ও অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্য শুনলাম। তাদের আলোচনায় অনেক বিশেষণের একটি – নবনির্বাচিত অমুক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

অথচ আমার জানা মতে, সে কোন কালে কলেজের বারান্দা অবধি গিয়েছে কি না – এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিপরীতে যারা বক্তব্যে এভাবে কাণ্ডজ্ঞানহীন বিশেষণের লকব দিয়ে তেল মেরে কথার মালা গাঁথছে তাদের অনেকেই উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত, ওজন আছে তাদের সমাজে।

কিন্তু তারাও আজ তেলের কাছে ধরাশায়ী। তেল মেরে যদি কিছু পাওয়া যায় সেই মোহে বেহুশ তারা। বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতার মৃত্যুতে খোন্দকার মোশতাকের গগণবিদারী বিলাপ যে তেল মারার অতি প্রীতি তা নেতৃবৃন্দের বুঝতে বড্ড দেরি হয়েছিল বলেই জাতি আজও সে অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে বেড়াচ্ছে। একজন স্মনামধন্য সিনিয়র সাংবাদিক তাকেও দেখি একজন এমপির সামনে তার শরীরটাকে মনে হলো কমপক্ষে তিনবার বাঁকা করে। বিপরীতে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান যিনি সর্বজনখ্যাত ও বিশ্ব নেতা ছিলেন। তথাপি তাঁর সাথে একসঙ্গে হাস্যরসে থেকেও তাঁর ও তাঁর কাজের সমালোচনা করতে পিছপা হতেন না সেসময়ের অনেক খ্যাতিমান সাংবাদিক।

এই তেলের অপসংস্কৃতির দরুণ সেরুপ বড় মাপের নেতাও আমাদের ভাগ্যে আর জুটে না, তৈরি হয় না ঐ ধাঁচের প্রথিতযশা কলম সৈনিক। কেননা তেলের তালে তলিয়ে যাচ্ছে যোগ্য নেতা, যথার্থ নেতৃত্ব। আর হারিয়ে যাচ্ছে উচিৎ প্রকাশে সেই দুর্বার লেখনি।

আজকাল তো প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তেল মারতে, তেল পেতে রাজনৈতিক নেতাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কেক খাওয়াটাও ছাড়তে রাজি নয়। দেখা যায়, লেখক, কলামিস্ট, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সমাজপতি, ধার্মিক প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গও তেল মারায় সদা ব্যস্ত। এ যেন চাটুকারিতার বাজারে প্রতিযোগিতা চলছে- কে কত তেল লাগাতে পারে, কার তেল কতটা কার্যকরী হয়। পরিস্থিতিটা এখন- যেন তেলেই সফলতা, তেলেই সার্থকতা। জ্ঞান-গুণ, শিক্ষা-দীক্ষা, ত্যাগ আজ বেদনার প্রহর গুণছে, হচ্ছে ব্যর্থতায় পর্যবসিত।

50% LikesVS
50% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.