ডেস্ক রিপোর্টঃ টানা ১০ ম্যাচ পরাজয়ের পর অবশেষে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে তে ৩৩ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে সিরিজের ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এরআগে আজ রোববার দুপুর একটায় খেলা শুরু হয়।
শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নতুন বলে একপাশ থেকে গতির ঝড় তোলেন সফরকারী দলের ডানহাতি পেসার দুশমন্ত চামিরা, অন্যপাশে নিখুঁত লাইন-লেন্থের প্রদর্শনী করেন বাঁ-হাতি ইসুরু উদানা। নিজের প্রথম দুই ওভারের মধ্যে ১০টি ডেলিভারিতেই ১৪০+ প্রতি ঘণ্টা গতিতে বল করেন চামিরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে স্লিপে ধরা পড়েন লিটন। সাজঘরে ফেরেন শূন্য রানে। সবশেষ পাঁচ ইনিংসে লিটনের এটি তৃতীয় শূন্য। শুরুতেই লিটনকে হারানোর পর পাওয়ার প্লে’তে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। প্রথম ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে রান ওঠে ৪০। সাকিব আউট হওয়ার সময় দলীয় সংগ্রহ মাত্র ৪৩ রান। আর সাকিব ফিরে যান ৩৪ বলে ১৫ রান করে। শুরুর এই চাপটা ভালোভাবেই সামাল দেন তামিম ও মুশফিক। দুজন মিলে ৬৪ বলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। ইনিংসের ২০তম ওভারে প্রথম ছক্কা হাঁকান তামিম, পরের ওভারে স্লগ সুইপে সীমানাছাড়া করেন মুশফিকও। এক ওভার পর ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি তুলে নেন টাইগার অধিনায়ক।
এর পর তামিম ফিরে যান ৭০ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে। এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে মুখোমুখি প্রথম বলেই স্কুপ খেলার চেষ্টা করেন পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। যা তার ব্যাটে-বলে হয়নি, লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার। তামিমের মতো মিঠুনও নষ্ট করেন আরেকটি রিভিউ। বিপর্যয় কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ৪৩তম ওভারে দলীয় ২০০ রান পূরণ করে ফেলে টাইগাররা। ইনিংসের ৩১ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান পায় বাংলাদেশ। শেষদিকে আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস। বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ১৩ রানে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সফলতম বোলার পার্টটাইম স্পিনার ধনঞ্জয় ডি সিলভাই। তিনি ১০ ওভারে ৪৫ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। আর বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ২৫৭ রানে।
২৫৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের ১৮ ওভারে ২ উইকেটে ৮২ রান থেকে ২৭.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ১০২ রানের দলে পরিণত হয় তারা। অর্থাৎ ৯.৩ ওভারে মাত্র ২০ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা। যার মূল কৃতিত্ব ছিল অফস্পিনার মেহেদি মিরাজের।ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই ফিরতি ক্যাচে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা গুনাথিলাকাকে ফেরান মিরাজ।আউট হওয়ার আগে ১৯ বলে ২১ রানে করেন গুনাথিলাকা। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ১১ রান খরচায় এই একটি উইকেটই নেন মিরাজ। পরে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ৬ ওভারে ১৯ রান খরচায় নেন আরও ৩ উইকেট। মিরাজ দ্বিতীয় স্পেলে ফেরার আগে অবশ্য পাথুম নিসাঙ্কাকে ১৩ বলে ৪ রানে আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসানের শিকারে পরিণত হন কুশল মেন্ডিস (৩৬ বলে ২৪)। দুই ওভারে যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন হাসারাঙ্গা, তা চালিয়ে নেন ৪৪ ওভার পর্যন্ত।
প্রথমে দাসুন শানাকাকে নিয়ে ৬.৪ ওভারে গড়েন ৪৭ রানের জুটি। যেখানে শানাকার অবদান ২৫ বলে ১৪ রান। তাকে সোজা বোল্ড করে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এতে অবশ্য তেমন ফায়দা হয়নি। কেননা নয় নম্বরে নামা ইসুরু উদানাকে নিয়ে নতুন লড়াই শুরু করেন হাসারাঙ্গা। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হলেও দারুণ সঙ্গ দেন উদানা। একের পর এক চার-ছয়ের মারে মাত্র ৩১ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। তার ব্যাটেই জয়ের আশা জাগিয়ে তোলে শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের ৪১তম ওভারে আউট হতে পারতেন হাসারাঙ্গা। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন লিটন দাস। তবে ৪৪তম ওভারে আর ভুল করেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। সাইফউদ্দিনের বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে হাসারাঙ্গার বিদায়ঘণ্টা বাজান তিনি। আউট হওয়ার আগে ৬০ বলে ৭৪ রান করেন হাসারাঙ্গা। এরপর আর বেশি দেরি হয়নি বাংলাদেশের জয় পেতে। পরের ওভারের প্রথম বলেই ২১ রান করা উদানাকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ উইকেট জুটিতে লক্ষ্মণ সান্দাকান এবং দুস্মন্তে চামিরা কিছুটা অপেক্ষায় বাড়ায় বাংলাদেশের বিজয় উদযাপনে। শেষ পর্যন্ত ৪৯তম ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বলেই উইকেট দিয়ে দিলেন চামিরা। শেষ হয়ে গেলো লঙ্কানদের ইনিংস। ৩৩ রানে জিতে গেলো বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৫৭/৬ (তামিম ৫২, লিটন দাস ০, সাকিব ১৫, মুশফিক ৮৪, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, আফিফ ২৭, সাইফউদ্দিন ১৩; উদানা ১০-১-৬৪-০, ডি সিলভা ১০-০-৪৫-৩, সান্দাকান ১০-০-৫৫-১, গুনাথিলাকা ২-০-৫-১, চামিরা ৮-০-৩৯-১)।
শ্রীলঙ্কা : ৪৮.১ ওভারে ২২৪/১০ (গুনাথিলাকা ২১, পেরেরা ৩০, নিসানকা ৮, মেন্ডিস ২৪, ডি সিলভা ৯, বানদারা ৩, দাসুন ১৪, হাসারাঙ্গা ৭৪, উদানা ২১, চামিরা ৫, লাকশান ৮ ; মিরাজ ১০-০-৩০-৪, সাকিব ১০-০-৪৪-১, সাইফউদ্দিন ১০-০-৪৯-২, মুস্তাফিজ ৯-০-৩৪-৩, তাসকিন ৯-০-৬২-২)।
ফল : বাংলাদেশ ৩৩ রানে জয়ী।