জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়ে গেছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর শীতল যুদ্ধ

২৩

রাসেল আদিত্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে :

দেশে চলমান জেলা পরিষদ নির্বাচনে যে উনিশটি
জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হবেনা তন্মধ্যে নারায়ণগঞ্জ একটি।এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থী
হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ১৬ই জুনের বোমা হামলায় পঙ্গুত্ব বরণকারী ও আলহাজ্ব একেএম শামীম ওসমান এমপির ঘনিষ্ঠ বন্ধু চন্দনশীল।যিনি
ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
জাতীয় পার্টি থেকে একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বেশ
আগ্রহী ছিলেন নির্বাচনে অংশ নিতে। কিন্তু জাতীয়
পার্টি থেকে নির্বাচিত সদর আসনের সাংসদ আলহাজ্ব একেএম সেলিম ওসমান বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রতি
যে মনোভাব দেখিয়েছিলেন,(নৌকার বিজয়ী প্রার্থী
কাজিমউদ্দীনকে পরাজিত ঘোষণা করিয়ে লাঙল প্রার্থী দেলোয়ারকে বিজয়ী করে এনেছেন নেপথ্যে থেকে)জেলা পরিষদের নির্বাচনে এসে সেই নীতি
বদলে বললেন যেখানে নৌকার প্রার্থী থাকবে সেখানে লাঙ্গলের প্রার্থী থাকা যাবেনা।তারপর কেউ আর প্রার্থী হতে আগ্রহী না হওয়ায় চন্দনশীল
চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা ভোটে
নির্বাচিত হন।
চেয়ারম্যান পদে ভোট না হলেও সদস্য পদের জন্য
মনোনয়ন জমা দেন আওয়ামীলীগের অনেক স্থানীয় নেতা নেত্রী।সার্বিক বিশ্লেষনে দেখা যাচ্ছে আসন্ন এই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামীলীগের বহু পুরনো উত্তর বনাম দক্ষিণ মেরুর ঠান্ডা লড়াইয়ে রুপ নিয়েছে।যেহেতু স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই নির্বাচনের ভোটার,তাই সদস্য পদে জয় পরাজয় নির্ভর করবে ওয়ার্ডে কোন বলয়ের জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বেশি তার উপর।
উল্লেখ্য গতবার ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচন হলেও এবার তা কমিয়ে পুরো জেলাকে ৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে,চেয়ারম্যান পদে চন্দন শীলের পাশাপাশি সাধারণ ওয়ার্ড নং ৪ (আড়াইহাজার) ও ওয়ার্ড নং ৫ (রূপগঞ্জ) এর সদস্যরাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। কেননা তাদের কারো বিপরীতেই অন্য কোনো প্রার্থী নেই।এখন মূলতঃ তিনটি সাধারণ ওয়ার্ড ও দুটো সংরক্ষিত ওয়ার্ড কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচন।তারপরেও ভোট নিয়ে আলোচনা, নানা বিশ্লেষণ চলছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
চলুন সংক্ষেপে দেখে নিই কমিশনের বাছাই শেষে কোন ওয়ার্ডে কারা বৈধ প্রার্থী হিসেবে আছেন।আর কেমন পরিবেশ বিরাজমান এখন নারায়ণগঞ্জ
জেলার সরকারী দল আওয়ামীলীগের অন্দরে।

সাধারণ ওয়ার্ড নং ১ ও ৩ এ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেননা ওয়ার্ড দুটিতে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বেশ কয়েকজন সক্রিয় হিসেবে চিন্হিত মুখ।
নারায়ণগন্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত ১নং ওয়ার্ডে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন, মোঃ আলাউদ্দিন মিয়া,জাহাঙ্গীর আলম,সায়েম রেজা ও মুজিবুর রহমান।স্থানীয় বোদ্ধাগনের মতে এই ওয়ার্ডেই হতে চলেছে হয়তো সবচেয়ে প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ন ভোট।বলাই বাহুল্য মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ জাহাঙ্গীর আলম বনাম সাংসদ শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ মজিবুর রহমানের জন্যই সকলের দৃষ্টি নিবন্ধিত এই ওয়ার্ডের দিকে।

অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত ২নং সাধারণ ওয়ার্ডে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের প্রায় সকলেই ওসমান পরিবারের অনুসারী।তাঁরা হলেন,আমিরুল্লা রতন,রাসেল শিকদার,মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ মোবারক,মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন,মাসুম আহমেদ,মোঃ মুস্তাফা হোসেন চৌধুরী,মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রধান ও আরিফুল আলীনূর।
শেষ পর্যন্ত সাংসদ শামীম ওসমান এর সবুজ সংকেত কার ভাগ্যে জোটে তারপর ক’জন ভোটের
মাঠে থাকেন সেটাই দেখার বিষয়।কেউ কেউ বলছেন হয়তো শেষ পর্যন্ত এটা উন্মুক্ত করে দিতে
পারেন সাংসদ।তেমনটি হলে এই ওয়ার্ডেও জমে উঠবে ভোটের লড়াই।
আর সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে গঠিত ৩নং ওয়ার্ডে ঘোষিত বৈধ প্রার্থীরা হলেন,ফারুক হোসেন,মোস্তাফিজুর রহমান,শেখ এনামুল হক ও
আবু নাঈম ইকবাল।ওসমান পরিবারের অনুসারী প্রার্থী দুইজন। এরা হলেন ফারুক হোসেন ও আবু নাঈম ইকবাল।আবু নাঈম ইকবাল হচ্ছেন এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রার্থী।আইভী অনুসারী হিসাবে মাঠে আছেন মাহফুজুর রহমান কালামের ভাই ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম।
৪নং ওয়ার্ডে একমাত্র বৈধ প্রার্থী হলেন মিয়া মোঃ আলাউদ্দিন।
৫নং ওয়ার্ডের একমাত্র বৈধজন হলেন আনসার আলী।

এছাড়া সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন,সাদিয়া আফরিন, আছিয়া খানম সুমি ও নাছরিন আক্তার।মজার বিষয় হলো,এই তিনজনের একজন সাংসদ শামীম ওসমান অনুসারী,একজন সাংসদ সেলিম ওসমান এর ঘনিষ্ঠ,আর অন্যজন দক্ষিণ ব্লক পন্থি হিসেবে পরিচিত।

সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন,এড. নূর জাহান, কোহিনূর ইসলাম, হাওয়া বেগম, সীমা রানী পাল ও শাহিদা মোশাররফ। জেলার এটিই একমাত্র ওয়ার্ড যেখানে জয় পরাজয়ের নেপথ্যে দুই মেরু নয়,মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর ভূমিকাই মূখ্য হয়ে উঠবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৫ শে সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন,২৬ শে সেপ্টেম্বর প্রতিক বরাদ্দ ও আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.