লেখক: মো: রফিক ভূঁইয়া খোকা।
ভুলে গেলে সেসব কথা,
শৌর্য-বীর্য, ঐশ্বর্যভরা
ইতিহাস গাঁথা,
শিক্ষা -সংস্কৃতিতে পূর্ণ
সভ্যতা।
তৃষ্ণার্ত জাতিকে মিটাত
পিপাসা সদা,
স্বর্ণযুগ শাসনকাল আজও
ইতিহাসে লেখা।
সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়
ছিল একতা,
খোদাভিরুতার চরিত্রে
প্রকম্পিত ছিল শত্রুরা।
মোরা মুসলমান, ভুলে
আছি সেসব কথা।
অর্ধ জাহান করেছে শাসন,
খেজুর পাতার ছিল আসন।
ছদ্মবেশে নিত প্রজার খোঁজখবর।
জবাবদিহিতায় ভীতসন্ত্রস্ত
ছিল শাসক
ফুরাত নদীর তীরে ভুখায়
মরলে কুকুর শাবক।
ন্যায়বিচারে ছিল অটল,
মদ্য পানের অপরাধে ছাড়
পেল না পুত্রধন।
সাম্য প্রতিষ্ঠায় ছিল
অবিচল,
উটের লাগাম ধরে নিজ
গোলামকে দিল আসন।
মোরা মুসলমান,
ভুলে আছি সেসব কথা!
যুদ্ধের ভয়াভহ-বিভীষিকায়,
এক ফোঁটা পানির তরে
আর্ত চিৎকারে আকাশ-
পাতাল কাঁপে,
পিপাসায় নিশ্চিত মৃত্যুর
কথা জানে,
তবুও অন্যের তৃষ্ণা
নিবারণে,
সহাস্যে বলত পরে,
তারে দাও পানি আগে।
দিবস কাটত যাঁদের জ্ঞান
বিলিয়ে,
রজনি কাটত রোদনে।
দ্বীনের চিন্তা তাঁদের সদা
ছিল মনে-
‘মুসলমানরা আছে ভরসা
করে,
কী করে ঘুমাই মিষ্টি ঘুম
তবে।’
ছাত্রের বোঝা মাথায় নিয়ে
কুলি সেজে হেঁটেছে
মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে,
রাতে মজুরি খেটেছে
মজুর সেজে।
কুঁড়ানো তরমুজের খোসা
এনেছে ঘরে,
ঘরের ডাল দিয়েছে
ছাত্রদের পাতে,
এভাবে গড়েছে মাদ্রাসা
দেওবন্দ তবে।
মোরা মুসলমান, ভুলে
আছি সেসব কথা কবে!
দ্বীনের জন্য জান-মাল
করেছে কোরবান,
পরিবার-পরিজনের জন্য
রেখেছে আল্লাহ -রাসূল প্রধান।
নিজে ভুখা থেকে আপ্যায়ন করেছে
মেহমান,
বিনা বেতনে দীর্ঘকাল
করেছে শিক্ষাদান।
অনাহারে, অর্ধাহারে
কেটেছে দিনকাল,
খেজুরের বিচি,শুকনো
রুটিতে পেয়েছে স্বাদ।
পা মাড়িয়ে চলেছে দীর্ঘ
পথ-ঘাট
তবু ছাড়েনি মাদ্রাসা,
ছাড়েনি যুদ্ধের ময়দান।
ভুলে আছি সেসব কথা,
মোরা মুসলমান!
অর্থ-নারী, পদমর্যাদা
পারেনি তাদের করতে
অবসান।
রাজার দরবারে ছাড়েনি
সুন্নাত পালন,
যুদ্ধের ময়দানে রেখেছে
ইসলামের পতাকা
উড্ডয়ন;
ক্ষণিকের তরেও ছাড়েনি
আহাদ, ভুলেনি মোহাম্মদ।
তরবারিতে নয়, আখলাকে
হয়েছে ইসলামের জয়,
এবাদতখানা করেছে
নাপাক তবু সয়;
তায়েফবাসীদের ক্ষমা বড়
বিস্ময়!
মক্কা বিজয় মোদের হয়।
রোম, পারস্য ইসলামের
পতাকা তলে পায় বিজয়,
মোরা মুসলমান, ভুলে আছি সেসব ইতিহাসে রয়।