একজন প্রবাসী’র কথা

৭৬

মাহমুদুর রহমান :

কথায় আছে, “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা বড় কঠিন”। তাই স্বাধীনতা অর্জন করে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা সন্মান পেয়েছেন তেমনি স্বাধীনতা রক্ষার দ্বায়িত্ব নিয়ে প্রবাসীরা রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসাবে সন্মান পাক এটাই প্রতিটি প্রবাসীর আত্বকথা। প্রবাসীরা যেখানে পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য নিজের স্বার্থ বিসর্জন দেয়, সেখানে দেশের মানুষের এই দূর্ভোগ-দূর্দশা কখনোই মেনে নিতে পারবে না।
দেশের এই এহেন পরিস্থিতি, সারা বিশ্বের ন্যায় সরকার ঘোষিত ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্রবাসীরাই রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা।
আর তাই নিম্মোক্ত বিষয়গুলোর উপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ও বাস্তবায়ন অতিব আবশ্যক।
১। প্রবাসী ও প্রবাসে আসতে ইচ্ছুক সকলের পাসপোর্ট/আইডি কার্ড (নতুন/নবায়ন/সংশোধন) এ বিদ্যমান জটিলতা দূর করে দ্রুতসময়ের মধ্যে সম্পাদন নিশ্চিত করা। প্রবাসীদের পাসপোর্ট সাধারন ক্যাটাগরি থেকে উঠিয়ে এনে ভি আই পি’র পাশাপাশি পাসপোর্ট কালার (রঙ) নির্ধারন করা।
২। প্রত্যেক প্রবাসীর “প্রবাসী কল্যাণ কার্ড” এর আদলে জীবনবীমা নিশ্চিত করত: বীমা প্রদান করা।
৩। প্রবাসীদের ভাষাগত শিক্ষার পাশাপাশি স্ব স্ব কাজে কর্মদক্ষতা অর্জনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পাশাপাশি “বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন” এর গুরুত্বপূর্ন সেল- ট্রেনিং প্রোগ্রাম সেল’কে সরকারী অনুমোদন সাপেক্ষে কাজে লাগিয়ে প্রকৃত জনসম্পদ রপ্তানি নিশ্চিত করা।
৪। প্রবাসে আসতে আগ্রহীদের ভিসা প্রোসেসিং/স্টাম্পিং/এয়ার টিকিট সংশ্লিষ্ট দূর্নীতির বিরোদ্ধে সরকারকে জিরু টলারেন্স নিশ্চিত করে মুষ্ঠিমেয় কালো ব্যাক্তিকে জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষা করা। দু:জনক হলেও সত্য যা সম্পন্ন করতে আমাদের দেশে লেগে যায় প্রায় ৫ লাখ টাকা, সেখানে নেপালের মত রাস্ট্রে সেটা হয় মাত্র ২০/৩০ হাজার রুপিতে (ভিসা ফী বাদে)।
৫। উচ্চশিক্ষার্থে গমন ইচ্ছুক শিক্ষার্থেদের যাবতীয় প্রোসেসিং সহজতর ও সাশ্রয়ী করে উচ্চডিগ্রি অর্জনে ও প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে অধিক রেমিটেন্স প্রবাহের দ্বার উম্মোচন করা।
৬। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের সকল প্রকার আইনি সহায়তা প্রদানে সরকার নিযুক্ত দূতাবাসের কার্যক্রম তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি “বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন” এর অন্যতম সেল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেল’র অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রতিনিধিদের সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ কাজে লাগানো।
৭। প্রবাসীদের রেমিটেন্স উপর প্রনোদনা ২.৫ % থেকে বৃদ্ধি করে ৪% করা, যার ৩% পাবে সরাসরি প্রেরিত রেমিটিন্সের সাথে ক্যাশব্যাক আর ১% প্রবাসীদের জীবনবীমা’র ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
৮। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের নিরাপত্তা নিশিত করা।কোনো কারনে ব্যাংক ডিফল্ট হলে ১০০% ক্ষতিপূরণ প্রদানে আইন করা।
৯। প্রবাসীরা প্রায়ই দেশের নিয়মিত নাগরিকের সাথে জমি-জমা,ব্যবসা-বানিজ্য ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্যের শিকাড় হয়ে থাকে।এই সকল বিষয়ে ন্যায্য বিচার পেতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা।
১০। প্রবাসী কল্যাণ কার্ডধারী সকল প্রবাসীর পরিবারকে স্কুল/কলেজ/স্বাস্থ্য/চাকুরী ক্ষেত্রে (কৌটা ভিত্তিক) সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা।
১১। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে যুগোপযোগী করত: প্রবাসী কল্যাণ কার্ডধারী সকল প্রবাসীদের প্রবাসকালীন মেয়াদ অনুযায়ী (১০/১৫/২০ বছর) সহজলভ্য ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা।
১২। প্রবাসীদের মৃতদেহ (কেউ প্রবাসে মারা গেলে) হস্তান্তর প্রকৃয়া সহজ করত: তার যাবতীয় হিসাবাদি সম্পন্ন করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তরাধকারীর কাছে হস্তান্তর করা, এবং এই সময়ের মধ্যেই মৃতব্যাক্তির জীবনবীমা’র ক্ষতিপূরণ হস্তান্তর নিশ্চিত করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর সরকারের সঠিক পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নে হস্তক্ষেপ নি:সন্দেহে একজন প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসাবে গর্বিত হওয়ার পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে আত্নমনযোগ বাড়াবে যা দেশের রিজার্ভ স্ফুলানে সহায়ক হবে আর দেশ মুক্তি পাবে ডলার সংকটের হাত থেকে, মুক্তি পাবে দেশের আপামর জনসাধারন।

100% LikesVS
0% Dislikes
Leave A Reply

Your email address will not be published.